মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম বিতর্কসভা: ট্রাম্প-হিলারি দ্বৈরথের পাঁচটি সেরা মুহূর্ত
গত সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কের হেম্পস্টিডের হফস্ত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ-বছরের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম বিতর্কসভা অনুষ্ঠিত হল। নাটকীয়তায় জমজমাট এই নিৰ্বাচনী বছরে এই প্রথম মুখোমুখি হলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন।
বিতর্কসভায় দুই প্রার্থীই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দিশা, নীতিনির্ধারণ, ইত্যাদি নানা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তবে, ব্যক্তিগত পর্যায়েও এই বিতর্কসভায় যথেষ্ট বিনোদন মজুত ছিল।
আসুন একবার চোখ বোলানো যাক এই বিতর্কসভায় হওয়া ট্রাম্প-হিলারির দ্বৈরথের উপর:
"ট্রাম্প নিজের জগতেই থাকেন আর প্রলাপ বকেন"
তিনি নাকি কর্মনাশা বাণিজ্য নীতিকে সমর্থন করেন। হিলারির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অন্তত তিনি বলেন তাঁর প্রতিপক্ষ সব ব্যাপারেই তাঁকেই দোষারোপ করে থাকেন। "পাগলের প্রলাপ," কটাক্ষ হিলারির। ট্রাম্প অবশ্য চুপ থাকার পাত্র নন। আমি যদি চাই আমাদের দেশের সংস্থাগুলি তাদের হারানো টাকা ফেরত পাক, তাতে পাগলামির কী আছে, পাল্টা জানতে চান এই ধনকুবের ব্যবসায়ী প্রার্থী।
"হিলারি, আপনি আপনার ডিলিট করে দেওয়া ইমেলগুলোর কথা আমাদের জানান, আমিও আমার আয়করের হিসেব দেব"
হিলারি ক্লিনটনের রাষ্ট্রসচিব থাকাকালীন তাঁর দপ্তরের ইমেল ডিলিট হওয়া নিয়ে এবারের নির্বাচনের বাজার সরগরম। অন্যদিকে, ট্রাম্পের আয়করের হিসেব নিয়েও তাঁর প্রতিপক্ষরা সরব। এই দু'টি বিষয়কে চমৎকার ভাবে জুড়ে দেন ট্রাম্প এদিনের বিতর্কসভায়। তিনি বলেন যদিও অডিট চলার কারণে তিনি তাঁর আয়করের হিসেব এতদিন দেননি, কিন্তু তিনি তা জনসমক্ষে আনতে পারেন যদি হিলারি তাঁর বিতর্কিত ইমেলগুলির কথা আম জনতাকে জানান।
উত্তরে হিলারি স্বীকার করেন যে ইমেল সার্ভার ব্যবহার করা তাঁর ভুল হয়েছিল। কিন্তু পাশাপাশি এও বলেন যে অডিটের জন্যে আয়করের হিসেব দিতে পারবেন না, এমন কোনও বাধ্যবাধ্যকতা একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর নেই। বরং, ট্রাম্প ভয় পেয়েই নিজের আয়করের হিসেব দেখাচ্ছেন না।
"ওবামার জন্ম-সংক্রান্ত বিতর্কের জন্যে হিলারিই দায়ী"
বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা জন্মগতভাবে মার্কিনি নন, এমন মন্তব্য করে ট্রাম্প ক'দিন আগে এক বিতর্কের জন্ম দেন। কিছুদিন আগে অবশ্য "ওবামা মার্কিন নাগরিকই" বলে অবস্থান আমূল বদলে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প বল হিলারির করতে ঠেলে দেন। এবার তাঁর বক্তব্য, ওবামার জন্ম নিয়ে প্রশ্ন হিলারির নির্বাচনী প্রচার দলই তোলে -- ২০০৮ সালে -- যেবার ডেমোক্র্যাট শিবিরে ওবামার প্রতিপক্ষ ছিলেন হিলারিই।
ট্রাম্প বলেন ওবামার জন্মস্থান যে হাওয়াই, তা নিয়ে তাঁর কোনও সন্দেহ নেই। বরং, এই ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে তিনি চান কর্মসংস্থান, মার্কিন-মেক্সিকো সম্পর্ক কিংবা জঙ্গিবাদের মতো ব্যাপারগুলির উপর মনোনিবেশ করতে চান। হিলারি ট্রাম্পকে পাল্টা জবাবে বলেন যে ওবামা সম্পর্কে এই ধরনের প্রসঙ্গ উত্থাপন আখেরে ট্রাম্পের "বর্ণবিদ্বেষী" দিকটিই তুলে ধরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি আদতে মার্কিন নাগরিক নন, ট্রাম্পের এই অবস্থান যথেষ্ট আপত্তিজনক বলে হিলারি জানান।
মার্কিন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে কে বেশি যোগ্য?
এই বিষয়ে ট্রাম্প এবং হিলারি, দুই পক্ষই একে অপরকে দুষতে থাকেন। ট্রাম্প বলেন বিচারবুদ্ধির খাতিরে তিনি হিলারির থেকে অনেক বেশি যোগ্য। "আমি জানি কিভাবে জিততে হয়," বলেন তিনি। হিলারিও ছাড়ার পাত্রী নন। "যিনি একটি টুইট পড়েই উত্তেজিত হয়ে পড়েন, তাঁর পরমাণু কোডের ধারেকাছে থাকা উচিত নয়," বলে কটাক্ষ প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডির।
"ট্রাম্প ১১২টি দেশ একনাগাড়ে ভ্রমণ করুন, বিশ্বজুড়ে নানা দায়িত্ব পালন করুন, তারপর স্ট্যামিনা নিয়ে কথা বলুন"
ট্রাম্পকে বেশ কয়েকবার শোনা গিয়েছে হিলারির শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে খোঁটা দিতে। এদিনের বিতর্কসভাতেও তিনি ফের বলেন যে হিলারি ক্লিনটন শারীরিকভাবে সুস্থ নন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো। তার জবাবেই হিলারি উক্ত মন্তব্যটি করেন। পররাষ্ট্রসচিব থাকাকালীন হিলারি সারা বিশ্বজুড়ে এত ঘুরেছিলেন যে ২০১২ সাল নাগাদ উনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। "আমি যা করেছি তা ট্রাম্প করে দেখান আগে," মন্তব্য ৬৮ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট নেত্রীর।
অবশ্য শেষ করার আগে দুই প্রার্থীই জানান যে আগামী ৮ই নভেম্বরের নির্বাচনে হারজিত যাই হোক, তাঁরা মানুষের পছন্দকে সম্মান জানাবেন।