'খেলা হবে'-র মঞ্চ থেকেই ইস্টবেঙ্গলের আইএসএলে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আশ্বাস মমতার
ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের সংঘাত মিটে কয়েক দিনের মধ্যেই চুক্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। তারই মধ্যে আজ নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে খেলা হবে কর্মসূচির মঞ্চ থেকে বড় বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, গত বছরও লাল হলুদের আইএসএলে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইনভেস্টর জোগাড় করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সভাঘরে দুই পক্ষের চুক্তি হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই। কিন্তু লাল হলুদ কর্তারা লগ্নিকারীদের বেশ কিছু শর্ত মানতে রাজি না হওয়ায় চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সই না করার কথা জানান। এরপর অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করতে থাকেন।প্রাক্তন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয় চুক্তিপত্রের জটিলতা কাটানো নিয়ে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে কথা বলতে। এরপর বরফ গলতে থাকে। আর তারই মধ্যে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ বার্তা যা স্বস্তি দিতেই পারে আপামর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের।

ভরসা মমতা
টার্মশিট ও চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে অসঙ্গতি নিয়ে ইনভেস্টর ও লাল হলুদ কর্তাদের অনড় অবস্থান, চাপানউতোরে থমকে ক্লাবের ভবিষ্যৎ। সমর্থক থেকে প্রাক্তনদের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করছিলেন যাতে জটিলতা কেটে যায় এবং ইস্টবেঙ্গল বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। এমনকী এ মাসেই শুরু হতে চলা কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের ক্রীড়াসূচিতেও এসসি ইস্টবেঙ্গলকে রাখা হয়েছে। যদিও চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতা না মেটায় দল গঠনই বিশ বাঁও জলে। বিশেষ করে আইএসএলের অন্য ক্লাবগুলি যেখানে দল গুছিয়ে নিয়েছে সেখানে লাল হলুদের আইএসএলে অংশ নেওয়ার বাধা সরেনি। যদিও জরিমানা এড়াতে শেষ মুহূর্তে এএফসি-র কাছে ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের যাবতীয় নথি জমা দিয়েছেন শ্রী সিমেন্টের কর্তারা।

ইস্টবেঙ্গলকে আশ্বাস
এরই মধ্যে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মোহনবাগান আইএসএল খেলছে। ওদের চুক্তি ঠিক আছে। সমস্যা নেই। ইস্টবেঙ্গলের কি মনটা খারাপ? কারা রয়েছেন হাত তুলুন। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, চিন্তা নেই হয়ে যাবে। চুক্তি নিয়ে ঝগড়াঝাটি, মনোমালিন্য হচ্ছে। তবে আমিও চাই ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেলুক। মোহনবাগানও খেলুক। ২১ জুলাই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা শাসক-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্লাবের গেটে যে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন এবং পুলিশ লাঠিও চালিয়েছিল সেই ঘটনার কথা টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহনবাগান তো সেদিন ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের জন্য ক্লাবের দরজা খুলে দিয়েছিল। এই সম্পর্কটাই বজায় রাখা উচিত। প্রতিযোগিতা প্রতিযোগিতা, ভালোবাসা ভালোবাসা। খেলাধুলোর মধ্যে দিয়ে একে অপরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া য়ায়। আমি তো চাই মহমেডানও আইএসএল খেলুক। সুলতান (আহমেদ) আজ বেঁচে নেই। কিন্তু ওঁদের ক্লাবেরও গুরুত্ব আছে। আমার আশা, মহমেডানও ভালো করবে। খেলুক, আমি চাই বাংলার ক্লাবগুলো ভালো ভূমিকা নিক।

ছেড়ে খেলার পরামর্শ
এরপরই ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চুক্তি হচ্ছে, তবে ছেড়ে খেলুন। ছেড়ে খেললে ওটা হয়ে যাবে। আমি আশা করি ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেলবে, অন্তত আমার কাছে যা ইনফরমেশন রয়েছে। গত বছরও শেষ মুহূর্তে আমাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল বাংলার ক্লাব যাতে খেলতে পারে সেজন্য। মোহনবাগান আগেই চুক্তি করে খেলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেলেছিল। এটাও ঠিক ব বছরের গ্যারান্টি নেওয়া কম কথা নয়। প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকার ব্যাপার। তাও ওদের (শ্রী সিমেন্ট) বলে রাজি করানো হয়েছে। মেম্বারশিপের ব্যাপারেও তো ওরা অনুমোদন দিয়েছে। ফলে এই বিষয়টি সলভ হবে। আপনাদের মুখে হাসি ফুটবে, ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেলবে।

খেলা হবে দিবস
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ১৬ অগাস্ট রাজ্যজুড়ে খেলা হবে দিবস পালিত হবে। এটা আলোড়ন সৃষ্টি করবে। গ্রামের গরিব ক্লাবকে আমরা ১ লক্ষ ফুটবল দেব। আইএফএ ৩০৩টি ক্লাবের প্রত্যেকটিকে ১০টা করে বল দেবে। আমরা আইএফএ-র জন্য কিছুই করতে পারি না, এটুকুই করি। এ ছাড়া ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহমেডান ক্লাবকে ১০০টি করে বল আমরা দেব টোকেন হিসেবে। গ্রামবাংলায় ১ লক্ষ বল দিচ্ছি। ১৬ তারিখে খেলা আয়োজনের বিষয়টিতে আইএফএ-র সহযোগিতা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২৫ হাজার ক্লাব সরকারি অনুদান পায়। পুলিশ আরও অনেক ক্লাবকে সহযোগিতা করে। খেলা দিবসে খেলার জন্য ক্লাবগুলিকে হাত খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে, ১০টা করে বল দেওয়া হবে। ক্লাবগুলি খেলেও যেমন পুজোও করে। সামনে পুজোও বড় খেলা আসছে। সবাইকে ইনভলভ হতে হবে।