আগে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি তারপর এখানে বড় শিল্প হবে, সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে 'শিল্পায়নে'র বার্তা মমতার মুখে
একদিকে সিঙ্গুর অন্যদিকে নন্দীগ্রাম! এই দুই আন্দোলনের পীঠস্থানই বাংলায় পরিবর্তন ঘটায়। দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ফের ভোট বাংলায়। এবার কিছুটা হলেও পরিস্
একদিকে সিঙ্গুর অন্যদিকে নন্দীগ্রাম! এই দুই আন্দোলনের পীঠস্থানই বাংলায় পরিবর্তন ঘটায়। দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ফের ভোট বাংলায়। এবার কিছুটা হলেও পরিস্থিতি আলাদা।
কার্যত বাংলা দখল পাখির চোখ বিজেপির। এই অবস্থায় নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যপাধ্যায়। হুগলিতে ভোট বেড়েছে বিজেপির। সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকরা জমি ফিরে পেলেও এখনও সেখানে তেমন কিছু না হওয়াতে ক্ষোভ বেড়েছে। আর তা আঁচ পেয়েছেন মমতাও। আর তাই ভোট প্রচারে গিয়ে সিঙ্গুরে শিল্পায়নের উপর জোর দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
'সিঙ্গুরে কৃষিভিত্তিক শিল্প হবে'
যে সিঙ্গুর মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদের দিকে এগিয়ে দিয়েছে সেই সিঙ্গুরই মুখ ঘুরিয়েছে। এখনও পর্যন্ত সেখানে কিছু না হওয়াতে হতাশ সেখানকার মানুষ। আর তা বুঝতে পেরেছেন মমতাও। গত লোকসভা নির্বাচনে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে জয় পায় বিজেপি। লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে এগিয়ে বিজেপি। এই অবস্থায় সিঙ্গুর ভোট প্রচারে গিয়ে শিল্পায়নের কথা মমতার মুখে। তিনি বলেছেন, তৃণমূল সরকারে এসে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচী নিয়েছে। সেই খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি মমতা বলেন, ১১ একর জমি সিঙ্গুরে রেখেছি। সেখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মমতা। আর এর ফলে সিঙ্গুরে অনেকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশ্বাস তাঁর। মন্তব্য, আগামিদিনে চাকরির জন্যে বাইরে যেতে হবে না এলাকার ছেলেমেয়েদের।
সিঙ্গুরে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে
প্রায় ১০ বছরের বেশি কেটে গিয়েছে। সিঙ্গুর এখন শ্মশান। অনেকেই এখন বলছেন সিঙ্গুরে সেই সময় শিল্প হলেও ভালো হত! তবে আজ ভোট প্রচারে গিয়ে সেই শিল্প তৈরির বিষয়টিতেই নজর দিয়েছেন। মমতা বলেছেন, আগামী দিনে সিঙ্গুরে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে। আগে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি হবে। তারপর এখানে বড় শিল্প হবে। ভোট প্রচারে গিয়ে এমনটাই আশ্বাস মমতার মুখে। মমতা বলেন, আমি একজনকে বলেছি এখানে বিনিয়োগ করার জন্যে।
ভোটের আগে সিঙ্গুরে শিল্প-ঘোষণা
ভোটের আগে সিঙ্গুর নিয়ে উঠে পড়ে লাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট ঘোষণার কয়েকমাস আগে সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়,'কৃষি আমাদের গৌরব, শিল্প সম্পদ।' সেই সময় মমতা বলেন, 'সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাসস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করছি। সেখানকার ফসল সুজলা, সুফলা। ১১ একর জমির উপরে পার্ক তৈরি করছে পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগম। সিঙ্গুর রেলস্টেশনের কাছে জমি ঘেরা শুরু হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছুক শিল্পপতিদের ১০ থেকে ৩০ কাটার প্লট দেওয়া হবে। বড় প্লটও থাকছে। শিল্পপতিদের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিকল্পনাও করতে পারি।' এদিন ফের একবার এই বিষয়টিকেই তুলে আনলেন তিনি।
ভোটের ইস্যু সিঙ্গুর
গত লোকসভা ভোটে হুগলিতে জিতেছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রেই সিঙ্গুর আন্দোলনকে হাতিয়ার করে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের রূপচাঁদ পালকে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের রত্না দে নাগ। ঠিক তার ১০ বছর পরে হারলেন রত্না। সিঙ্গুর বিধানসভায় তৃণমূলের চেয়ে ১০, ৪২৯ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে বিজেপি। এমনকি টাটাদের জমি যে মৌজাগুলিতে ছিল, সেখানেও ফুটেছে পদ্ম। ভোটের ফল ইতিবাচক আসার পরই সিঙ্গুরে শিল্পের দাবিতে পথে নেমেছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাংলায় বিজেপি আসলে সিঙ্গুরে শিল্প হবে। পিছিয়ে নেই সিপিএমও। তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠনও শিল্পের দাবি তুলেছে। এবার সেখানে দাঁড়িয়ে শিল্পায়নের পক্ষে জোড়াল সওয়াল মমতার।