প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্য্যে মুখরিত কালিম্পংয়ে কথা বলে কাঞ্চন ও ইতিহাস
সাবেক কালিম্পংয়ে অকৃত্রিম প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যের সঙ্গে ইতিহাসের মিশেল
কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা কালিম্পং-কে বাংলার অন্যতম গর্ব। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সঙ্গে সাবেক ঐতিহ্যের মিশেল এই স্থানকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মেঘের রাজ্যে ডুব দেওয়া থেকে ঘন জঙ্গলে হারিয়ে যেতে হলে কালিম্পংয়ে কমপক্ষে দুই দিন থাকতেই হবে পর্যটকদের। ঘুরে দেখতে হবে পাহাড়, বনানী ও ইতিহাস। করোনা পরবর্তী পুজোয় যে এই পাবর্ত্য শহরে মানুষের ভিড় বাড়বে, তা বলার প্রয়োজন আছে কি! তাই আগেভাগে হোটেল বুক করে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
অবস্থান ও গুরুত্ব
শৈল শহর দার্জিলিং থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত কালিম্পং, সমুদ্রতল থেকে ১২৫০ মিটার বা ৪১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। জিটিএ-র অন্তর্গত এই পার্বত্য শহরকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। তাই এই এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। মেঘে মোড়া এই শহরের অন্যতম আকর্ষণ এক গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস। তিব্বতের সঙ্গে যে সিল্ক রুটের মাধ্যমে ভারতের সংযোগ, সেই পথের শুরুটা হয় কালিম্পং থেকে। কালিম্পং এবং সিকিম হয়ে তিব্বতমুখী জেলালা পাস দুই দেশের অন্যতম ব্যবসায়ীক সংযোগ সেতু বলা চলে।
কীভাবে পৌঁছবেন
কলকাতা থেকে ট্রেন, বাস বা বিমানে প্রথমে পৌঁছতে হবে শিলিগুড়িতে। সেখান থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে পৌঁছে যাওয়া যায় কালিম্পং। যাত্রাপথের সময় তিন ঘণ্টার বেশি দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়। তবে বর্ষাকালে শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পংয়ে পৌঁছতে আরও একটি ঘণ্টা বেশি সময় লাগতে পারে। সম্প্রতি ভূমি ধসের মাত্রা বেড়ে যাওয়া পর্যটকদের সতর্ক হয়েই ট্যুর প্ল্যান করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
কী কী দেখবেন
আকাশ স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার থাকলে কালিম্পং থেকে স্পষ্ট দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। করোনা ভাইরাসের জেরে লক ডাউনে কল-কারখানা বন্ধ থাকার জন্য দূষণের মাত্রা কমে যাওয়ায় বাংলার এই শৈল শহর থেকে কাঞ্চনের শোভা আরও মনোরম হয়েছে। অন্যদিকে কালিম্পংয়ের অন্যতম আকর্ষণ এই এলাকার অন্যতম প্রাচীন তথা ঐতিহ্যবাহী থারপা চোলিং মনাস্ট্রি, থংগা মনাস্ট্রি। ব্রিটিশ রাজত্বের ঐতিহ্য বহন করা ক্রকেটি বাংলো এবং দ্য আর্মি গল্ফ ক্লাব দেখতে পর্যটকরা কোনও ভুলচুক করেন না। ১৯৮৬ সালে তৈরি হওয়া নেওরাভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের সবুজ বণানী এবং বন্যপ্রাণ দেখতে ভিড় জমান অনেকে। সুন্দরী তিস্তা কালিম্পংয়ে বড়ই ভয়ঙ্কর। তারই একধারে শান্ত-নিরিবিলে আবহে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভগ্নপ্রায় বাড়িও বাঙালি পর্যটকদের ভীষণভাবেই টানে।
কখন যাবেন
ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা এবং জুলাইয়ের বর্ষাকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় পৌঁছে যাওয়াই যায় কালিম্পংয়ে। একেক মরশুমে এই এলাকার সৌন্দর্য্য একেক রকম হয়। পর্যটকদের থাকার জন্য যে এখানে বিবিধ ব্যবস্থা রয়েছে, তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।