পাকিস্তানে বন্যা থেকে ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প - বছরভর যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে
পাকিস্তানে বন্যা থেকে ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প - বছরভর যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে
বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে বিশ্বজুড়ে ভয়ঙ্কর সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেই চলেছে। উন্নত দেশ হোক অথবা অনুন্নত দেশ - প্রকৃতির ভয়াল প্রকোপ থেকে বাঁচতে পারছে না কেউই। কোথাও ভূমিকম্প, কোথাও বন্যা, কোথাও ভূমিধস, কোথাও মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, কোথাও বা ঘূর্ণিঝড় - একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। কোন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা নাড়া দিয়ে গেল ২০২২ সালে, দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
আফগানিস্তানের ভয়াবহ বন্যা
আফগানিস্তানে ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এবং যার জেলে ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই বন্যা এবং ভূমিধসে ১৮২ জনের প্রাণ যায়। তার কিছুদিন আগেই আফগানিস্তানে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। তারপরে এই এই বন্যা দেশটিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
পূর্ব আফ্রিকায় খরা
আফ্রিকার বহু দেশে খরার সংকট বিদ্যমান। পূর্ব আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে ২০২২ সালে ভয়ঙ্কর খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যাকে রাষ্ট্রপুঞ্জ গত চার দশকের সবচেয়ে ভয়ংকর খরা বলে তকমা দিয়েছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ভুগেছেন। না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন কয়েকশো মানুষ। ২০২৩ সালেও এই এলাকায় খাবার এবং জলের চরম সংকট দেখা দেবে বলেও বিশেষজ্ঞরা আগে থেকে অনুমান করেছেন।
ব্রাজিলে বন্যা
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের পেট্রোপোলিসে ভয়ংকর বৃষ্টির ফলে ভূমিধস দেখা দেয়। পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসা কাদা এবং মাটির স্রোতে কয়েকশো মানুষের প্রাণ যায়। সেই ভয়ংকর বন্যা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্রাজিলের সেই এলাকার মানুষের বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প
ইন্দোনেশিয়ায় নভেম্বর মাসে ৫.৬ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প অনূভূত হয়। যার ফলে কমপক্ষে ৩৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। যদিও বেসরকারি মতে এই সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। ইন্দোনেশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার একটি দেশ। যার ফলে সেখানে নিয়মিত হারে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
অসমের বন্যা
ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্য অসমে প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যা হয়। এবছরও তার অন্যথা হয়নি। এবছরের বন্যায়ও অসমে প্রায় ২০০ জন মানুষের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। প্রতিবছর মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি এবং মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ফলে ব্রহ্মপুত্র নদীর আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। যার ফলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। গত কয়েক বছরে এই বন্যার ভয়াবহতা আরও বেড়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বন্যা
দক্ষিণ আফ্রিকায় এবছর ব্যাপক বৃষ্টির ফলে ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এবং প্রায় ৫০০ জনের কাছাকাছি মানুষের এতে প্রাণ গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সেই ঘটনার কয়েক মাস কেটে গেলেও এখনও বহু মানুষ গৃহহীন। এমনকী বহু মানুষের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে।
পাকিস্তানে বন্যা
পাকিস্তানে এবছর ব্যাপক বন্যা হয়েছে। যা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। এই বন্যায় প্রায় ২ হাজার জনের কাছাকাছি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। যদিও বেসরকারি মতে এই সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। এই বন্যার জল পুরোপুরি নামতে পাকিস্তানের কিছু এলাকায় কয়েক মাসের বেশি সময় লেগেছে।
সোমালিয়ায় খরা
আফ্রিকার অন্যতম দরিদ্র দেশ সোমালিয়ায় এবছরও ব্যাপক খরার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দেশটিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০ লক্ষের বেশি মানুষ সেদেশে ক্ষুধার জ্বালায় ভুগছেন। তাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন। এবং মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। যার ফলে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে সবরকমভাবে সোমালিয়ার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।
কঙ্গোয় বন্যা
আফ্রিকার আর একটি দেশ কঙ্গো আবার বন্যায় ভেসে গিয়েছে। সেদেশে ব্যাপক বন্যায় অন্তত দেড়শো জনের মৃত্যু হয়েছে। এমনকী বহু মানুষকে বন্যার পরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই বন্যার ফলে সেদেশের সরকার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। বন্যা এবং তার পরে ভূমিধসে কঙ্গোর বিস্তীর্ণ এলাকা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়েছে।