সেক্রেড গেমস ২ রিভিউ: 'বাপ অফ অল ওয়েব সিরিজ' আদৌও হতে পারল কি নওয়াজ-সইফের থ্রিলার
প্রতীক্ষার অবসান! শেষ পর্যন্ত ১৫ অগাস্ট ওয়েব মাধ্যেম আছড়ে পড়ল সেক্রেড গেমস ২ ঝড়! ঝড়, এই কারণেই যে,সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় কোনও ওয়েব সিরিজ নিয়ে এই পরিমাণে প্রত্যাশা তৈরি হয়নি।
প্রতীক্ষার অবসান! শেষ পর্যন্ত ১৫ অগাস্ট ওয়েব মাধ্যেম আছড়ে পড়ল সেক্রেড গেমস ২ ঝড়! ঝড়, এই কারণেই যে,সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় কোনও ওয়েব সিরিজ নিয়ে এই পরিমাণে প্রত্যাশা তৈরি হয়নি। পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ- নীরজ ঘাইওয়ান অ্যান্ড কোম্পানি আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন, রোমাঞ্চের প্যান্ডোরা বক্স নিয়ে সেক্রেড গেমস ২ হাজির হবে। হলও তাই, তবে সত্যিই কি সেকেন্ড গেমস ওয়ানকে ছাপিয়ে যেতে পারল দ্বিতীয় সিজন?
গল্প-
প্রথম সিজনে মুম্বই পুলিশের সরতাজ সিংকে ২৫ দিনে বাণিজ্য নগরীকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে নেওয়ার টিপ দিয়েছিলেন গাইতোন্ডে। সেই ২৫ দিনের অবশিষ্ট ১২ দিনের গল্প নিয়েই সেক্রেড গেমস ২।রহস্যের গল্পে শেষটুকু বলতে নেই, সাসপেন্স ধরে রেখেই এতটুকু বলা যায়, তা হল মুম্বইয়ের ওপর নিউক্লিয়ার আক্রমণ হতে চলেছে। যা হিরোসিমা, নাগাসাকির থেকে অনেক গুণে বেশি বিধ্বংসী। কে, কেন এই নিউক্লিয়ার আক্রমণ করে মুম্বইকে নিয়ে ধ্বংসের খেলা খেলতে চাইছে? তার সঙ্গে গাইতোন্ডেরই বা সম্পর্ক কি? আর শেষ পর্যন্ত সরতাজ বোমা খুঁজে মুম্বইকে বাঁচাতে পারবে কিনা, সেই উত্তর জানতে ওয়েব সিরিজে চোখ রাখতেই হবে।
গ্যাংস্টার গাইতোন্ডে, তৃতীয় বাপ ও গুরুজি
দ্বিতীয় সিজনের শুরুতে গাইতোন্ডের দারুণ ধমাকাদার এন্ট্রি রয়েছে। শেষ সিজনের একটু রিক্যাপটা মনে করিয়ে দিলে নিশ্চয় মনে থাকবে কেউ বা কারা নিজের স্বার্থে জেল থেকে গাইতোন্ডেকে বার করে নিয়ে এসেছিল। সেই উত্তর দিয়েই দ্বিতীয় সিজনের প্রথম এপিসোড শুরু। এরপর তৃতীয় বাপ গুরুজির সঙ্গে দেখা হওয়া ও সিদ্ধিলাভ! আর এর পরই একের পর এক রহস্যের মায়াজাল। গাইতোন্ডের মুম্বইয়ের উপর অশনিসংকেতের কালো ছায়া। শেষটায় কী করবে গাইতোন্ডে, গুরুজিই কি তবে আসল ভিলেন!
চিত্রনাট্যের ফাঁকফোকড় দেখে দর্শকদের মনে অনেক প্রশ্ন দানা বাঁধছে
পরিচালক অনুরাগ আগেই বলেছিলেন এবারের গল্প বেশ জটিল। চিত্রনাট্যে প্রতি এপিসোডেই সংলাপের চমক রয়েছে। যা প্রথম সিজনেও ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সিজনের চিত্রনাট্য দর্শকদের মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে। একটি এপিসোডে দেখানো হয়েছে, নিজের জীবন নিয়ে তৈরি সিনেমা মুক্তির অনুষ্ঠানে গোইতোন্ডের মতো সর্বশক্তিমান গ্য়াংস্টার মুম্বই ফিরেছেন। সেটাও ছদ্মবেশে! গাইতোন্ডের মেকআপ, নিজের জীবন নিয়ে সিনেমা তৈরি! এসব পাগলামিগুলো চিত্রনাট্যে অনেকটা জল ঢেলে দিয়েছে। প্রথম সিজনের মতো সেই জমাটিই ব্যাপারটা মিসিং। আরও রয়েছে, বাতিয়ার চরিত্রের আসল কাজ কি? সেটাই বোঝা গেল না। গুরুজি...আশ্রম...গাইতোন্ডের আশ্রমজীবন...এসব দেখাতে গিয়ে থ্রিলারের প্যাডেল থেকে কখন যে পরিচালকের পা'টা সরে গিয়ে, গল্পের গাড়ির গতি থমকে গিয়েছে অনুরাগ নিজেই তা বুঝতে পারেননি!
তবে গাইতোন্ডের জেল ফেরত জীবন ও বর্তমান ২০১৭ সালে মুম্বইয়ের উপর নিউক্লিয়ার আক্রমণের আশঙ্কা! বর্তমান ও ফ্ল্যাশব্যাকে দুই ভিন্ন সময়কালকে একই সঙ্গে বলে যাওয়ার ক্ষেত্রে চিত্রনাট্যের প্রশংসা প্রাপ্য।
অভিনয়
প্রথম সিজনে কুক্কু, কাটেকর, অঞ্জলি মাথুর মারা গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় সিজনে তারা নেই। বদলে যারা এসেছেন, একের পর এক ধামাকা দিয়েছেন। কেনিয়ার র এজেন্ট কে ডি যাদবের চরিত্রে আমৃতা সুভাষ দ্বিতীয় সিজনের সেরা আবিষ্কার। গাইতোন্ডের চরিত্র নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। চরিত্র ও নাওয়াজকে যেন আলাদা করা যায়নি। এবার যে তিন চরিত্রের কথা প্রধান, গুরুজির চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠী।
কেন তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে দ্বিতীয় নওয়াজ বলা হচ্ছে বুঝিয়ে দিলেন পঙ্কজ। 'মিরজাপুরের গ্যাংস্টার' এখানে 'আপাত শান্ত গুরুজি'-র চরিত্রে প্রতিটি দৃশ্যায়নেই চমকের পর চমক দিয়েছেন। সিজন দুইয়ের তাঁর অভিনয় দীর্ঘদিন মনে থেকে যাবে। সইফ, নাওয়াজ, পঙ্কজদের মতো স্টারেদের ভিড়ে সন্ত্রাসবাদী শাহিদ খানের চরিত্রে নীরবেই যেন এক টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দিয়েছেন রণবীর শোরে। সুরভিন চাওলাও জোজোর চরিত্রে ছাপ ফেলে গেলেন। গুরুজির ডানহাত বাতিয়ার চরিত্রে কাল্কি মানান সই। আর সরতাজ! প্রথম এপিসোডের থেকে দ্বিতীয় এপিসোডে যেন নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন।
কেন দেখবেন
প্রথম সিজন দেখে থাকলে ভারতীয় এই ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় সিজন না দেখাটা অন্যায় হবে। শেষটা জানতে অবশ্যই দেখতেই হবে 'সেক্রেড গেমস ২'। তবে প্রথম সিজনের উত্তেজনার পারদকে দ্বিতীয় সিজন ছাপিয়ে যাবে, এই আশা রেখে দেখতে বসলে হতাশ হবেন! গল্পে অল্প জল না ঢুকলে ভারতীয় হিন্দি ওয়েব সিরিজের মধ্যে এটি কিন্তু 'বাপ অফ অল' হতে পারত! সেক্ষেত্রে এই সিরিজেরই প্রথমটি অর্থাৎ সেক্রেড গেমস ১ -ই 'বাপ অফ অল ইন্ডিয়ান ওয়েব সিরিজ'-এর তকমা ধরে রাখল।