ফিরে দেখা ২০২০ : রাম মন্দির নির্মাণ, আম্ফান থেকে করোনা! বছরের হেডলাইনগুলি একনজরে
ফিরে দেখা ২০২০ : রাম মন্দির নির্মাণ, আম্ফান থেকে করোনা! বছরের হেডলাইনগুলি একনজরে
২০২০ সালটি ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে করোনা ভাইরাসের বছর হিসাবে। এই বছরে ফিরে দেখতে গিয়ে সবকিছুতেই যেন দেখা ছায়া পড়েছে করোনা ভাইরাস। করোনা আবহেই বিহারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। লাদাখে চিনা আগ্রাসন দেখা যায় এই বছর। এছাড়া আম্ফান ঘূর্ণিঝড় বাংলার বুকে একটি দাগ কেটে দিয়ে যায়। একনজরে ফিরে দেখা যাক ২০২০ সালের হেডলাইনগুলি।
করোনা ভাইরাস
ভারতে প্রথম করোনা ভাইরাসের কেস ধরা পড়েছিল কেরলে। দিনটা ছিল ৩০ জানুয়ারি। উহান ফেরত এক পড়ুয়ার শরীরেই সেই ভাইরাস মিলেছিল। এরপর মার্চ মাসে দিল্লির তবলিঘি জামাতের ঘটনার পর হঠাৎই ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। এরপর মুম্বই, হায়দরাবাদ, কর্ণাটকে ছড়িয়ে পড়ে কোভিড। দেশের শেষ প্রান্তে এসে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি পার করার পথে। মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা
করোনা আবহেই দেশের পরিযায়ী সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। লকডাউন জারির পর দেশের কয়েক কোটি পরিযায়ী শ্রমিক নিজ নিজ রাজ্যে ফেরার জন্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার হেঁটেছেন কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। মারাও গিয়েছেন কয়েকশো। জানা গিয়েছে প্রায় ৪ কোটি পরিযায়ী মহারাষ্ট্র, গুজরাত, পাঞ্জাব থেকে ফিরেছে বাংলা, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে। মারা গিয়েছেন অন্ত পক্ষে ১৯৮ জন পরিযায়ী।
লাদাখে চিনা আগ্রাসন
গোটা ২০২০ সাল ধরেই লাদাখ সীমান্তে জোর উত্তেজনা জারি থাকল। সীমান্ত সমস্যার খবর প্রকাশ্যে আসে মে মাসের শুরুর দিকে। জানা যায়, পূর্ব লাদাখ সীমান্তে হিংসাত্মক সংঘর্ষে ২৫০ জন সৈন্য জড়িত ছিল৷ ৫মে সন্ধ্যায় সংঘর্ষ শুরু হয় এবং পরদিন বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এই পরিস্থিতিতে ১৫ জুন রাতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয় পূর্ব লাদাখের ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায়৷ ভারতের ২০জন শহিদ হন। চিনের তরফে অন্তত পক্ষে ৪০ জন সেনা প্রাণ হারান।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান
২০০৭ সালের পর সব থেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের উপর। এই আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের জেরে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৭২ জন মারা গিয়েছেন। শুধুমাত্র কলকাতাতেই প্রাণ হারান ১৭ জন। এরপর কেন্দ্রের তরফে ১ হাজার কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয় রাজ্যকে। এরপর আরও ২,৭০৮ কোটি টাকা কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হয়েছিল রাজ্যকে।
জিডিপির পতন
২০২০-২১ আর্থিক বছরে ভারতের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট গত বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের তুলনায় কমেছে ২৩.৯ শতাংশ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনীতিতে এই ধসের প্রধান কারণ হল করোনা প্যানডেমিক৷ দেশব্যাপী করোনা প্যানডেমিকের জন্য বাধ্যতামূলক লকডাউনের ফলেই পড়েছে জিডিপি৷ প্রায় ৪০ বছর পর এভাবে পড়ল ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার৷ এর আগে, ১৯৭৯ সালে জিডিপি পড়েছিল - ৫.২ শতাংশ৷ ২০২০-২১ আর্থিক বছরে জিডিপি দাঁড়িয়েছে মোট ২৬.৯ লক্ষ কোটি টাকা৷ যা ২০১৯-২০ সালে ছিল ৩৫.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা৷ ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ত্রৈমাসিক গ্রস ভ্যালু ২৫.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা৷ যা ২০১৯-২০ সালে ছিল ৩৩.০৮ লক্ষ কোটি টাকা৷ ফলে কোয়াটারলি গ্রস ভ্যালু পড়েছে ২২.৮ শতাংশ৷
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু
করোনা আবহে কালো ছায়া নেমে আসে বলিউডে। আত্মহত্যা করেন বলিউডের নতুন প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ সুশান্ত সিং রাজপুত। মুম্বইয়ের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। বাড়িতে থাকা কাগজপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরেই আবশাদ ভুগছিলেন তিনি। এরপর অবশ্য তাঁর প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর উপর অভিযোগের আঙুল ওঠে। শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। 'এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি', 'ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী', 'পিকে' সহ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন সুশান্ত।
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারত
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী পদে দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হয় ভারত৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে ভারত ৷ রাষ্ট্রসংঘের ১৯৩টি ভোটের মধ্যে ১৮৪টি ভোট পায় ভারত৷ যদিও ভারতের দরকার ছিল মাত্র ১২৮টি ভোট। প্রসঙ্গত, এশিয়া প্যাসিফিক থেকে একমাত্র দেশ হিসেবে ৮ বার এই সদস্যপদ অর্জন করে ভারত৷ এর আগে ১৯৫০-৫১, ১৯৬৭-৬৮, ১৯৭২-৭৩, ১৯৭৭-৭৮, ১৯৮৪-৮৫, ১৯৯১-১৯৯২ ও ২০১১-১২ সালে ভারত এই অস্থায়ী পদ অর্জন করে৷
রাম মন্দিরের ভূমিপূজা
অযোধ্যা জমিজট মামলায় ঐতিহাসিক রায় আসার পর বিশাল রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে রামনগরী অযোধ্যায়। হিন্দু বিশ্বাস মতে, যেখানে রামের জন্ম হয়েছিল, সেখানেই তৈরি হচ্ছে মন্দির। সেই লক্ষ্যে চলতি বছরের ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে শুরু হয় রাম মন্দির নির্মাণের কাজ। ভূমিপুজোয় অংশ নেওয়া ও রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই মন্দিরের জন্য অনেকে জীবন বলিদান দিয়েছেন৷ আজকের দিন ত্যাগ ও তপস্যার প্রতীক৷ ৫ অগাস্ট ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা ১৫ অগাস্ট।'
বিহার বিধানসভা নির্বাচন
করোনা আবহে অনুষ্ঠিত বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয় এনডিএ জোট৷ তখনও তিনটি আসেন ফল ঘোষণা হওয়া বাকি৷ কিছু সময় পর ওই তিনটি আসনেরও ফলাফলও সামনে আসে৷ তিনটিতেই জয়ী হয় এনডিএ জোট৷ সবমিলিয়ে এনডিএর দখলে আসে ১২৫টি আসন, আর মহাজোট থমকে যায় ১১০টি আসনেই৷ বিজেপি এককভাবে জিতেছে ৭৪টি আসন৷ নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড জিতেছে মাত্র ৪৩টি আসন৷
ফিরে দেখা ২০২০: করোনা থাবা বসিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীদের শরীরেও, কারা কারা আক্রান্ত হয়েছেন একনজরে