যে কোনও মহূর্তে চাকরি হারানোর আশঙ্কা, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী ছাঁটাইয়ের নেপথ্যে কোন কারণ
যে কোনও মহূর্তে চাকরি হারানোর আশঙ্কা, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী ছাঁটাইয়ের নেপথ্যে কোন কারণ
সংবাদের শিরোনামে বার বার উঠে আসছে কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর। প্রবল মানসিক চাপে রয়েছেন প্রযুক্তি সংস্থার কর্মীরা। মাইক্রোসফট থেকে অ্যামাজন, টুইটার থেকে মেটা একাধিক আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করেছে। যেটা এতদিন স্বপ্নের চাকরি ছিল, সেটা এখন দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে উঠেছে। সারা বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি সংস্থার কর্মীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রবল মানসিক চাপে রয়েছেন। মেটার মতো সংস্থা বিশ্বজুড়ে ১১,০০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে, অ্যামাজন ১০,০০০ এর বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে এই আর্থিক সঙ্কটের কারণ কি?
করোনা মহামারীর প্রভাব
বিশ্ব জুড়ে আর্থিক সঙ্কট ও কর্মী ছাঁটাইয়ের নেপথ্যে রয়েছে করোনা মহামারীর। করোনা ভাইরাসের প্রকোপের জেরে দীর্ঘ লকডাউন। যার ফলে মানুষ আগের থেকে ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন। এরফলে ইন্টারনেটের সামগ্রিক ব্যবহারের চাহিদা বেড়ে যায়। করোনা মহামারীর লকডাউনের পর একাধিক সংস্থা গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে ব্যাপক পরিমাণে নিয়োগ করে। অন্যদিকে, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে মানুষ বাইরে বের হতে শুরু করে। যার ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহার সামগ্রিকভাবে কমে যেতে শুরু করে। সংস্থাগুলো চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে সংস্থাগুলো মোটা বেতনের কর্মী নিয়োগ করেছিল। ব্যাপকভাবে নিয়োগ করেছিল যে সব সংস্থা, তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়ে।
মন্দার ভয়
ইন্টারনেটের চাহিদা লকডাউনের সময় বেড়ে গেলে, পরবর্তীকে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অন্যদিকে, সংস্থাগুলোর ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। যার জেরে সংস্থাগুলো আর্থিক মন্দার ভয় পেতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে সংস্থাগুলো অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের প্রকল্প কমিয়ে, কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছে। যাতে সংস্থাগুলোকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে না হয়।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ
বিশ্বে আর্থিক মন্দার নেপথ্যে অনেকাংশে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ কখনও প্রত্যক্ষ ভাবে তো কিছু ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে আর্থিক মন্দার নেপথ্যে রয়েছে। ইউক্রেনে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে রাশিয়া বিশেষ সামরিক অভিযান চালায়। রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জেরে কৃষ্ণ সাগরে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিত তরী যাতায়ত একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ইউক্রেনের কৃষিপণ্যের ওপর বেশ কিছু দেশ সরাসরি নির্ভর করে। কিন্তু ইউক্রেন সেই সময় কোনও খাদ্যশষ্য রফতানি করতে পারে না। যার জেরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হতে থাকে। রাষ্ট্রসংঘ খাদ্য সঙ্কটের সতর্কতা জারি করে। যা অনেকাংশ বিশ্বের আর্থিক মন্দার কারণ।
বিশ্বের একাধিক দেশে মুদ্রাস্ফীতির জের
বিশ্বের একাধিক দেশে মুদ্রাস্ফীততি ও আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়। শ্রীলঙ্কা প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তান, মায়ানমারে মুদ্রাস্ফীতি দেখতে পাওয়া গিয়েছে। ভারতেও মুদ্রাস্ফীতি এক বছর ধরে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। পশ্চিমি দেশগুলোর একাধিক নিষেধাজ্ঞার জেরে রাশিয়াতে অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রবল সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। এছাড়া ব্রিটেনে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্রিটেনের আর্থিক সঙ্কটের নেপথ্যে অনেকাংশে ব্রেক্সিট দায়ী। আমেরিকাতেও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়িয়েছে। যার জেরে একাধিক সংস্থার ব্যয় বেড়েছে। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে অনেক সংস্থা কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটেছে।