ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় - এই ৫টি বিষয় কিন্তু ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে থাকল
সদ্য সমাপ্ত ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ একদিনের ম্যাচের সিরিজে ভারতের ৫ টি নেতিবাচক বিষয়।
প্রথম তিম ম্যাচে তুল্যমূল্য লড়াই করার পর ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ একদিনের ম্যাচের সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে মুম্বইয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর তিরুবন্তপুরমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২১১ বল বাকি থাকতে ৯ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে ভারত। ঘরের মাঠে সহজেই ৩-১ ফলে জিতে নিয়েছে সিরিজ।
আপাত দৃষ্টিতে দেখলে এই সিরিজে ভারতে জন্য সবকিছুই বেশ ভাল গিয়েছে। কিন্তু এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। শেষ দুই ম্যাচের বিশাল জয় কার্পেটের মতোই দলের অনেক ফুটোফাটা ঢেকে দিয়েছে। আগামী বছরই একদিনের বিশ্বকাপ। এই দুর্বলতাগুলি রয়ে গেলে কিন্তু ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার ময়দানে সমস্যায় পড়তে হবে ভারতকে। মাইখেল বেঙ্গলি জয়ের সেই কার্পেট সরিয়ে সিরিজে ভারতীয় দলের সেই দুর্বলতাগুলি বের করে আনল।
শিখর ধাওয়ানের বিস্ময়কর অফ-ফর্ম
লাল বলের ক্রিকেটে শিখর ধাওয়ান আপাতত দলের পরিকল্পনা থেকে ছিটকে গেলেও একদিনের দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ শিখর। এশিয়া কাপে দুর্দান্ত খেলার পর এই সিরিজে শিখরের কাছ থেকে ভারতীয় দলের বিপুল প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু কোনও এক অদ্ভূত কারণে গোটা সিরিজেই সেভাবে চলল না শিখরের ব্যাট। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ওয়ানডেতে কিন্তু তুনু ভাল শুরু করেছিলেন (২৯, ৩৫ ও ৩৮)। কিন্তু সেই রানগুলো বড় রানে পরিণত করতে পারেননি। ৫ ইনিংসে মাত্র ২২ গড়ে তিনি ১১২ রান করেছেন। আশা করা যায় টি২০ সিরিজে ধাওয়ান আবার তাঁর ফর্ম ফিরে পাবেন।
ধোনির ব্যাটে রান-খরা অব্যাহত
উইকেটে পিছনে তাঁর ক্ষিপ্রতার প্রমাণ বারে বারে মিলেছে সিরিজে। কিন্তু ব্যাটে ৩ ইনিংসে তাঁর রান মাত্র ৫০! পুনেতে তৃতীয় ওডিআই ম্যাচে ভারত যখন বিপদে পড়েছিল তাঁর কাছ থেকে আরও একটি ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস আশা করা হয়েছিল। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনাল-সহ অতীতে যেমনটা তিনি অনেকবার কতরে দেখিয়েছেন। কিন্তু প্রাক্তন অধিনায়ক পারেননি। টি-টোয়েন্টি দল থেকে সম্প্রতি তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী কয়েক মাসে তাঁর হাতে বিশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ নেই। ধোনির ব্যাটিং ফর্ম অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্টের গভীর উদ্বেগের কারণ।
চাহালের স্ট্রাইক-রেটের পতন
সিরিজের প্রথম ৩টি ম্যাচে খেলে যুজবেন্দ্র চাহাল ৫ উইকেট নিলেও তিনি কিন্তু প্রচুর রান দিয়েছেন। এই সিরিজে তাঁর স্ট্রাইক-রেট ছিল ৩৬। তার চেয়েও উদ্বেগের বিষয় এশিয়া কাপ থেকেই কিন্তু তাঁর উইকেট শিকারের ক্ষমতা যথেষ্টই কমেছে। ইংল্যান্ড সফর থেকে গত ১১ টি ওডিআই ম্যাচে এই ভারতীয় লেগ স্পিনারের উইকেটের সংখ্যা মাত্র ১৩। পাশাপাশি, তাঁর ফিল্ডিং নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জাদেজার উত্থানে প্রথম এগারোতে কিন্তু তাঁর জায়গা এখন আর সুনিশ্চিত নেই।
সাদা বলে ব্যর্থ উমেশ যাদব
এই সিরিজে আবারও প্রমাণ হয়ে গেল উমেশ যাদব সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে মানানসই নন। নিঃসন্দেহে টেস্ট বোলিং আক্রমণের তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু সাদা বলে বল করতে আসলেই তিনি গাদাগুচ্ছের রান দিয়ে বসেন। সিরিজের ২ ম্যাচে তাঁর রেকর্ড ৬৪-০ ও ৭৮-১। তিনি বিশ্বকাপের প্রথম দলের পরিকল্পনায় না থাকলেও ভূবি-বুমরাদের কেউ হঠাত চোট পেলে ভারতকে তাঁর দিকে তাকাতে হতে পারে। কাজেই এবার বোঝহয় সময় এসেছে একদিনের ক্রিকেটে অন্য কোনও জোরে বোলারকে তৈরি করার।
ডিআরএস নিয়ে ভারতের জুয়া
পুরো সিরিজেই ডিআরএস নিয়ে রীতিমতো জুয়া খেলেছে ভারত। বেপরোয়াভাবে রিভিউ নিয়েছে কোহলি ব্রিগেড। তৃতীয় ওয়ানডেতে চন্দ্রপল হেমরাজের বিরুদ্ধে চতুর্থ ওভারে তারা একমাত্র রিভিউটি নষ্ট করে। গোটা সিরিজেইস ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ওপেনার রান পাননি। ভারতের অন্তত তাঁর বিরুদ্ধে রিভিউ নষ্ট করা উচিত হয়নি। প্রত্যাশিতভাবেই ওই রিভিউ নষ্টের কিছু পরেই তিনি আউট হয়ে যান। চতুর্থ ওয়ানডেতেও একই ঘটনা দেখা গিয়েছে। বুমরা রিভিউ নষ্ট করেন কিয়েরন পাওয়েলের বিরুদ্ধে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলে এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তগুলো বড় হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু কোনও শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তা বড় ভুল হয়ে দেখা দিতে পারে। মাথায় রাখতে হবে ৫০ ওভারের ফর্ম্যাটে প্রতিটি দলের জন্য কিন্তু একটি করেই অসফল রিভিউ বরাদ্দ রয়েছে।
অর্থাত দেখা যাচ্ছে ওডিআই সিরিজের সবটাই ভারতের জন্য ইতিবাচক ছিল না। বেশ কিছু জায়গা রয়েছে যেগুলি বিশ্বকাপের আগে ভারতকে সংশোধন করতে হবে। আশা করা যায় টিম ম্যানেজমেন্ট এই দুর্বলতাগুলিকে জয়ের কার্পেটের তলাতেই রেখে দেবেন না।