সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি নিয়ে সরকারের নয়া গাইডলাইনকে স্বাগত জানালেন ‘তান্ডব’ পরিচালক
সোশ্যাল মিডিয়া আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী এবার থেকে ত্রিস্তরীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে। দেশে যেখানে লক্ষাধিক মানুষ অনলাইনে বিভিন্ন পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত, সেখানকার ধূসর অঞ্চলকে বাগে নিয়ে আসতেই এ ধরনের নির্দেশিকা নিয়ে আসা হয়েছে। সরকারের এই নির্দেশিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিতর্কিত ওয়েব শো তাণ্ডবের পরিচালক আলি আব্বাস জাফর।
জানুয়ারি মাসে মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছিল সইফ আলি খান অভিনীত 'তাণ্ডব’। হিন্দুধর্মকে অপমানের অভিযোগ তুলে হিন্দুত্ববাদের ঝাণ্ডাধারীরা রক্তচক্ষু দেখিয়েছিলেন ওয়েব সিরিজের নির্মাতাদের। এর ফলে নড়েচড়ে বসেছিল কেন্দ্র সরকারও। আলি আব্বাস জাফর বলেন, 'জানুয়ারি মাসে আমাদের শো তাণ্ডব এঠিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায়। আমাদের পরিশ্রমের ফল এবং অন্যান্য সিনেমার মতোই এই ছবিটি দর্শক কীভাবে গ্রহণ করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। যদিও শোটি সম্প্রচার হওয়ার পরই সমাজের কিছু অংশের মানুষ নির্দিষ্ট কিছু দৃশ্যের জন্য আপত্তি তোলেন। সেই সময় আমরা নিজেদেরকে গ্রেফতারি থেকে বাঁচাতে মরিয়া ছিলাম। সেই সময় নির্দেশিকাগুলি উপস্থিত থাকলে তা দ্বিগুণ উদ্দেশ্যে কাজ করত। কি অনুমোদিত হবে আর কোনটা অনুমোদিত নয় সেগুলি নিজেরাই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম এবং দ্বিতীয়ত সেই সময় নির্দেশিকা থাকলে আমাদের এত দৌড়াদৌড়ি করতে হত না। তাই আমি সম্পূর্ণ মন থেকে স্ব-নিয়ন্ত্রক নির্দেশিকাকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
তাণ্ডবের পরিচালক এও বলেন, 'সমানভাবে মনোযোগ দেওয়ার মতো বিষয়টি হল যে সরকার গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান হিসাবে সমালোচনা, ভিন্নমত পোষণ করা এবং তার নিজস্ব মতামত অর্জনের প্রতিটি ভারতীয়ের অধিকারকে শক্তিশালী ও সম্মান করার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কাজ করে চলেছে। একটি বৃহৎ এবং অনন্য উন্মুক্ত সমাজ হওয়ায়, ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন আমাদের স্বাধীনতা ছড়িয়ে পড়েছিল তখন আমরা যে পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি, তার যে কোনও প্রতিকূলতা রোধ করা জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়ার অবব্যবহার বিশ্বজুড়ে সকলেরই চিন্তার কারণ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়া সহ অন্য দেশগুলিও এই ইস্যুর ওপর বহু তর্ক–বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতেও এই বিষয়ের ওপর বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা ও বহু পরামর্শের পর খসড়া বিধি ঘোষণা করা হয় বৃহস্পতিবার। দ্রুত এটি পড়ার পর, বেশিরভাগ বিধানগুলি আমায় বেশ চিন্তায় ফেলেছে।’
পরিচালক বলেন, 'উদাহরণস্বরূপ, সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিতে অভিযোগ নিরসন প্রক্রিয়া তৈরি করার বাধ্যবাধকতা একটি উত্তম পদক্ষেপ, কারণ এটি ব্যবহারকারীদের অভিযোগের সময়সীমাবদ্ধ নিরসন নিশ্চিত করবে এবং এমন ব্যবহারকারীদের অধিকার রক্ষা করবে যারা এখনও অবধি এইরকম আশ্বাস গ্রহণ করেনি। ব্যবহারকারীদের মর্যাদা রক্ষা, বিশেষ করে মহিলাদের, এই ক্ষেত্রটিকে আমি স্বাগত জানাই। এই বিধানগুলি মহিলাদের জন্য প্ল্যাটফর্মটিকে নিরাপদ করে তুলতে অনেক এগিয়ে যাবে, যা স্বাস্থ্যকর কথোপকথন এবং সত্যই একটি সুস্থ সমাজের জন্য প্রয়োজনীয়।’
তাণ্ডবের পরিচালক এও বলেন, 'অবশেষে ওটিটি, যে ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমি এসেছি, আমার কোনও দ্বিধাবোধ নেই এটা বলতে যে নিয়মাবলীগুলি একটি স্ব-নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াটি প্রবর্তন করার পথে বিপ্লবী উদ্যোগ, যা ইন্ডাস্ট্রি বহুযুগ ধরে অপেক্ষারত ছিল। এই নিয়ন্ত্রক ত্রিস্তরীয়। প্রথমত, একটি পৃথক প্রকাশক দ্বারা স্ব-নিয়ন্ত্রণ, এটা কাজ না করলে দ্বিতীয় স্তর, যেখানে প্রকাশকরা তাদের স্ব–নিয়ন্ত্রিত কমিটি গঠন করেছেন, এই দু’টি প্রক্রিয়া যদি ব্যর্থ হয় তবে তৃতীয় স্তরে মন্ত্রকের অন্তর্গত প্রক্রিয়া অবশ্যই কাজে দেবে।’ আলি আব্বাস এও বলেন, 'এটি একটি খুব বন্ধুত্বপূর্ণ, হস্তক্ষেপহীন, অ-বিদ্বেষমূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং আমি আমাদের কন্টেন্ট স্রষ্টাদের কথা চিন্তাভাবনা করার জন্য সরকারের প্রশংসা করি।’