তিনবার বদলেছে খসড়া! মধ্য়রাতে সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেসের আবেদনের নেপথ্য কাহিনী জানুন
কংগ্রেসের আইনি দলকে তাদের আবেদন তিনবার পরিবর্তন করতে হয়েছিল, ফলাফল ঘোষণার আগেই কংগ্রেস একটি সুপ্রীম কোর্টের আবেদন প্রস্তুত করেছিল, কংগ্রেস আইনি দল কর্ণাটকের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ
গত বুধবার কর্ণাটকে রাজ্যপাল বিজেপিকে সরকার গড়তে ডাকার পরই সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে আবেদন করেছিল কংগ্রেস। মধ্য-রাত্রে হয় নাটকীয় শুনানি। পর্দার পিছনেও নাটকের কমতি ছিল না। কর্নাটক সরকার গঠনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কংগ্রেসের আইনি দল দ্রুত বদলে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন-তিনবার তাঁদের আবেদন পাল্টেছে।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার আগে কংগ্রেস ধরেই নিয়েছিল কর্ণাটকের পরিস্থিতি হতে চলেছে গোয়ার মতো। গোয়ায় তারা একক বৃহত্তম দল হয়েও সরকার গড়তে পারেনি। কংগ্রেস বুঝে ওঠার আগেই বিজেপি সেখানে নির্বাচন পরবর্তী জোট গঠন করে, সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে দিয়েছিল। করণাটকে যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য কংগ্রেস আগে থেকেই আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। অভিষেক মনু সিংভির নেতৃত্বে কংগ্রেস এর আইনি দল একটি খসড়া পিটিশন তৈরি করে রেখেছিল। ওই পিটিশনের বক্তব্য ছিল, সরকার গঠনের জন্য একক বৃহত্তম দলকে আমন্ত্রণ জানাতে রাজ্যপালকে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিক।
কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি দাঁড়ায় অন্যরকম। কর্ণাটকে একক বৃহত্তম দল হয় বিজেপি। সিংভী, দেবদত্ত কামাত, রাজেশ ইনামদার, জাভেদ রেহমান, আদিত্য ভাট, গৌতম তালুকদারাও দ্রুত পাল্টে ফেলেন আগের খসড়াটি। এবার তাদের পিটিশনে রাজ্যপালকে কংগ্রেস-জেডি (এস) জোটকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলা হয়। তাঁরা ভেবেছিলেন, রাজ্যপাল কংগ্রেস-জেডি (এস) জোটকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানাতে টালবাহানা করবেন। যাতে সেই সময়ে ইয়েদুরাপ্পা শিবিড় বিরোধী এমএলএ ভাঙানোর সুযোগ পায়। রাজ্যপালের সেই স্ট্র্যাটেজি ভেস্তে দেওয়ার লক্ষ্যে মোটামুটিভাবে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সিংভীরা পিটিশনটি আদালতে প্রায় পেশ করেই ফেলেছিল।
কিন্তু এরপরই ঘটনায় আবার বাঁক আসে। রাত আটটা নাগাদ জানা যায় রাজ্যপাল ইয়েদুরাপ্পাদের সরকার গড়তে ডেকেছেন। এতেই কাঁপুনি ধরে কংগ্রেসের নেতাদের মনে। কিন্তু সিংভী-কামাতরা ঘাবড়াননি। ফোনেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা সারেন আইনি দলের সদস্যরা। ঠিক হয়, পিটিশনটি আবার বদলে ফেলা হবে। এবার রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আবেদন করা হবে। বলে হবে সিদ্ধান্তটি অসাংবিধানিক। কারণ তিনি নির্বাচন পরবর্তী জোটের হাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যা থাকলেও তাঁদের সরকার গড়তে ডাকছেন না। আবেদনের সপক্ষে যুক্তি সাজাতে নতুন করে তাদের আগে হওয়া কয়েকটি মামলার রায় ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়।
এসব করতে করতে রাত সাড়ে দশটা বেজে যায়। হন্তদন্ত হয়ে কংগ্রেসের আইনজীবিরা আদালতে পৌঁছে দেখেন গেট বন্ধ। নিরাপত্তা রক্ষীরা কোনও কথআই শুনতে চাননি। এরপর আদালতের রেজিস্ট্রার ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি পিটিশনটি পরীক্ষা করে কামাতদের কাছে মামলাটির তখনই শুনানি প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু দুঁদে আইনজীবীরা সাফ জানিয়ে দেন, জরুরী শুনানির জন্য প্রয়োজনীতা স্থির করা রেজিস্ট্রারের কাজ নয়। তাঁরা জানান, সি.জি.আই দীপক মিশ্রের কাছে তারা মামলাটি উত্থাপন করতে চান।
সাড়ে বারোটায় রেজিস্ট্রার প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যান। সিজিআই মামলাটির জরুরি শুনানির অনুমতি দেন। এরপরই রাত পৌনে দুটো নাগাদ ৬ নম্বর আদালতে বিচারপতি এ কে সিকরি নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।