'ভারত বনাম বাংলা' থেকে পিছু হঠল মমতা সরকার, খেলা হবে দিবসকে কটাক্ষ শুভেন্দুর
খেলা হবে দিবসে বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচে দুই দলের নাম নিয়ে বিতর্ক উঠতেই পিছু হঠল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। একইসঙ্গে খেলা হবে দিবসকে এদিনও তীব্র কটাক্ষে বিঁধেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
নাম বিতর্ক
প্রতি বছর ১৬ অগাস্ট দিনটি বাংলায় পালিত হয় ফুটবলপ্রেমী দিবস হিসেবে। ১৯৮০ সালে ইডেন গার্ডেন্সে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে রাজ্যে তৃতীয়বার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হতেই ফুটবলপ্রেমী দিবসে মিশছে রাজনীতির রং। ফুটবলপ্রেমী দিবসে খেলা হবে দিবস আয়োজন নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠতেই রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেছিলেন, বাংলায় যে খেলা হয়েছে তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১৪ গোল দিয়েছেন। এবার ভারতজুড়ে খেলা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ৫০০ গোলে জেতার অপেক্ষায় আমরা রয়েছি। ফুটবলপ্রেমী দিবসে রাজনীতির রং লাগানো নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা বলেন, রাজনীতি ছাড়া কিছু কি হয়! ভারতজুড়ে খেলা হবে ডাক দিয়ে অরূপ বিশ্বাস সেদিন বলেন, খেলা হবে দিবসের বড় আকর্ষণ বাংলার ফুটবল দলের সঙ্গে ভারতের খেলা!
বদলের দাবি
ভারতের সঙ্গে বাংলার লড়াই! কস্মিনকালে যা হয়নি সেটি করে ইতিহাস গড়া বোধ হয় লক্ষ্য ছিল অরূপ বিশ্বাসদের। যদিও শেষ মুহূর্তে পিছু হঠতে হল। ভারত বনাম বাংলা ম্যাচ কীভাবে হতে পারে সে নিয়ে সবার আগে প্রশ্ন তোলে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি। যোগাযোগ করা হয়েছিল দুই প্রধানে খেলা প্রাক্তন ভারতীয় গোলকিপার তথা বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবের সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি বাংলায় দেশের আইন মানা হয় না। প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হেলিকপ্টার সফরের অনুমতি মেলে না। সবমিলিয়ে এটাও একটা ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার প্রয়াস। রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যের খেলা হতে পারে, ভারতের বিরুদ্ধে কোনও রাজ্যের খেলা কোনওদিন হয়নি, হবেও না! প্রধানমন্ত্রী একাদশ বনাম মুখ্যমন্ত্রী একাদশ কিংবা এআইএফএফ একাদশ বনাম আইএফএ একাদশের খেলা আয়োজনে কোথায় সমস্যা ছিল। আসলে বাংলাকে ভারতের চেয়ে বিচ্ছিন্ন দেখানোর যে চেষ্টা এই সরকার করছে এটা তারই এক নজির।
পিছু হঠল সরকার
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত বনাম বাংলার লড়াই নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যদিও আজ সকালেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রাজ্য সরকারের তরফে যে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল তাতে লেখা ছিল খেলা হবে দিবসের বিশেষ আকর্ষণ ভারতীয় জাতীয় দল বনাম বাংলা দলের ফুটবল ম্যাচ। সেখানে লেখা ছিল রাজ্যের ৩৪৩টি ব্লক, ১১৭টি পুরসভা, ৬টি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, কলকাতা পৌরসংস্থার ১৪৪টি ওয়ার্ড ও ২৩টি জেলা সদর, জিটিএ ও আইএফএ অনুমোদিত ৩০৯টি ক্লাব বা সংস্থায় খেলাধুলোর মাধ্যমে খেলা হবে দিবস পালিত হবে। যদিও এদিন সন্ধ্যার পর আইএফএ-র তরফে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, ভারত বনাম বাংলা নয়। ফুটবল ম্যাচটি হবে ভারতীয় একাদশের সঙ্গে আইএফএ একাদশের মধ্যে। উপস্থিত থাকবেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও প্রতিমন্ত্রী মনোজ জিওয়ারি।
|
শুভেন্দুর কটাক্ষ
বিজেপি অবশ্য আগাগোড়া ১৬ অগাস্ট দিনটিতে খেলা হবে দিবস না করে অন্য কোনও দিনে তা করার অনুরোধ করেছিল। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই অনুরোধ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিজেপির বক্তব্য, ১৬ অগাস্ট দিনটিতে জিন্নাহ-র ডাকে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসে ১৯৪৬ সালে কলকাতা সাক্ষী থেকেছিল ভয়াবহ দাঙ্গার। যাতে চার হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। যদিও এ সবে কর্ণপাত করেনি মা-মাটি-মানুষ সরকার। খেলা হবে দিবস বাংলার বাইরে কিছু রাজ্যে আয়োজনের উদ্যোগ তৃণমূল নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারী টুইটে লিখেছেন, ইতিহাস বা ভূগোল শেখানোর কোনও অধিকার নেই তৃণমূলের। এটা সেই দল যারা খেলা হবে দিবস এমন দিনে করছে যা খুব খুব গর্বিত করবে লর্ড কার্জন ও জিন্নাহকে। রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গকে দ্বিতীয় বাংলাদেশে পরিণত করতে চায় বলেও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
প্রয়াত চিন্ময়
এদিকে, খেলা হবে দিবসের প্রাক্কালে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে আজকের দিনটি দুঃখের দিন। কিংবদন্তি গার্ড মুলার যেমন প্রয়াত হয়েছেন, তেমনই আজ আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। তিনি ১৯৭৬ থেকে ৭৯ ও ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ অবধি ইস্টবেঙ্গলে খেলেছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮১ অবধি ছিলেন মহমেডান স্পোর্টিংয়ে। তাঁর প্রয়াণে শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, বিশিষ্ট ফুটবলার চিন্ময় চ্যাটার্জির প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ রহড়ার বাড়িতে প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। চিন্ময়বাবু দীর্ঘদিন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান ক্লাব ছাড়াও জাতীয় দলে রাইট সাইড ব্যাক ও স্টপার হিসাবে খেলেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১৫ সালে 'বাংলার গৌরব' সম্মানে ভূষিত করেছে। তাঁর প্রয়াণে ক্রীড়া জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি চিন্ময় চ্যাটার্জির আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের গভীর শোকপ্রকাশ করে পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের সমবেদনা জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীও।