সূর্যনেলি ধর্ষণ মামলায় মুখ্য অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
কেরলের ইদুক্কি জেলার সূর্যনেলিতে স্কুলের হস্টেলে থাকত মেয়েটি। ভালোবাসা হয় স্থানীয় বাস কন্ডাক্টর রাজুর সঙ্গে। রাজুই ১৯৯৬ সালের ১৬ জানুয়ারি তাঁকে অপহরণ করে। তখন মেয়েটির বয়স ছিল ১৬ বছর। টাকার বিনিয়মে সে মেয়েটিকে পাঠিয়ে দেয় আইনজীবী ধর্মরাজনের জিম্মায়। এই ধর্মরাজনই তাঁকে নিয়ে কেরল ও তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় ৪০ দিন ধরে ঘুরে বেড়ায়। ধর্মরাজন টাকায় বিনিময়ে শরীর বিক্রি করতে বলে মেয়েটিকে। কিন্তু সেই কথা না শোনায় অন্তত ৩৬ জন ৬০ দিন ধরে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় উদ্ধার পেয়ে মেয়েটি পুলিশে অভিযোগ জানায়। প্রসঙ্গত, এখন সেই ছোট্ট মেয়েটি ৩৪ বছরের তরুণী।
এই ঘটনায় নাম জড়ায় রাজ্য সরকারের কেরানি, অধ্যাপক, আইনজীবী, ডাক্তার, আমলাদের। এমনকী পুলিশি তদন্তে নাম উঠে এসেছিল পি জে কুরিয়েনেরও। প্রসঙ্গত, কংগ্রেস সাংসদ পি জে কুরিয়েন এখন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান। যে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ, তার মধ্যে পাঁচজন মারা যায় দীর্ঘ বিচারপর্ব চলার সময়। ৭ জন বেকসুর খালাস পায়। ২০০৫ সালে কেরল হাইকোর্ট ৩৫ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছিল। এ নিয়ে সারা দেশে সমালোচনা শুরু হয়। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল মামলা করে ধর্ষিতা মেয়েটি। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল, দীর্ঘ ৮ বছর সেই মামলা পড়েছিল শীর্ষ আদালতে। শেষ পর্যন্ত গত বছরের শেষে সুপ্রিম কোর্ট কেরল হাই কোর্টকে নির্দেশ দেয় মামলাটি ফের নতুন করে শুরু করতে। তারই ফলশ্রুতি ধর্মরাজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
বিচারপতি কে টি শঙ্করণ এবং বিচারপতি এম এল জোসেফ ফ্রান্সিস বলেছেন, "ধর্ষণের ফলে মেয়েটির শরীর ও মন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা খুনেরই সমান। ফলে কোনও দয়ামায়া দেখানো হবে না দোষীদের।"
কেমন লাগছে আদালতের এই রায় শুনে? ১৮ বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, "ভালো লাগছে। হালকা লাগছে। সেই ঘটনার পর থেকেই আমি বাড়ির বাইরে বেরোই না। কোথায় আবার কে কী করবে, ঠিক আছে! যখন বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ির ফিরে এসেছিলাম, তখন পাড়ার লোক চড়াও হয়েছিল বাড়িতে। বলেছিল, পাড়ায় থাকা চলবে না। আমার যে এতে কোনও দোষ নেই, তা বুঝতে চায়নি। তাই আমাদের পাড়া ছাড়তে হয়েছিল। বাবা-মা ছাড়া আর কাউকে পাশে পাইনি।"
মেয়েটির বাবা-মা বলেন, "এতগুলো বছর আমাদের ওপর দিয়ে কী ঝড়ঝাপটা গিয়েছে, সেটা আমরাই জানি। তবে অপেক্ষার শেষে ওদের সাজা হওয়া দেখতে পাচ্ছি, এটাই বড় কথা।"