পাসপোর্ট পেতে আধারই যথেষ্ট, দরকার নেই পুলিশ ভেরিফিকেশন?
পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুঃস্বপ্নময় পর্ব হল পুলিশ ভেরিফিকেশন। ইচ্ছে করে পুলিশ হেনস্থা করে, ঘুষ চায়, এমনকী ঘুষ দিয়েও কাজ হয় না, ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে গুচ্ছগুচ্ছ। পুলিশের চরিত্র সংশোধন দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ বুঝে এ বার নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকারই। নতুন পাসপোর্ট পেতে যাতে সাধারণ মানুষের হয়রানি কমে, সেই জন্য বিদেশ মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে যাতে পাসপোর্টের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার না হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে বিদেশ মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, আইন মন্ত্রক ও ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) অফিসাররা সম্প্রতি একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। সেখানে ঠিক হয়, যদি কারও আধার কার্ড থাকে, তা হলে তাকে আর পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য মাথা খুঁড়তে হবে না। আধার কার্ডের ফটোকপি সঙ্গে দিলে কাজ হয়ে যাবে।
কিন্তু আধার কার্ড কেন? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি, কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে বা ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে আধার কার্ড দেওয়া হয় না। তা হলে ধরেই নেওয়া যায় যে, আধার কার্ড যাকে দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। আর তাই আধার কার্ড নতুন পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র মাপকাঠি বলে বিবেচিত হবে।
পাসপোর্টের আবেদন করার সময় যথারীতি লিখিতভাবে জানাতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই বা আদালতে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়নি। এই আবেদন পাসপোর্ট অফিসে জমা পড়লে তা পাঠানো হবে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি-তে। প্রসঙ্গত, এনসিআরবি সারা দেশে অপরাধ ও অপরাধীদের খতিয়ানের হিসাব রাখে। এদের আলাদা তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। এনসিআরবি সহজে রেকর্ড ঘেঁটে বলে দিতে পারবে যে, সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনও থানায় ফৌজদারি মামলা আছে কি না বা সে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে কি না।
নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে যে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে, সেটা কেউ পাসপোর্ট পেয়ে গেলে তার পর। তাতে যদি প্রমাণ হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, তা হলে তাঁর পাসপোর্ট 'ব্লক' করে দেওয়া হবে।
কবে থেকে চালু হবে নতুন নিয়ম? কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে মাস তিনেক পর থেকে কার্যকর হতে পারে নয়া নিয়মাবলী।
কিন্তু গোলমাল বাধতে পারে অন্য জায়গায়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে বলেছিল, সরকারি পরিষেবা পাওয়া একজন ভারতীয় নাগরিকের অধিকার। কারও আধার কার্ড নেই, এই যুক্তিতে সরকার কাউকে পরিষেবা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। অর্থাৎ, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে যদি এমন সিদ্ধান্ত সরকার চালু করে, তা হলে আদালতে গেলে মোকদ্দমায় ফেঁসে যেতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।