কোভিড গ্রাসে ভারতে ৩০ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু? সরকারি পরিসংখ্যানেই কী আসল গলদ?
ভারতে কোভিডে মৃতের আসল সংখ্যা জানেন কী?
কোভিডের এলোমেলো বিক্ষিপ্ত বাণে বিদ্ধ হয়ে ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ। সরকারি হিসেবে, ১৪০ কোটির দেশ ভারতে ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা ৪ লক্ষের গণ্ডি অতিক্রম করেছে। যদিও আসল সংখ্যা যে প্রায় ৩০ লক্ষের আশেপাশে, তা স্পষ্ট জানিয়েছে ওয়াশিংটনের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট (সিজিডি)! আর তাতেই বাড়ছে আতঙ্ক। ক্রমাগত চিতার ধোঁয়ায় যে দেশের আকাশ ধূমায়িত, গঙ্গায় যেখানে মুহুর্মুহু দেখা মিলছে বেওয়ারিশ লাশের, সেখানে মোদী সরকারের হিসাবে বেনজির গন্ডগোলের খবরে আতঙ্কিত দেশবাসী।
অতিরিক্ত ৩৪-৪৭ লক্ষ নাগরিকের মৃত্যু
রাজ্যের তথ্য, আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান, সেরোলজিক্যাল সমীক্ষা ও গৃহসমীক্ষার সকল তথ্যাদি বিচার করে সিদ্ধান্তে এসেছে সিজিডি। ২০২০-র জানুয়ারি থেকে ২০২১-র জুন মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ৩৪-৪৭ লক্ষ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সমীক্ষার দায়িত্বে থাকা গবেষকদের মতে, "সরকারি হিসেবে ত্রুটি-বিচ্যুতির পরিমাণ মারাত্মক। পাশাপাশি দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকে প্রথম জোয়ারের প্রভাব আরও ভয়াবহ ছিল, যা সঠিকভাবে আমরা অনুভব করতে পারিনি!"
প্রথম ঢেউয়ের নিরিখেই দ্বিতীয় ঢেউ ভবিষ্যদ্বাণী
দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের অপ্রতুলতা, শয্যার অভাব ও পরিকাঠামোর ভেঙে পড়ার কারণে মৃত্যু বেড়ে যায় হঠাৎই। যদিও প্রথম ঢেউয়ের ক্ষেত্রে এহেন কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হওয়ায় বহু মৃত্যু অজ্ঞাত থেকে যায়, মত গবেষকদের। ভারতের বহু গোরস্থান ও শ্মশানে নিউইয়র্ক টাইমস যে সাক্ষাৎকার নেয়, তাতে সরকারি হিসেবে গোলমালের ছবি স্পষ্ট করে।
টিকা পেয়েছে ভারতের ৭ শতাংসের কম নাগরিক
রাজনীতিকদের গাফিলতি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলির দুর্নীতির কারণেই চাপা পড়েছে কোভিডের সঠিক পরিসংখ্যা, সমীক্ষকদের মত এমনটাই। পাশাপাশি ভারতের ৭%-এরও কম নাগরিকের টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এমবস্থায় এখনও প্রত্যহ ৪০,০০০ আক্রান্ত ও ৫০০-এরও অধিক মৃত্যুতে কাঁপছে দেশ, জানাচ্ছে সমীক্ষা। মোদীর প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ সুব্রহ্মনিয়ম এই সমীক্ষার তদারকি করেছেন। তাঁর মতে, "মৃত্যু রোখার একমাত্র পন্থা দ্রুত টিকাকরণ।"
বাড়ছে উদ্বেগ
দ্বিতীয় ঢেউ অতিক্রম করার পূর্বেই আগামী অগষ্টে ভারতে আছড়ে পড়তে পারে তৃতীয় জোয়ার, মত বিশেষজ্ঞদের। এমতাবস্থায় হু আগাম সতর্ক করেছে ভারতকে। সমীক্ষার দায়িত্বে থাকা অপর দুই গবেষক অভিষেক আনন্দ ও জাস্টিন সানদাফুরের বক্তব্য, "এই সমীক্ষার মূল লক্ষ্য, সরকারকে স্বচ্ছ পরিসংখ্যান পেশ করা। আর সেই কাজই করা হচ্ছে।" বর্তমান পরিস্থিতিতে তথ্য আহরণ প্রায় অসম্ভব, এহেন অবস্থায় সকল ক্ষেত্র থেকে তথ্যাদি সংগ্রহ করলেই যে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব, তাো সাফ জানান সিজিডির করোনাবিদরা।