সঠিক কনটেন্ট মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নিরলস প্রচেষ্টা ডেইলিহান্টের, জানালেন সংস্থার সভাপতি উমঙ্গ বেদী
বদলে যাওয়া ভারতের জনতা যেভাবে খবরের পিছনে ছুটছেন বা কোনও খবরকে আপন করে নিয়েছেন, সেই ট্রেন্ড খুব দ্রুত বদলে গিয়েছে।
গত এক দশকে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। এই বদলে যাওয়া ভারতের জনতা যেভাবে খবরের পিছনে ছুটছেন বা কোনও খবরকে আপন করে নিয়েছেন, সেই ট্রেন্ড খুব দ্রুত বদলে গিয়েছে। ডেইলিহান্টের প্রেসিডেন্ট উমঙ্গ বেদী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ভাবনা, পছন্দ ও চাহিদায় সাম্প্রতিক সময়ে বদল এসেছে। যার ফলে খবরের যোগান দেওয়া সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তিকে সামনে রেখে নিজেদের পরিকল্পনায় বদল আনতে হয়েছে।
সিএনবিসি টিভি ১৮ -কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উমঙ্গ বলেছেন কীভাবে ডেইলিহান্ট আঞ্চলিক ভাষার কনটেন্টকে সামনে রেখে প্রযুক্তির সাহায্যে রণকৌশল সাজিয়েছে। ডেইলিহান্ট শুধু কনটেন্ট দিয়ে কাজ সারছে না, বরং ভারতে কনটেন্টের দুনিয়ায় এক নয়া বিপ্লব নিয়ে এসেছে।
উমঙ্গ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন, আমাদের কনটেন্টের উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিলে দেখবেন, আমরা বড় সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করি। যার সংখ্যা প্রায় ১৫০০টি। এবং সেখানে ১৫ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কনটেন্ট রাইটার বা এডিটররা কাজ করেন। ব্যবহারকারীর গোপনীয়তাকে রক্ষা করেই তাঁদের পছন্দমতো কনটেন্ট তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় বলে ডেইলিহান্টের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন।
ডেইলিহান্ট কোথায় সকলের থেকে আলাদা তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উমঙ্গ বেদী একটি পার্থক্যের কথা বলেছেন। যেমন ইন্টারনেটে দুই ধরনের কনটেন্ট পাওয়া যায়। একটি হল ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট। অর্থাৎ যেকোনও মানুষ যে তথ্য বা খবর ছড়িয়ে দিতে পারেন। আর একটি হল প্রফেশনালি জেনারেটেড কনটেন্ট। অর্থাৎ যে কনটেন্ট বা খবর বা তথ্য সাধারণভাবে প্রশিক্ষিত কনটেন্ট রাইটার বা সংবাদমাধ্যমে কাজ করা ব্যক্তি জুগিয়ে থাকেন।
ডেইলিহান্টে ঠিক এই কাজটাই হয়। সারা দেশে ১০ হাজার স্ট্রিঙ্গার যেমন রয়েছে, তেমনই বিভিন্ন সংস্থার প্রশিক্ষিত লেখকরা কনটেন্টের ওপরে কাজ করেন। সঠিক যাচাইয়ের পর ১৪-১৫টি ভাষায় সারা দেশে সেই কনটেন্টকে ডেইলিহান্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
আগে যেমন শুধু তৈরি কনটেন্টকে বাছাই করে তা ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো, এখন ডেইলিহান্ট নিজেরাই কনটেন্ট তৈরি করছে। উমঙ্গ বেদী বলছেন, আমরা ওয়ানইন্ডিয়াকে নিজেদের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছি। এখন আমাদের নিজস্ব টিম ওয়ানইন্ডিয়ার মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করছে।
প্রযুক্তি ও মেশিন লার্নিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডেইলিহান্টের প্রেসিডেন্ট বলছেন, এই প্ল্যাটফর্মে মেশিন লার্নিংই শেষ কথা বলে। আমরা বিভিন্ন পার্টনারের কাছ থেকে কনটেন্ট নিয়ে এমনভাবে ব্যবহার করছি যাতে ব্যবহারকারীকে এর সঙ্গে একনিষ্ঠ করে রাখা যায়।
ডেইলিহান্টে ১৫টি ভাষায় কনটেন্ট আসে। সেগুলিকে যাচাই করা হয়। কী বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে, হেডলাইন কী রয়েছে, খবরের কনটেন্ট কেমন, কী ধরনের খবর - এই সবই যাচাই করা হয়। সেটা নিশ্চিত হওয়ার পরই কনটেন্টটিকে ট্যাগ করা হয়। তারপর প্রায় ২৫ হাজার আলাদা আলাদা জায়গায় তা পাঠানো হয়।
ডেইলিহান্টে একজন গ্রাহকের পছন্দকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাঁদের কোনও ব্যক্তিগত তথ্য না সংগ্রহ করেই পছন্দের কনটেন্টের ডালি তাঁদের জন্য সাজিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে একজন ব্যবহারকারী কোন ধরনের কনটেন্ট দেখছেন, কী ধরনের কনটেন্টে ক্লিক করছেন, কতটা সময় ব্যয় করছেন, কোনটা পছন্দ করছেন, কোনটাই বা অপছন্দ করছেন, কোনটা শেয়ার করছেন, কোন কনটেন্টে কমেন্ট করছেন, এই সমস্ত যাচাই করে তাঁর কাছে নিউজ ফিড তুলে ধরা হয় যা একেবারেই গ্রাহকের পছন্দের। এমনটাই জানিয়েছেন ডেইলিহান্টের প্রেসিডেন্ট উমঙ্গ বেদী।
ডেইলিহান্টে সব ধরনের কনটেন্ট আসে। কোনও ঘটে চলা টপিককে সামনে রেখে বিভিন্ন পাবলিশাররা কনটেন্ট তৈরি করেন। ডেইলিহান্টে সেগুলিকেই মিশ্রণ করে এক নয়া প্ল্যাটফর্ম দেওয়া হয়।। কনটেন্টের বিভিন্ন ধরন থাকে। একই ঘটনা আলাদা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে ডেইলিহান্টের প্ল্যাটফর্মে সেই সব ধরনের কনটেন্টকে নিরপেক্ষভাবে পেশ করা হয়। কেউ বামপক্ষের কনটেন্ট দেখলে ডান পক্ষের কনটেন্ট কেমন তা প্রযুক্তির মাধ্যমেই ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরা হয়। ফলে ডেইলিহান্টের তরফে সবদিকের ভাবনা তুলে ধরে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয়।
উমঙ্গ বেদী বলছেন, অ্যাপের মাধ্যমে ৩০-৪০টি ভিডিও চ্যানেলকে ইতিমধ্যে ডেইলিহান্টে জায়গা দেওয়া হয়েছে। দেশের ৫৪৩টি লোকসভা ক্ষেত্র জুড়ে তাঁরা কাজ করছে। কনটেন্টে যাতে কোনও ধরনের সম্পাদকীয় পক্ষপাতদুষ্টতা না থাকে, তা ডেইলিহান্ট যাচাই করার চেষ্টা করে।
ভুয়ো খবর নিয়ে বলতে গিয়ে উমঙ্গ বেদী বলছেন, ডেইলিহান্টে বা ওয়ানইন্ডিয়ায় প্রশিক্ষিত লোকজনেরাই কনটেন্ট সামলান। ফলে ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট ব্যবহার করা হয় না যা ভুয়ো হওয়ার সম্ভাবনা হয় ষোলো আনা। ডেইলিহান্টে ৪৫০ জন কর্মী ও ওয়ানইন্ডিয়ায় ৪০০ জন কনটেন্ট এডিটররা যাচাই করার পরই তা প্ল্যাটফর্মে আসে। অনেক সময় বড় পাবলিশারদের কনটেন্টে ভুয়ো তথ্য এলে যাচাই করে তাঁদের কাছে ফিরে যাওয়া হয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক খবরের ক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠিত হাউসগুলির ওপরেই ভরসা করা হয়। ছোট পাবলিশারদের কনটেন্ট নেওয়া হয় না বলে নিশ্চিত করেছেন উমঙ্গ বেদী।