মোদীর প্রশংসা কুড়িয়েও মর্মাহত, অনশনে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ
কৃষি বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তাঁকে রীতিমতো হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল কয়েকজন বিরোধী সাংসদের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও এনেছিল বিরোধীরা। আর আজ সকালে সেই সাংসদদের জন্যই চা নিয়ে যান রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং। আর তাঁর এই ভূমিকার প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিরোধীদের আচরণে মর্মাহত
এদিকে হরিবংশ নারায়ণ সিং বিরোধীদের আচরণে মর্মাহত হয়েছেন জানিয়ে রাজ্যসভার অধ্যক্ষ তথা দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইড়ুকে চিঠি লিখেছেন। পাশাপাশি বিরোধীদের আচরণের প্রেক্ষিতে তিনি নিজেও অনশনে বসতে চলেছেন বলে জানান রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ। এদিকে আজ সকালেই গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভরত সাংসদদের জন্য চা নিয়ে যান হরিবংশ নারায়ণ সিং।
উপ-রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে কী রয়েছে?
চিঠিতে তিনি লেখেন, ২০ সেপ্টেম্বরে রাজ্যসভায় যা হয়েছিল তার জন্য গত দু'দিন ধরে আমি বেদনা এবং মানসিক যন্ত্রণায় আছি। রাতে ঘুমোতে পারছি না৷ গণতন্ত্রের নামে বিরোধী দলের মাননীয় সদস্যরা হিংস্র আচরণ করেছিলেন। রুলবুক ছিঁড়ে আমার দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন সাংসদ টেবিলে দাঁড়িয়ে আমার বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। আমি এটা বারবার ভাবছিলাম আর সে কারণে কিছুতেই ঘুমোতে পারছিলাম না৷
কী বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী?
এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী টুইটারে লেখেন, 'যাঁরা তাঁকে কয়েকদিন আগে হেনস্থা ও আক্রমণ করল ও যাঁরা ধরনায় বসেছে তাঁদের জন্য চা নিয়ে গিয়ে বড় হৃদয়ের প্রমাণ দিলেন হরিবংশজি। এটা তাঁর মহত্বকে তুলে ধরে। আমি দেশবাসীকে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে বলব।' তিনি টুইটারে আরও লেখেন, 'শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিহারের মহান মাটি আমাদের গণতন্ত্রের মূল্য শিখিয়েছে। আর হরিবংশজির মতো রাজনীতিবিদ আজ যা করলেন তা প্রত্যেক গণতন্ত্রপ্রেমীকে গর্বিত করে।'
কৃষি বিল নিয়ে বিক্ষোভ
কৃষি বিল নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় সোমবারই আট সাসংদকে সাসপেন্ড করেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু। আর এরপরই গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসেন তাঁরা৷ সেখানে যোগ দেন অধীর চৌধুরী, দিগ্বিজয় সিং, সুপ্রিয়া সুলে, হিবি ইডেন সহ অন্য কয়েকজনও। সারারাত ধরে এই ধর্না চলে৷ কার্যত একজোট হতে দেখা যায় বিরোধী দলগুলিকে। আজ সকালে কংগ্রেস সাংসদ বিপুন ভোরা জানিয়ে দেন, তাঁদের এই ধর্না চলবে।
সংসদকক্ষ ছাড়তে চাননি আট সাংসদ
সোমবার সাসপেন্ড হওয়ার পর প্রথমে সংসদকক্ষ ছাড়তে চাননি আট সাংসদ। বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। পরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসে জড়ো হন। সেখানেই ধর্নায় বসেন। রাতভর সেখানে অবস্থানে বসবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ধীরে ধীরে খাবার, বালিশ, বিছানার ব্যবস্থা করা হয়৷ ব্যবস্থা করা হয় দু'টি পাখার। আসে ইডলি, চা, সোডার বোতল। সারারাত ধরে চলে গান৷ দেখতে দেখতে সংসদ চত্বর শাসক বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চে পরিণত হয়৷
সাংসদদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
সাংসদদের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সেই দিকটা নিশ্চিত করা হয়েছিল৷ একজন সাংসদ বলেন , 'কোনও কারণে যদি জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয় তার জন্য অনেকে এসে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকদের ফোন নম্বর দিয়ে গিয়েছিল৷' এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কখন শেষ হবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে আপ নেতা সঞ্জয় সিং বলেন, তাদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করার উপর তা নির্ভর করছে। আর আজ সকালে বিক্ষোভরত সাংসদদের জন্য চা নিয়ে আসেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান।
রাজ্যসভায় সরব হয় বিরোধীরা
প্রসঙ্গত, রবিবার কৃষি বিলের বিরোধিতায় রাজ্যসভায় সরব হয় বিরোধীরা৷ ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং-এর উপস্থিতিতে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন সাংসদ। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন, আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং, কংগ্রেস সাংসদ রিপুন বোরা ডেপুটি চেয়ারম্যানের মাইক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকী ডেরেক ও'ব্রায়েনের বিরুদ্ধে রাজ্যসভার রুলবুক ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। এর জেরে গতকাল মোট আট সাংসদকে সাতদিনের জন্য সাসপেন্ড করেন চেয়ারম্যান৷
রাজ্যসভায় তুলকালাম, টেবিলে চড়ে, মাইক ভেঙে আপ সাংসদ বললেন 'সবটাই গণতন্ত্রের জন্য'