শুরু হতে চলেছে বুলেট ট্রেনের কাজ যা বদলে দেবে ভারতে রেলযাত্রার ধারণা, খুঁটিনাটি জেনে নিন আগেভাগেই
বৃহস্পতিবার মুম্বই-আহমেদাবাদ হাইস্পিড রেল প্রকল্পের ভিত্তপ্রস্তর স্থাপন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
ভারতে সুরক্ষিত রেলযাত্রার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আসতে চলেছে বুলেট ট্রেন। আগামী বৃহস্পতিবার মুম্বই-আহমেদাবাদ হাইস্পিড রেল প্রকল্পের ভিত্তপ্রস্তর স্থাপন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ভারত-জাপান যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প তৈরি হতে চলেছে যা আগামিদিনে ভারতে রেলযাত্রার ধারণা বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেমন হবে এই প্রকল্প, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
কর্মসংস্থান তৈরি
এই বুলেট ট্রেনের প্রকস্প তৈরি করতে অন্তত ২০ হাজার নির্মাণ কর্মী প্রয়োজন হবে। একবার বুলেট ট্রেন চলতে শুরু করলে তা সচল রাখতে ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে সরাসরি নিয়োগ হবে ৪ হাজার শ্রমিক। এর পাশাপাশি ১৬ হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে।
নগরোন্নয়ন
হাই স্পিড রেল ট্র্যাক তৈরি করে ট্রেন চালালে তাতে শুধু নাগরিকদের সুবিধা হবে তাই নয়, পাশাপাশি নগরোন্নয়নের কাজেও তা অনুঘটকের কাজ করবে। বিভিন্ন স্টেশনকে কেন্দ্র করে ব্যবস্থা উন্নত হয়ে উঠবে।
যোগাযোগের সুবিধা
হাই স্পিড রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে তুলবে। ভ্রমণ করা অনেক সহজ হবে। ব্যবসায়িক এলাকা, বিমানবন্দরের মতো জায়গার কাছাকাছি দিয়ে এই রেল পরিষেবা যাবে। খুব তাড়াতাড়ি বোর্ডিং হবে ও দ্রুত আপনি গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।
সময় বাঁচবে
মুম্বই-আহমেদাবাদ হাই স্পিড রেল যাত্রায় সময় লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা। যেটা এমনি এক্সপ্রেস ট্রেন বা গাড়িতে গেলে লাগে ৮ ঘণ্টা। ফলে সময় চার ভাগের তিন ভাগ কমে যাবে।
বিশ্বাসযোগ্যতা
হাইস্পিড ট্রেন এমনি ট্রেনের চেয়ে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও স্বয়ংসম্ভর। এই ট্রেনে ওয়েটিং লিস্টের ব্যাপার নেই। টিকিট কাটতে পারলে সিট নিশ্চিত।
বুলেট ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা
মুম্বই-আহমেদাবাদ রুটে ঘণ্টায় তিনটি করে হাইস্পিড ট্রেন চলবে। পরে তা বাড়িয়ে ঘণ্টায় ৮টি করা হবে বলে খবর। এই মুহূর্তে দৈনিক ৪০ হাজার যাত্রী হলেও ২০৫৩ সালে তা বেড়ে দৈনিক ১ লক্ষ ৫৬ হাজার যাত্রী হয়ে যাবে। এবং প্রতিটি ট্রেনে ৭৫০ জন করে যাত্রী সফর করতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে।
জাপানি ডিজাইন
জাপানি সিনকাসেন ডিজাইনে এই ট্রেনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। পঞ্চাশ বছরেও এই ট্রেনে একজন যাত্রীর-ও প্রাণহানি হয়নি। ভূমিকম্প এলে আগে থেকেই ট্রেন থেমে যাবে। এই সিস্টেম এদেশে এলে তা যাত্রী পরিষেবায় আধুনিকতা নিয়ে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
জ্বালানি ও শক্তি বাঁচবে
হাইস্পিড রেল সিস্টেম চালু হলে জ্বালানি ও সময় দুটোই বাঁচবে। বিমানের থেকে এতে জ্বালানি লাগে তিন ভাগ কম। এবং গাড়ির চেয়ে এতে জ্বালানি বাঁচে পাঁচগুণ বেশি।
পরিবেশগত গুনাগুন
মুম্বই-আহমেদাবাদ বুলেট ট্রেন প্রকল্পে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা অনেক কম হবে। বিমানে যতটা কার্বন নিঃসরণ হয় তার চেয়ে চারগুণ কম কার্বন নিঃসরণ হবে। এবং গাড়ির সাত ভাগের দুই ভাগ কার্বন নিঃসরণ হবে। ফলে এই রেল পরিষেবা পরিুশ্রুত শক্তির অন্যতম উদাহরণ হিসাবে সামনে আসবে।
প্রকল্পের খরচ
বুলেট ট্রেন পরিষেবা চালু করতে ভারতের সঙ্গে জাপানের চুক্তি হয়েছে। জাপানের শিনজো আবে সরকার ভারতকে ৮৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ঋণ হাতে পাওয়ার ১৫ বছর পর থেকে সুদ দিতে হবে। যা মাসে ৭-৮ কোটি টাকার মতো হবে।
হাইস্পিড রেল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
হাইস্পিড রেল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট তৈরি হয়েছে ভদোদরায়। এখানে ট্রেনের স্টাফদের ট্রেনিং দেওয়া হবে। পরে তাদের কাজে লাগানো হবে। পাশাপাশি জাপানে নিয়ে গিয়েও অনেককে উন্নতমানের ট্রেনিং দেওয়া হবে।