ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই, বলতে গিয়ে গলা ধরে এল যুবরাজের
বর্ন ফাইটার যুবরাজ সিংয়ের কাহিনী বরাবারই অন্য রকম।
বর্ন ফাইটার যুবরাজ সিংয়ের কাহিনী বরাবারই অন্য রকম।
২০ মার্চ ২০১১। বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে মাঠেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যুবি। ব্যাট করার সময় আচমকাই বমি করতে শুরু করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের তৎকালীন পোস্টার বয়। কোনো মতে নিজেকে সামলে ব্যাট হাতে খেলতে নেমে ১২৩ বলে ১১৩ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংসও খেলেছিলেন পাঞ্জাব তনয়। সেই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন যুবরাজ সিং।
এর পরের এক বছর ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন যুবি। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এই দুঃসংবাদ চাউর হতেই হতাশায় ভেঙে পড়েন যুবি ফ্যানরা। কিন্তু ভাঙেননি ক্রিকেটার নিজে। রাশিয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ ছ-মাস ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পর মনের জোরে আবারও ক্রিকেটে ফিরে এসেছিলেন যুবি। সবাইকে চমকে দিয়ে ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে কামব্যাক করেছিলেন এই বাঁ-হাতি। সেই টুর্নামেন্টেও ব্যাটে বলে কামাল করেছিলেন যুবরাজ।
সোমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণার মুহূর্তে ফেলে আসা সেই কঠিন সময়কে স্মরণ করেন যুবরাজ সিং। বলতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। যুবির গলা ভারী হতেই কেঁদে ফেলেন তাঁর বহু ভক্ত ও অনুরাগী। আবেগ সামলে যুবরাজ বলেন, নিজের উপর কখনও বিশ্বাস হারাননি তিনি।
ভারতীয় দলে প্রবেশ
২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবির আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারতীয় ক্রিকেট দলে প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন যুবরাজ সিং। তাঁকে এই সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচের পর ম্যাচে তাঁর উপর আস্থা রাখার জন্য ভারতের তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং নির্বাচকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুবি।
আইডেলের সঙ্গে
ছোট বেলা থেকেই মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরকে নিজের আইডল মনে করতেন যুবরাজ সিং। সেই ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এত বছর খেলা এবং তাঁর সঙ্গে বিশ্বকাপ শেয়ার করতে পেরে নিজেকে ধন্য বলে মনে করেন যুবি।
সেরা কোচ
ক্রিকট বিশ্ব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিনায়কত্বের সময়কার কোচ জন রাইটের সঙ্গে ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের কোচ গ্যারি কার্স্টেনের তুলনা করলেও দ্বিতীয় জনকেই পার্সোনাল ফেভারিট বেছে নিয়েছেন যুবরাজ সিং।
ধোনি ও তিনি
২০০৭-র টি-টোয়েন্টি ও ২০১১-র ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিত্বের সংঘাত আছে বলে জিগির তুলেছিল সমালোচকদের একাংশ। কিন্তু বিদায় বেলায় ধোনিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অধিনায়ক বেছে সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন যুবরাজ সিং।
বন্ধুত্ব
ভারতীয় দলে খেলার সময় বীরেন্দ্র শেহবাগ, হরভজন সিং, জাহির খান, আশিষ নেহেরা, মহম্মদ কাইফের সঙ্গে বন্ধুত্ব তাঁর জীবনের সম্পদ বলে জানিয়েছেন যুবরাজ।
১০ হাজার রানের থেকেও বিশ্বকাপ জরুরি
ওয়ান ডে , টেস্ট ও টি-টোয়েন্ট মিলে ভারত ক্রিকেট দলের হয়ে ৪০২টি ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেন যুবি। সব ধরনের ফর্ম্যাট মিলিয়ে যুবরাজের ঝুলিতে রয়েছে দশ হাজারের বেশি রান। কিন্তু সেই পাহাড় প্রমাণ রানের থেকেও তাঁর কাছে টি-টোয়েন্টি ও ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে ক্রিকেট মাঠে নামতে পারার মতো বড় অনুভূতি আর কিছু নেই বলেই মনে করেন যুবি।
টেস্টে যুবরাজ
এমন একটা সময়ে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটে এসেছিলেন যখন টেস্টে দাপিয়ে খেলেছেন দেশের চার রথি অর্থাৎ সচিন, সৌ রভ, দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণ। সেই জিনিয়াসদের ভিড়ে টেস্টে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের মিডিল অর্ডারে তাঁর জায়গা হতো না। তবুও ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুবরাজের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল। সেই দিনটি এবং বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর করা সর্বোচ্চ ১৬৯ রানের ইনিংসের কথা তিনি আজীবন মনে রাখবেন বলে জানিয়েছেন যুবি।
কেন অবসর
৩৭ বছরে এসে ফর্মে না থাকা যদি তাঁর অবসরের অন্যতম কারণ হয়, তবে অন্য কারণ সুযোগ না পাওয়া। একথা বলে যুবরাজ কাদের দিকে ইঙ্গিত করছেন, তা অনেকেই বুঝতে পারছেন।
অবসরের পর
তিনি ক্রিকেট ছাড়লেও ক্রিকেট হয়তো তাঁকে ছাড়বে। তাই এই খেলার সঙ্গে তিনি যুক্ত থাকবেন। একই ক্যান্সার নিয়ে সচেতনা বৃদ্ধিও তাঁর অন্যতম কাজ হবে বলে জানিয়েছেন যুবরাজ সিং।