নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কি মৌলিক ও সাম্যের অধিকার লঙ্ঘন করছে, একটি পর্যালোচনা
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী জন্ম, বংশোদ্ভব, নিবন্ধকরণ এবং প্রাকৃতিকীকরণের ভিত্তিতে ভারত কোনও ব্যক্তিকে তার নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী জন্ম, বংশোদ্ভব, নিবন্ধকরণ এবং প্রাকৃতিকীকরণের ভিত্তিতে ভারত কোনও ব্যক্তিকে তার নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এই নাগরিরত্ব সংবিধানের দ্বিতীয় খণ্ডের ৫-৯ নিবন্ধে বৈধতা পায়। আবারও এই নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
প্রশ্নে মৌলিক ও সাম্যের অধিকার
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে? লঙ্ঘন করে সাম্যের অধিকার? এর আগে নাগরিকত্ব আইন পাঁচবার সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধন করা হয়েছে ১৯৮৬, ১৯৯২, ২০০৩, ২০০৫ ও ২০১৫ সালে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে তিনবার এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে দু-বার সংশোধন হয় নাগরিকত্ব বিল।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ বিতর্কে
নাগরিকত্ব আইনের আরও একটি সংশোধনী বর্তমানে নরেন্দ্র মোদী সরকার উত্থাপন করেছে। এই নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ নিয়েই বিতর্ক চরমে উঠেছে। বর্তমান আইনের অধীনে নাগরিকত্ব অর্জনের জন্য আবেদন করার যোগ্য নন একজন অবৈধ অভিবাসী। নিবন্ধন বা প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল বর্তমান আইন।
ভারতীয় নাগরিক হতে
ফরেনার্স অ্যাক্ট এবং পাসপোর্ট আইন এই জাতীয় ব্যক্তিকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অবৈধ অভিবাসীকে কারাগারে বা নির্বাসন দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেছে। কোনও ব্যক্তি নিবন্ধের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক হয়ে উঠতে পারেন যদি তিনি ভারতে গত আট বছরের ছয় বছর ধরে এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার আগে একটানা ১২ মাস ধরে দেশে থাকেন।
প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জনে
প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তির ১৪ বছর ধরে ভারতে বসবাস করা উচিত। তার মধ্যে ১২ বছর দেশে থাকা উচিত। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯-এর লক্ষ্য যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তিনটি প্রতিবেশী দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি হয়, তবে নাগরিকত্ব আইন, পাসপোর্ট আইন এবং বিদেশি আইনে পরিবর্তন আনতে হবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পাস হলে
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যদি সংসদে পাস হয়, তাহলে যে সব অবৈধ অভিবাসী কারাগারে বন্দি রয়েছেন বা যাঁদের নির্বাসন দেওয়া হয়েছে, তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী বা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান- এই তিনটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে এলেও ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের উদ্দেশ্য
সহজ কথায়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বৈধ কাগজপত্র এবং অনুমতি ব্যতীত ভারতে আসা সত্ত্বেও অবৈধ অমুসলিম অভিবাসীদের আইনী অভিবাসীদের মর্যাদা দেবে। তবে এই বিধানগুলি প্রযোজ্য যদি এই অভিবাসীরা ধর্মীয় নিপীড়নের পরে তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে চলে আসে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে পরিবর্তন আনার আরও উদ্দেশ্য হল- বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অবৈধ অমুসলিম অভিবাসীদের ভারতে অবস্থানের সময়কাল হ্রাস করা। তা ১৪ বছর থেকে কমিয়ে ছয় বছর করা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিরোধী দাবি
বিরোধীদের দাবি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি মুসলমানদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। ভারতীয় সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই জাতীয় বৈষম্য অসাংবিধানিক। সংবিধানের অন্যতম ভিত্তি হল এই ১৪ অনুচ্ছেদ। এতে বলা হয়েছে, আইনের সামনে রাষ্ট্র কোনও ব্যক্তির সমতা বা ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে আইনগুলির সমান সুরক্ষা অস্বীকার করবে না।
ইন্দিরা গান্ধীও বাংলাদেশি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন, পাল্টা যুক্তি অমিত শাহের
বিলটি ০.০১ শতাংশও সংখ্যালঘুদের বিপক্ষে নয়, কৌশলে নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে যুক্তি অমিতের