মহারাষ্ট্র সরকার গঠনের সুপ্রিম শুনানি : দ্বিতীয় দিন আদালত কক্ষে যা যা হল
সোমবার ছিল মহারাষ্ট্র সরকার গঠন নিয়ে করা বিরোধীদের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম শুনানির দ্বিতীয় দিন।
সোমবার ছিল মহারাষ্ট্র সরকার গঠন নিয়ে করা বিরোধীদের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম শুনানির দ্বিতীয় দিন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত সবাই জানত যে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস, এনসিপির সমর্থনে সরকার গঠন করতে চলেছে শিবসেনা। তবে শনিবার সকালে সব কিছু ওলটপালট করে দিয়ে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। বিজেপির এই সরকার গঠনকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে শনিবার সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিরোধী দলগুলি। পাশাপাশি রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা।
আজ সাড়ে দশটায় শুরু হয় শুনানি
সোমবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে শুরু হয় মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়। এবং প্রথমেই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শীর্ষ আদালতে জমা দেন সরকারের থেকে চাওয়া নথিগুলি। এরপর শুরু হয় সওয়াল জবাব পর্ব।
রাজ্যপালের সচিবের হয়ে হাজির হন তুষার মেহতা
প্রথমেই সলিসিটর জেনারেল জানিয়ে দেন যে তিনি মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের সচিবের হয়ে হাজির হয়েছেন। কারণ ভারতীয় সংবিধানের ৩৬১ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনও আদালতেই রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। এরপর তুষার মেহতা জানান, ইস্যু হওয়া নোটিশের সবিস্তারিত জবাব দিতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে।
রাজ্যপালের পদক্ষেপের পক্ষে সওয়াল
মেহতা বলেন, "এই পর্যন্ত কোনও দলই সরকার গঠনের দাবি জানায়নি। সেখানে অজিত পাওয়ার ২২ নভেম্বরে স্বক্ষরিত ৫৪ জন এনসিপি বিধআয়কের সমর্থনের চিঠি রাজ্যপালকে দেন। সেই ক্ষেত্রে রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কোনও কারণ আমি দেখছি না।" পাশাপাশি মেহতা দাবি করেন, "২২ নভেম্বরেই রাষ্ট্রপতিকে ৩৫৬ ধারা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে চিঠি লিখেছিলেন। এরপর ২৩ নভেম্বর ভোরবেলা রাষ্টরপতি শাসন উঠে গেলে রাজ্যপাল দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান।"
'পাওয়ার পরিবারের দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানা নেই'
এরপর দেবেন্দ্র ফড়নবিশের হয়ে সওয়ালকারী আইজীবী মুকুল রোহতাগি আদালতকে ফড়নবিশের হয়ে বলেন, "আমার প্রাক্ নির্বাচনী জোট সঙ্গী আমার শত্রু হয়ে গিয়েছে। আমি এরপর রাজ্যপালের কাছে ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থনের চিঠি নিয়ে রাজ্যপালের কাছে যাই। এরপর যা হচ্ছে তা পাওয়ার পরিবারের ভিতরকার বিষয়। আমার সঙ্গে একজন পাওয়ার রয়েছেন। অন্যজন বিরোধী পক্ষে। কেউই এটা দাবি করতে পারবে না যে এই সমর্থন পত্রটি জাল। এই মুহূর্তে শরদ পাওয়ার ঘোরা কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।"
'আস্থাভোট সংক্রান্ত রায় দেওয়ার এক্তিয়ার নেই আদালতের'
রোহতাগি আরও দাবি করেন যে রাজ্যপাল যা করেন তা আইন মেনে করেন। এরপরেই আদালতের তরফে বলা হয়, আজকের এই শুনানির মুখ্য বিষয় মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যা রয়েছে কি না! এর প্রেক্ষিতে রোহতাগি বলেন, "আগে শীর্ষ আদালতকে এটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে রাজ্যপালের পদক্ষেপে কোনও অনিয়ম ছিল কী না। যদি রাজ্যপালের পদক্ষেপ আইন মেনেই হয়ে থাকে তাহলে তো আদালতের আস্থাভোট সংক্রান্ত রায় দেওয়ার এক্তিয়ার নেই।"
অজিত পাওয়ারের হয়ে আদালতে হাজির হন মনবিন্দর সিং
এই সবের মাঝেই আদালতে শুরু হয় নতুন নাটক। রবিবার মামলার প্রথম দিনে এনিসিপির হয়ে হাজির ছিলেন অভিষেক মনু সিংভি। তবে আজ অজিত পাওয়ারের হয়ে আদালতে মনবিন্দর সিং হাজির হয়ে বলেন তিনি এনসিপির হয়ে লড়ছেন। এরপর অজিতের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমি এনসিপি। আমার দেওয়া সমর্থন পত্রের অস্বীকার করার উপায় নেই। যেদিন আমি এই চিঠিটি দিয়েছিলাম সেদিন আমার কাছে সমর্থন দেওয়ার অনুমতি ছিল" আজ আদালতে মনিন্দর সিং আরও দাবি করেন, অজিত পাওয়ারের জমা করা সমর্থনের চিঠিতে কোনও গলদ নেই। অজিতের ক্ষমতা থাকায় তিনি সেই চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যপালকে। পাশাপাশি মনিন্দর বলেন, "আমার মক্কেল অজিত জানিয়েছেন যে দলের অন্দরে ঝামেলাকে তিনি মিটিয়ে দেবেন।"
|
শুনানি শেষ করার আবেদন মনবিন্দরের
পাশাপাশি মনিন্দর সিং আজ আদালতে দাবি করেন যে এই আবেদন সংক্রান্ত শুনানি এবার শেষ করা উচিত। তাঁর যুক্তি আবেদনকারীদের প্রথমে এই বিষয়ে তাদের প্রথমে এই বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো উচিত ছিল। কিন্তু তারা তা না করে সরাসরি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। এই মামলাটিকে শীর্ষ আদালতের আর সময় দেওয়া উচিত না। এরপর রোহতাগিও একই সুরে বলেন, "আস্থাভোট নিয়ে আদালত কোনও অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিতে পারে না। সেরকম হলে এই মামলাটিকে কোনও সাংবিধানিক বেঞ্চে হস্তান্তর করা হোক।"
|
পাল্টা যুক্তি বিরোধী পক্ষের আইনজীবীদের
তবে সরকার পক্ষের যুক্তির পাল্টা শিবসেনা ও কংগ্রেস-এনসিপি জোটের তরফের আইনজীবী কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিংভির প্রশ্ন করেন, "কোন যুক্তিতে সাতসকালে তড়িঘড়ি সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানালেন রাজ্যপাল? কী এমন তাড়া ছিল তাঁর?" সিব্বলের প্রশ্ন, কী এমন জাতীয় বিপর্যয় ঘটেছিল, যাতে শনিবার ভোর ৫টা ৪৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিতে হয়েছিল? কেন সব কিছুই শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা ৪৭ মিনিটের মধ্যেই ঘটল? রাজ্যপাল কি ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারতেন না?
|
আগামীকাল রায়দান
দুই আইনজীবী আদালতের কাছে আজকেই আস্থাভোটের দাবি করেন। তাঁদের আরও দাবি, নির্বাচন পরবর্তী জোটের পর তিন দলের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। এরপরেই বিচারপতিরা আজকের মতো শুনানি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানান। আগামীকাল এই নিয়ে রায় দেবে বলে জানিয়ে দেন বিচারপতিরা।