পিকেকে ফিরিয়ে দেওয়া কি কংগ্রেসের বুমেরাং হবে, ২০২৪-এর জোট সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন
পিকেকে ফিরিয়ে দেওয়া কি কংগ্রেসের বুমেরাং হবে, ২০২৪-এর জোট সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন
২০২৪-এর নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে শুধু বিরোধী জোট করলেই হবে না, কংগ্রেসকেও শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে ফের পুরুজ্জীবনের প্রস্তাব নিয়েই কংগ্রেসের দুয়ারে হাজির হয়েছিলেন ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু প্রশান্ত কিশোর শেষপর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেননি। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, পিকেকে ফিরিয়ে দেওয়া কি কংগ্রেসের কাছে বুমেরাং হবে?
মোদী-শাহের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে
প্রশান্ত কিশোর ভারতীয় রাজনীতি এই মুহূর্তে খুবই উজ্জ্বল এক নাম। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে গেম-চেঞ্জার হয়ে উঠেছেন। ২০১৪ সালে তিনি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন। ২০২২-এ এসে তিনিই মোদী-শাহের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইছেন। সেইজন্যই তিনি বিরোধীদের কংক্রিট জোট চাইছেন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে। চাইছেন কংগ্রেসকে শক্তিশালী করে তুলতে।
কংগ্রেস কি লাভবান হত পিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলে?
সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রশান্ত কিশোর এখন জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসকে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কংগ্রেসকে জাতীয় রাজনীতিতে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার জন্য ৬০০ স্লাইডের প্রস্তাবনা দেন। সেই প্রস্তাবনার সঙ্গে বহু ক্ষেত্রে কংগ্রেস এতমত হলেও প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা হল না। এক্ষেত্রে বারবার উঠে এসেছে কংগ্রেস কি লাভবান হত পিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলে? নাকি কংগ্রেস পিতে ছাড়াই বেশি লাভবান হবে?
প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ দিয়ে যে ভূমিকা চেয়েছিলেন
প্রশান্ত কিশোর তাঁর প্রস্তাবনায যেমন কংগ্রেসের নেতৃত্ব বদলের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তেমনই কোন রাজ্য কংগ্রেসের চলার পথ কী হবে, কোন রাজ্যে কংগ্রেস একলা চলবে, কোন রাজ্যে জোট করে চললে লাভবান হবে, তার একটা রূপরেখাও দেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ দিয়ে যে ভূমিকা নিতে চেয়েছিলেন, তা মনঃপুত হয়নি কংগ্রেসের।
পুরনো সহযোগীদের এড়িয়ে নতুন জোটসঙ্গী চয়নের প্রস্তাব
প্রশান্ত কিশোর ২০২৪-এর নির্বাচনে কংগ্রেসকে এমন কিছু দলের সঙ্গে জোট গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা মেনে নিতে পারেনি হাইকম্যান্ড। প্রশান্ত কিশোর কিছু ক্ষেত্রে পুরনো সহযোগীদের এড়িয়ে নতুন জোটসঙ্গী হিসেবে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস, কে চন্দ্রেশখর রাওয়ের টিআরএস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, গতবার কংগ্রেস জোটসঙ্গী হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুকে বেছে নিয়েছিল, আদতে তার কোনও লাভ হয়নি।
কংগ্রেসকে বিরাট মাইলেজ দিতে পারত পিকের প্রস্তাব
অঙ্কের বিচারে তৃণমূল, টিআরএস ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে সঙ্গে নিলে কংগ্রেসের লাভ। কিন্তু কোন সমীকরণে তাদের সঙ্গে জোট হবে, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। তৃণমূল, টিআরএস ও ওয়াইএসআর কংগ্রেস নিজেদের রাজ্যে এতটাই শক্তিশালী যে তারা কংগ্রেসকে বিরাট মাইলেজ দিতে পারে। পিকের প্রস্তাব অনুযায়ী কংগ্রেসের নেতৃত্বে সেই জোট ফলপ্রসূ হবে। কিন্তু সমস্যা হল বাস্তবায়ন।
উত্তরপ্রদেশ বাদে প্রায় সমস্ত বড় রাজ্যই কভার করতে
এটাও ঠিক যে প্রশান্ত কিশোর যদি কংগ্রেসে যোগ দিতেন, তাহলে বাংলায় তৃণমূল, তেলেঙ্গানায় টিআরএস ও অন্ধ্রপ্রদেশ ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়া সহজ হত। বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস-জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার দিকে এগিয়ে যেত। কংগ্রেসের সঙ্গে ডিএমকে, আরজেডি ও জেএমএমের সম্পর্ক ভালো। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ও এনসিপির সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক। আর উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাটে এককভাবে শক্তিশালী কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশ বাদে প্রায় সমস্ত বড় রাজ্যই কভার হয়ে যেত প্রশান্ত কিশোরের প্রস্তাবে।
কংগ্রেসের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হতে পারত পিকে-যোগে
প্রশান্ত কিশোর বিহারে আরজেডিকে ছেড়ে একক লড়ার পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা এই জোট সমীকরণের পরিপন্থী। প্রশান্ত কিশোর জোটের ব্যাপারে একা সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। আবার তিনি সরাসরি হাইকম্যান্ডের সঙ্গে বিশেষ করে কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে চেয়েছিলেন। বাকি শীর্ষনেতাদের মধ্যে তাতে ঘোরতর আপত্তি ছিল। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে পথ চলা হল না। তাতে একদিকে জোট গড়ার ক্ষেত্রে ক্ষতি হল, আবার অন্যদিকে কংগ্রেসের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হতে পারত, সেটা আপাতত বন্ধ হল।
ভবিষ্যৎই বলবে কংগ্রেসের লাভ না ক্ষতি পিকেকে নিয়ে সিদ্ধান্তে
এখন দেখার কংগ্রেসে যোগ না দিলেও প্রশান্ত কিশোরকে এবং প্রশান্ত কিশোরের প্রস্তাবকে কোনও কাজে লাগায় কি না কংগ্রেস। কংগ্রেসের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বারবার অন্তরায় হয়ে দেখা দিচ্ছে, যে নেতৃত্বহীনতা তৈরি হয়েছে, তার নিষ্পত্তি ঘটে কি না। প্রশান্ত কিশোর বোঝাতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে জোট অনিবার্য, তা শেষপর্যন্ত অনিশ্চিত হয়ে গেল। কংগ্রেস মনে করছে সামনে গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে। এখন ভবিষ্যৎই বলবে কংগ্রেসের লাভ না ক্ষতি হল এই সিদ্ধান্তে।
রাজ্যের মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালত আবমাননার রুল জারি কলকাতা হাইকোর্টের