কেন ভাইয়ের হাতে রাখী পরিয়ে দেয় বোনেরা? এর তাৎপর্য, ইতিহাস, রীতি জানুন সবকিছু
কেন ভাইয়ের হাতে রাখী পরিয়ে দেয় বোনেরা?
ভারতে খুব বড় করে পালন করা হয় রাখী বন্ধন উৎসব। মূলতঃ ভাই–বোনের মধ্যেকার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতেই এই উৎসবের আয়োজন। রাখী, রাখী বন্ধন উৎসব নামে পরিচিত এটি শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালন করা হয়। আসুন জেনে নিই রাখী উৎসব পালনের পেছনে থাকা ইতিহাস, বিধি, তারিখ সহ আরও অনেককিছু।
কেন রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়
ভাই ও বোনের মধ্যেকার বন্ধনকে সম্মান জানানোর জন্যই এই রাখী উৎসব পালন করা হয়। বোন ভাইয়ের হাতে পবিত্র সুতো, যাকে রাখি বলা হয়, তা বেঁধে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে। ভাইয়ের সুরক্ষা ও বোনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় রীতি পালনের মধ্য দিয়ে ভাইয়ের ডানহাতে এই রাখী পরায় বোন।
রাখী পূর্ণিমার তারিখ
শ্রাবণ মাসের পূর্ণ চন্দ্র অর্থাৎ পূর্ণিমা তিথিতে এই রাখী পূর্ণিমা পালন করা হয়। এ বছর রাখী বন্ধন উৎসব ২২ অগাস্ট রবিবার পালন করা হবে।
রাখী বন্ধনের ইতিহাস
এই উৎসব নিয়ে বহু প্রচলিত কাহিনী শোনা যায়। রাখী বন্ধন উৎসবে ভাইবোনের মধ্যেকার স্বর্গীয় সম্পর্ক উদযাপন করা হয়। এ নিয়ে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় কাহিনী হল দ্রৌপদী ও শ্রী কৃষ্ণের। প্রসঙ্গত, পাণ্ডবদের সময় ঘটে যাওয়া একটি আকর্ষণীয় ঘটনা রাখীর তাৎপর্য এবং ইতিহাস ব্যাখ্যা করে। শোনা যায়, রাজসূর্য যজ্ঞ করার পর রাজা যুধিষ্ঠির তাঁর সাম্রাজ্যের রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থকে রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা পর পাণ্ডব ভগবান কৃষ্ণকে তাঁদের সমর্থন ও আশীর্বাদ করার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে আমন্ত্রণ করা হয়। প্রতিবেশী সব রাজ্যের রাজা ও অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের জ্ঞাতিভাই শিশুপালও। শিশুপাল কৃষ্ণের প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং যুধিষ্ঠিরের দরবারে তাকে অপমান করেন। শিশুপাল পাপের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে শাস্তি দেওয়ার জন্য শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সুদর্শন চক্র ছেড়ে দেন শিশুপালের দিকে। চক্রটি তীব্র গতিতে শ্রীকৃষ্ণের হাতে যখন ফিরে আসে তখন তাঁর আঙুল কেটে যায়। কৃষ্ণকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখার পর দ্রৌপদী তাঁর কাপড়ের একটি অংশ ছিঁড়ে শৈশবকালের বন্ধুর ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন। দ্রৌপদীর এই কাজই তাঁকে সারাজীবনের মতো শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ লাভ করিয়ে দেয়। আর তাই তো পাণ্ডবরী যখন দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষার্থে ও জনসমক্ষে দ্রৌপদীকে অপমান করার হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি তখন কৃষ্ণই দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন। শত্রুদের হাত থেকে দ্রৌপদীকে নিরাপত্তা দেন কৃষ্ণ।
রাখী কতদিন পরে থাকা যায়?
রাখী পরে থাকার কোনও নির্দিষ্ট সময় বা তারিখ কিছু সেভাবে কোথাও উল্লেখ নেই। এই উৎসবের পর ভাইয়েরা তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী যখন খুশি রাখী খুলে ফেলতে পারেন।
কোন হাতে রাখি পরানো হয়?
ভাই বা দাদার ডানহাতে রাখী পরানো হয়।
রাখীর সময় ভাইকে কোনদিকে বসতে হয়?
রাখী পরানোর সময় ভাইকে সবসময় পশ্চিম দিক করে বসতে হবে। তবে এই রীতি বিভিন্ন প্রদেশে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
রাখী বন্ধন উৎসবে রাখী বাধার রীতি কী?
প্রথমে ভাইয়ের কপালে তিলক দিতে হবে, এরপর অক্ষত (চাল)। এরপর ভাই তাঁর মাথা কোনও কাপড় দিয়ে ঢাকবে। এরপর গোটা নারকেল ভাইকে উপহার হিসাবে দেবে বোন। এরপরই বোন ভাইকে রাখী পরাবে। এই রীতির পর বোন ভাইকে মিষ্টি খাওয়াবে এবং বোন সব ধরনের ক্ষতিকর জিনিস থেকে বাইকে সুরক্ষিত রাখতে আরতি করবে।
এ বছর রাখীর শুভ–অশুভ সময়
রাখী বন্ধন বা রাখী পরানোর সময় ২২ অগাস্ট সকাল ৬টা ১৫ থেকে বিকেল ৫টা ৩১ পর্যন্ত। তবে রাখী পরানোর সেরা সময় শুরু হচ্ছে দুপুর ১টা ৪২ মিনিট থেকে এবং তা থাকবে বিকেল ৪টে ১৮ মিনিট পর্যন্ত। তবে যদি কোনওভাবে তা না হয়ে ওঠে তাহলে প্রদোস কালেও আপনি রাখি পরাতে পারেন।
মানুষকে অবশ্যই ভাদ্র সময় এড়িয়ে চলতে হবে, যা সাধারণত পূর্ণিমার দিনের প্রথমার্ধে পড়ে।
ভাদ্র পঞ্চ-দুপুর ২.১৯ থেকে ৩.২৭
ভাদ্র মুখ-দুপুর ৩.২৭ থেকে বিকেল ৫.১৯
ভাদ্র শেষ-সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটে