বেঙ্গালুরুর বুকে বাঙালি গৃহবধূর রেস্তোরাঁ, পুজোয় রসনায় প্রস্তুত 'হিয়ার মাঝে কলকাতা'
পুজোর ক'টা দিন বেঙ্গালুরুর প্রবাসী বাঙালিদের রসনা তৃপ্তি করতে হাজির 'হিয়ার মাঝে কলকাতা' রেস্তোরাঁ ।
এই বছরের সপ্তমী থেকে দশমী, কী থাকছে রেস্তোরাঁর হেঁশেলে ,খোঁজ নিয়েছে বেঙ্গলি ওয়ান ইন্ডিয়া ।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা-- 'হিয়ার মাঝে'র সবচেয়ে আকর্ষণীয় 'ডিশ' কী ?
সঙ্গীতা- ভেটকির পাতুরী, ফিশ ফ্রাই, বিরিয়ানি, মিষ্টি দই, রসোগোল্লা, সরষে ইলিশের চাহিদা তো আছেই । এছাড়া প্রত্যেক উৎসবের গন্ধটাকে ধরে রাখা হয় আমাদের রেস্তোরাঁয়। যেমন-জন্মাষ্টমীতে আমরা তালের বড়া করেছিলাম। গণেশ চতু্র্থীতে খিচুড়ি, লাবড়া ভোগ রান্না হয়েছিল ।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা-- এবারের পুজোয় কোথায় কোথায় এই স্টল করা হবে ?
সঙ্গীতা--বেঙ্গালুরুর হেব্বলের ম্যানপোতে এবার স্টল হচ্ছে। বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পুজোতে আমাদের স্টল থাকছে।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা-- মাছের কোন কোন পদ আপনারা করে থাকেন?
সঙ্গীতা-- পমফ্রেট, পাবদা- থেকে শুরু করে সমস্ত রকমের মাছেরই বাঙালিয়ানা পদ এখানে রান্না করা হয়। কিছুদিন আগেই 'বাংলা মেলাতে'-ও এই পদগুলি করা হয়েছিল।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা--- কোন পদের চাহিদা বেশি ?
সঙ্গীতা-- আমাদের তৈরি বিরিয়ানি আর ফিশফ্রাইয়ের বেশ ভালোরকম চাহিদা আছে। চিকেন ,মটন দুই ধরনের বিরিয়ানিরই ভালরকম জনপ্রিয়তা থাকে বছরভর।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা- পুজো স্পেশাল-এ কোনও বিশেষ মেনুর তালিকাটি কি সারা হয়ে গিয়েছে?
সঙ্গীতা-- লেমন চিকেন- এর চল বেশি, তাই সেটাক মাথায় রেখে এবারের পুজো স্পেশাল মেনু বানানো হচ্ছে। সাংহাই প্রনকে অন্যভাবে করা হবে আমাদের রেস্তোরাঁতে। ইলিশ মাছের পাতুরী এবার পুজোর স্পেশাল হিসাবে রাখার চেষ্টা করছি। মিষ্টির মধ্যে ক্ষীরকদম বা কালাকাঁদ রাখারও চেষ্টা করব। এবার মিষ্টি দইও থাকবে।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা-- 'মোবাইল অ্যাপ' বাদে কীভাবে খাবারের অর্ডার দেওয়া যায়?
সঙ্গীতা-- হোম ডেলিভারি পেজের ফোন নম্বরে ফোন করলেই সুইগি বা জোমাটো ছাড়াই ফোন করে অর্ডার করা যাবে। তবে পুজোর ৪ দিন হোম ডেলিভারি দেওয়া হয় না। এবারের পুজোর স্টল হবে মান্যতা টেক পার্কে। সেখানেই এসে আমাদের রেস্তোরাঁর খাবার স্বাদ নিতে হবে সকলকে।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা-- কীভাবে পথ চলা শুরু 'হিয়ার মাঝে'-র ?
সঙ্গীতা-- পথ চলা শুরু হয়েছিল ২০১৪-র অক্টোবরে। সে বছর কোরমঙ্গলার 'সারথি'তে আমরা প্রথম স্টল দিয়েছিলাম। সেই বছরই আমার মা মারা যান। সেই বছর তাই আর বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি আমার। কষ্টটা ভুলতে পুজোর সময়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখার কথা ভাবছিলাম। তখন পুজোর সময়ে রোল বা মোগলাই জাতীয় খাবরের স্টল দেওয়ার কথা ভাবা হয়। এ নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে আলোচনাও করি। এরপর শুরু হল উদ্যোগ, লড়াই...। সেই সময়ে বহু মানুষের সাহায্য পেয়েছিলাম। আমার স্বামী বিশ্বজিৎ, তাঁর বন্ধু অরবিন্দ , এই ৩ জন মিলে প্রথমবার খাবারের দোকান খুলি। আর যাঁর নাম না করলেই নয়, তিনি হলেন মুস্তাকিন ভাইয়া। তিনি আমাদের মেন কুক। রেস্তোরাঁর গাইডও বলা যেতে পারে।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা-- প্রবাসে বাঙালির ব্যবসা , ব্যাপারটা কতটা উপভোগ্য ?
সঙ্গীতা-- সেই... বাঙালি ব্যবসা করবে এই ব্যাপারটাই একটু..! জানো তো, প্রথম বছর যখন স্টল দিয়েছিলাম তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আসেননি । আমার স্বামী পেশায় ইঞ্জিনিয়ার আর আমি শিক্ষিকা । (হাসতে হাসতে) আমার শ্বশুর-শাশুড়ির বক্তব্য ছিল ,ইঞ্জিনিয়ার আর শিক্ষিকা খাবার স্টল দেবে , শুনলে লোকে হাসবে! আমারা বন্ধু-বান্ধবদের অনেকেই এটা নিয়ে হাসাহাসি করেছে। তবে প্রথম বছরের স্টলের সাফল্যের পর যখন আবারও ডাকা হল পুজোতে খাবারের স্টলের জন্য তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি আমাদের। অনেক চেনা মহিলাই বলেন , তাঁরা আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বেঙ্গালুরুতে ব্যাবসার উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন।
আমার থেকে বয়সে অনেক ছোটরাও এই ধরনের কাজে এগিয়ে এসেছে। ওদের এই উদ্যোগ দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। এখানে আমার ব্যাবসা সংক্রান্ত 'সেই অর্থে' প্রতিযোগীদের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভালো। ওঁদের থেকেও সাহায্য পেয়ে চলেছি প্রচুর।

ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা-- কীভাবে ঘর আর ব্যাবসা সামলান ?
সঙ্গীতা-- মহিলা না... বল মা হিসাবে ব্যাবসা চালানো (হাসি)! মেয়েক পড়ানোটা আমি গুরুত্ব দিয়ে করে থাকি। দু'দিকই সমলাতে পারছি, কারণ আমার স্বামী খুবই সাহায্য করেন আমায়। এছাড়াও শাশুড়িও ভীষণভাবে সাহায্য করে থাকেন। আমাকে উনি রান্নাঘরে যেতেই দেন না। মেয়েকে মানুষ করার ক্ষেত্রেও শ্বশুর শাশুড়ির সাহায্য করেন ভীষণভাবে। আমার মেয়েও বেশ বোঝদার হয়েছে। স্টলে ও নিজেও মাঝে সাঝে গিয়ে বসে (হাসি)।