কোচবিহারে রেকর্ড ভোটে জয় তৃণমূলের, শক্তিবৃদ্ধি করে দ্বিতীয় বিজেপি
তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায় তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হেমচন্দ্র বর্মনকে পরাজিত করলেন ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ২৪১ ভোটে। হারলেও এই কেন্দ্রে উত্থান হল বিজেপির। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নৃপেন্দ্রনাথ রা
কোচবিহার, ২২ নভেম্বর : কোচবিহারেও সবুজ ঝড়। এই কেন্দ্রেও রেকর্ড গড়ে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী। তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায় তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হেমচন্দ্র বর্মনকে পরাজিত করলেন ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ২৪১ ভোটে। হারলেও এই কেন্দ্রে উত্থান হল বিজেপির। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নৃপেন্দ্রনাথ রায় নেমে গেলেন তৃতীয় স্থানে। কংগ্রেসের দশা আরও করুন হল কোচবিহারে। এই জয়ের পর বিজয়ী প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায় বলেন, প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভোটে জিতব বলছিলাম। সেই ফলই হয়েছে। এই জয় প্রমাণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের দরদ উত্তরোত্তর বাড়ছে।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল। তৃণমূলের বিজয়রথ আটকে দিতে পারে বিজেপি, এমন একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল এই কেন্দ্রে। কারণ জেলার রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা চালিয়েছিল বিজেপি।আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থনও আদায় করে নিতে পেরেছিল তারা। সেদিক থেকে বিচার করেই বিজেপিই তৃণমূলের মূল প্রতিযোগী হয়ে উঠেছিল।
এদিন ভোটের ফলাফলেও তা প্রকাশ পেয়েছে। তৃণমূল ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে ঠিকই, এই কেন্দ্রে বিজেপি-র দ্বিতীয় হয়ে ওঠা অন্যমাত্র দেবেই। নিছক দ্বিতীয় হয়ে ওঠাই নয়, এক লাফে বিজেপি-র ভোট অনেকটাই বেড়েছে এখানে।
২০১৬ সালে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায় ভোট পেয়েছেন ৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ৩৭৪। বিজেপি প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মন ভোট পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ১১৩, সেখানে বামফ্রন্ট প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩৯২ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৩৬৩। উল্লেখ্য ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের রেণুকা সিংহ পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৯৯ ভোট। আর বিজেপি হেমচন্দ্র বর্মন পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৫৩ ভোট। তৃণমূলের ২ লক্ষ ৭০ হাজার ভোট বেড়েছে, তেমনই বিজেপিও পাল্লা দিয়ে ভোট বাড়িয়েছে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার। বিজেপি-র এই ভোট বৃদ্ধি তৃণমূলের মাথাবাথ্যার কারণ হতে বাধ্য।
সাংসদ রেণুকা সিংহের মৃত্যুর কারণে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ৮৭ হাজার ভোটে বাম প্রার্থী দীপক রায়কে পরাজিত করেছিলেন রেণুকাদেবী। এবার দীপক রায়ের পরিবর্তে বামফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন নৃপেন্দ্রনাথ রায়। এই ফলাফল নিশ্চিত কোচবিহারে তৃণমূল কোমর ভেঙে দিয়েছে বাম ও কংগ্রেসের।
গত বিধানসভা ভোটে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাথাভাঙা, কোচবিহার-দক্ষিণ, শীতলখুচি, সিতাই, দিনহাটা, নাটাবাড়ি বিধানসভা আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। কোচবিহার-উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় ফরওয়ার্ড ব্লক। গত লোকসভা ভোটে এই সাত বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। আবারও সেই ধারা বজায় রইল। এবারও আরও মজবুত হল জয়ের ভিত।
নোট বাতিলের জেরে মানুষের দুর্ভোগ এক্ষেত্রে অনেকটাই তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বামেরা একই ইস্যুতে একইসঙ্গে বিজেপি-তৃণমূলকে বিঁধলেও মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। বিজেপির আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত ভোট-বাক্স ভরিয়ে তুলবে, তা তো হয়ইনি, উল্টে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগও সে অর্থে কাজ করেনি।