ভারত বেঙ্গালুরুতে অস্বস্তিতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালেই গড়বে কোন নয়া নজির? প্রথম একাদশে পরিবর্তন আসন্ন?
আইপিএলের পর একঝাঁক তারকাহীন সিরিজও জমজমাট। দিল্লি ও কটকে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশাখাপত্তনম ও রাজকোটে বড় জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজ ২-২ করেছে ঋষভ পন্থের ভারত। বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও কাল বেঙ্গালুরুতে হাইভোল্টেজ ম্যাচের প্রহর গুনছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ভারত চেনা ছন্দ ফিরে পেয়েছে, কাল নামবে ফেভারিট হিসেবেই। অন্যদিকে, সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচে চূড়ান্ত একাদশ বাছতে হিমশিম খাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
নজিরের হাতছানি
রাজকোটে দক্ষিণ আফ্রিকা টি ২০ আন্তর্জাতিকে তাদের সবচেয়ে কম স্কোরে অল আউট হয়ে গিয়েছিল। অথচ এই সিরিজেই প্রথম ম্যাচে সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতার নজিরও গড়ে প্রোটিয়ারা। বেঙ্গালুরুতে কাল ভারত জিতলে এই প্রথম দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টি ২০ সিরিজে হারানোর নজির গড়তে পারবে মেন ইন ব্লু। ২০১৫ সালে ভারত সফরে এসে তিন ম্যাচের টি ২০ আন্তর্জাতিক সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিল ২-০ ব্যবধানে। ধরমশালা ও কটকে জেতার পর কলকাতার ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছিল। ভারতের মাটিতে ২০১৯ সালের সফরে এসে টি ২০ আন্তর্জাতিক সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র রাখতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেবার ধরমশালায় প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ার পর মোহালিতে ভারত জিতেছিল। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে ১৯ বল বাকি থাকতে ৯ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ছাড়া ২০১৬ সালে টি ২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়াংখেড়েতেও ভারতকে ৪ রানে হারায় প্রোটিয়ারা।
ফেভারিট ভারতের খামতি
এবার অবশ্য লড়াই অন্যরকম। শেষ দুটি ম্যাচ জিতে ভারত ছন্দ ফিরে পেয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশাখাপত্তনম ও রাজকোটে পুরো ২০ ওভারও ব্যাট করতে পারেনি। ভারতীয় বোলাররা রয়েছেন দারুণ ছন্দে। তবে ব্যাটিংয়ে উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে অস্বস্তির কারণ ঋষভ পন্থের ফর্ম এবং তিনি যেভাবে আউট হচ্ছেন সেই বিষয়টি। তেমনই টি ২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়ার লক্ষ্যে নিজেদের দাবি জোরালো করতে বেঙ্গালুরুতে নিজেদের প্রমাণ করতে মুখিয়ে থাকবেন শ্রেয়স আইয়ার ও ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। আসন্ন টি ২০ বিশ্বকাপে ঋতুরাজের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু মিডল অর্ডারে শ্রেয়স আইয়ারকেও বড় পরীক্ষাই দিতে হবে। শ্রেয়স চলতি সিরিজে চারটি ম্যাচে মোট ৭৫ বল খেলে ৯৪ রান করেছেন। সর্বাধিক স্কোর ৪০। গড় ২৩.৫০, স্ট্রাইক রেট ১২৫.৩৩। ওপেন করতে নেমে ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ৪ ম্যাচে ৮৬ রান করেছেন। সর্বাধিক স্কোর ৫৭। গড় ২১.৫০, স্ট্রাইক রেট ১৪০.৯৮।
কঠিন কাজ প্রোটিয়াদের
দক্ষিণ আফ্রিকাকে অবশ্য ঘুরে দাঁড়াতে এবং এ দেশে টি ২০ আন্তর্জাতিক সিরিজে অপরাজেয় থাকতে হলে প্রভূত উন্নতি ঘটাতে হবে পারফরম্যান্সে। রাজকোটে কাগিসো রাবাডা ও ওয়েন পার্নেলের অভাব প্রকট হয়েছে ডেথ ওভারে। শেষ পাঁচ ওভারে ভারত ৭৩ রান তুলে ফেলে। অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে না পারলেও তাঁর অধিনায়কত্বের প্রশংসা অনেকেই করছেন। বাভুমা গতকাল ভুবনেশ্বর কুমারের বলে কাঁধের কাছে চোট পাওয়ার পর দ্রুত এক রান নিতে গিয়ে যেভাবে বেকায়দায় পড়ে যান তাতে তাঁর কনুইয়ে চোট লাগে। ম্যাজিক স্প্রে বা টেপ বেঁধেও তিনি ব্যাট ধরার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। ম্যাচের শেষেও তাঁর হাতে আইসপ্যাক দেখা গিয়েছে। ফলে বাভুমা কালকের ম্যাচে খেলতে না পারলে নেতৃত্ব দেবেন কেশব মহারাজ।
কেমন হবে একাদশ?
ভারত চলতি সিরিজের সব কটি ম্যাচেই একই দল খেলাচ্ছে। ফলে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙার কথা নয়। কিন্তু ম্যাচ চলাকালীন দেখা গিয়েছিল হর্ষল প্যাটেলের বুড়ো আঙুলের কাছে ব্যান্ডেজ বাঁধা। এরপর তাঁকে আর বল করতেও দেখা যায়নি। এর আগেও হর্ষলের হাতে এমন চোট লেগেছিল। তিনি বল করার মতো পরিস্থিতিতে না থাকলে ভারত উমরান মালিক বা অর্শদীপ সিংকে খেলাতে পারে। নচেৎ একই দল নামবে। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে বাভুমা খেলতে না পারলে রিজা হেন্ডরিক্সই ওপেন করবেন কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে। রাবাডা, পার্নেলরা খেলার জায়গায় থাকেন কিনা সেটাও দেখার। সবমিলিয়ে চাপে থাকা প্রোটিয়াদের সম্ভাব্য একাদশ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছেই।
ভারতের সম্ভাব্য একাদশ- ঈশান কিষাণ, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, শ্রেয়স আইয়ার, ঋষভ পন্থ (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), হার্দিক পাণ্ডিয়া, দীনেশ কার্তিক, অক্ষর প্যাটেল, হর্ষল প্যাটেল বা অর্শদীপ সিং, আবেশ খান, ভুবনেশ্বর কুমার, যুজবেন্দ্র চাহাল
দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাব্য একাদশ- কুইন্টন ডি কক (উইকেটকিপার), রিজা হেন্ডরিক্স বা তেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), ডোয়েইন প্রিটোরিয়াস, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, ডেভিড মিলার, হেনরিক ক্লাসেন, মার্কো জানসেন বা ওয়েন পার্নেল, কাগিসো রাবাডা, কেশব মহারাজ (বাভুমা না খেললে অধিনায়ক), আনরিখ নরকিয়া, লুঙ্গি এনগিডি বা তাবরেজ শামসি।