করোনা আবহে চিনকে বাণিজ্যযুদ্ধে হারাতে আরও অনেক সংস্কার প্রয়োজন ভারতের, মত IMF-এর
দিনটা ছিল, ২৪ জানুয়ারি ২০২০। মাত্র তিন দিন আগেই আমেরিকায় প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিস মেলে। এরপর টুইট করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশংসা করেন চিনের। বলেন, চিন করোনা আটকে রাখতে খুব ভালো কাজ করছে। সেই টুইটের পর কেটে গিয়েছে ৬ মাস। এরই মধ্যে আমেরিকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪ মিলিয়ন পেরিয়েছে। মারা গিয়েছেন ১ লক্ষ ৪৪ হাজার জন। আর সেই সঙ্গ এককালীন বন্ধু চিনও হয়ে উঠেছে আমেরিকার চরম শত্রু।
করোনা নিয়ে চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ
বাণিজ্য থেকে শুরু করে ৫জি নেটওয়ার্ক, সীমান্ত বিতর্ক ও করোনা নিয়ে চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আগে থেকেই খারাপ ছিল৷ আর এরই মাঝে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বেজিংকে হিউস্টনে চিনের দূতাবাস বন্ধ করার নির্দেশ দিল আমেরিকা৷ এদিকে আমেরিকার এই নির্দেশের পরেই চিন খেপেছে ওয়াশিংটনের উপর। তাদের বক্তব্য, আমেরিকা অযথা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলছে। পাশাপাশি চিন আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছে।
মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে চিন
এদিকে আমেরিকার পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে চিনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে দূতাবাস বন্ধের এই একে অপরের বিরুদ্ধে নির্দেশের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের মত, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতিসম্পন্ন দেশের মধ্যে যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে তাই প্রকট হচ্ছে আমেরিকার ও চিনের এই নির্দেশগুলির মাধ্যমে৷
বেজিংয়ের কড়া প্রতিক্রিয়া
হিউস্টনে চিনা দূতাবাস বন্ধের নির্দেশের বিষয়ে চিনের বক্তব্য, আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত একতরফা৷ তাই ট্রাম্পের প্রশাসন যদি এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রত্যাহার না করে তাহলে আমেরিকার এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বেজিংও দৃঢ় পদক্ষেপ করবে৷ এরপরই শেনডংয়ে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ দেয়।
করোনা নিয়ে আমেরিকার পাল্টা তোপ চিনকে
প্রসঙ্গত, এর আগে আমেরিকার বিচারবিভাগের তরফে করোনা ভাইরাসের গবেষণা সংক্রান্ত-সহ একাধিক তথ্য চুরি বা চুরির চেষ্টার অভিযোগে দুই চাইনিজ হ্যাকারকে অভিযুক্ত করা হয়৷ বলা হয়, তারা বেজিংয়ের জন্য এই কাজ করছিল৷ এই বিষয়কে কেন্দ্র করে চিনের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, 'অনুপ্রবেশ ও হস্তক্ষেপ করা চিনের বিদেশ নীতির জিন বা ঐতিহ্য নয়৷'
যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের বাণিজ্যযুদ্ধ
এই করোনা মহামারী এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে পড়ে বিশ্ব বাণিজ্য হুমকির মুখে। মুক্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ গুরুতর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে এই মহামারীর জেরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সময় সমগ্র বিশ্বের জন্য। অবশ্য বাণিজ্যযুদ্ধ ছাড়িয়ে এখন উত্তেজনা ছড়িয়েছে সীমান্তে, সমুদ্রে, সব স্থানেই।
করোনা প্রকোপ শেষে চিনই বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থাকবে?
যখন এই প্রকোপ শেষ হবে, তখন কী শুধু চিনই বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থাকবে? এই প্রকোপ শুরু হওয়ার পর গোটা বিশ্বে ২৬ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত এই সংক্রমণে। আমেরিকা, যে কী না বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী দেশ, এই করোনার জেরে নুইয়ে পড়েছে। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ এখন সেটি। এরপরই তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল ও ভারত। চিনের প্রতিবেশী দেশ এখন করোনা আবহে দাবার ঘুঁটি হয়ে গিয়েছে। লাদাখ নিয়ে বাড়তে থাকা চাপানউতোরের মাঝেই আমেরিকা ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে।
চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও রণং দেহি মেজাজে আমেরিকা
লাদাখে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও রণং দেহি মেজাজে আমেরিকা। প্রসঙ্গত, বহুদিন ধরেই চিনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সংঘাত চলছিল। এরপর করোনা পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও খানিকটা যুদ্ধের দিকে ঘণীভূত হতে থাকে। এর থেকেই বিশেষজ্ঞদের মত যে আদতে চিন এই সব দেশের বিরুদ্ধে উত্তেজনা তৈরি করে ওয়াশিংটনে বার্তা পৌঁছাতে চাইছে। এর জবাবে অবশ্য আমেরিকার সাফ বার্তা, মার্কিন সেনা চিনের তরফে আসা চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে উপযুক্ত জায়গায় মোতায়েন থাকবে।
পুরোটাই ট্রাম্পের নির্বাচনী চাল?
করোনা আবহে চিনকে আক্রমণ করতেও ট্রাম্প বর্ণবিদ্বেষী পথ বেছে নিয়েছিলেন। এছাড়া সম্প্রতি আমেরিকা উত্তাল হয় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায়। এই সময়ও ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা ঝড় বয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্বজুড়ে। চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরই মধ্যে একাধিকবার জনমত সমীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ জনমত সমীক্ষার ফলাফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে ১৫ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছেন। সেই নির্বাচনের আগে জনমত গড়ে তুলতেই কি তবে বন্ধু থেকে চিনকে শত্রুতে পরিণত করলেন ট্রাম্প?