বুনো গন্ধ গায়ে মেখে ঘুরে আসুন কোচ রাজাদের মৃগয়াক্ষেত্র চিলাপাতা জঙ্গল
বুনো গন্ধ গায়ে মেখে ঘুরে আসুন কোচ রাজাদের মৃগয়াক্ষেত্র চিলাপাতা জঙ্গল
ঘন গভীর জঙ্গল বলতে যা বোঝায় চিলাপাতা জঙ্গল সেরকমই। ডুয়ার্সের যত গঙ্গল রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে গভীর বন বললে ভুল হবে না চিলাপাতাকে। এই জঙ্গলে পর্যটকদের ভিড়ও খুব বেশি হয় না। সেকারণেই হয়ত জঙ্গলের আদিমতা আরও বেশি করে অনুভূত হয়। ডুয়ার্স সফরে গিয়ে সকলে সবার আগে ছুটে যান গোরুমারা, জলদাপাড়া, হলং,জয়ন্তীতে। হঠাৎ করে চিলাপাতা ফরেস্টে খুব বেশি মানুষের আনাগোনা হয় না এখানে। ডুয়ার্সের এই জঙ্গলের যাত্রা অতি মনোরম, আদিম আর বন্যতায় ভরা।
চিলাপাতা জঙ্গল
ডুয়ার্সের অন্যতম বড় বনাঞ্চল এই চিলাপাতা ফরেস্ট। দীর্ঘ তার পরিসর। তোর্সা নদীর পাড়ে রয়েছে এই চিলাপাতা ফরেস্ট। এছাড়াও অনেক ছোট বড় নদী রয়েছে এই চিলাপাতা জঙ্গলে। কালাচিনি, বুড়িবসরা ও বেনিয়া নদী চিলাপাতার বুক চিরে বয়ে গিয়েছে। মাটির বন্য গন্ধ গায়ে মেখে চিলাপাতার গহীন জঙ্গলের সবটা একদিনে দেখে শেষ করা যায় না। এতটাই বড় এই জঙ্গল। গাইডরাও সব জায়গা ঘুরিয়ে শেষ করতে পারে না। পর্যটকদের সংখ্যাও এখানে অনেকটা কম।
চিলাপাতা জঙ্গলের ইতিহাস
চিলাপাতার জঙ্গলের একটা বড় ইতিহাস রয়েছে। এই জঙ্গলকে বলা হয়ে থাকে কোচ রাজাদের মৃগয়াক্ষেত্র। এখানে তাঁরা শিকার করতে আসতেন। কোচরাজার সেনাপতি ছিলেন চিল্লা। তিনি চিলের মতো ছোঁ মেরে শত্রু নিধন করতে পারতেন। তাঁর নামেই এই অরণ্যের নাম রাখা হয়েছিল চিলাপাতা। রেঞ্জ অফিস থেকে পারমিট করিয়ে তবে এই জঙ্গলে প্রবেশ করা যায়। সকাল ৫টা থেকে চলে জঙ্গল সাফারি। বিকেল ৫টায় শেষ সাফারি।
চিলাপাতার একাধিক বন্য জন্তুর দেখা মেলে
চিলাপাত ফরেস্ট এতটাই গভীর এমন অনেক জায়গা রয়েছে সেখানে সহজে আলো পৌঁছায় না। কোচ রাজাদের গড়ের ভগ্নাবশেষেরও দেখা মেলে সেখানে। গণ্ডার, হাতি, গাউরের মত একাধিক জন্তুর দেখা মিলবেই। হরিণ, বাইসন তো রয়েইছে। আবার বাঘ, িচতাবাঘেরও দেখা মিলতে পারে ভাগ্য সদয় থাকলে। চিলাপাতা জঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে নল রাজাদের গড়। সেটা ভগ্ন প্রায় দশা। কিন্তু গাইডরা সেই নল রাজাদের গড়ের কাহিনী শুনিয়ে দেবেন। জঙ্গলের মধ্যে সেই কাহিনী শুনলে আরও রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরি হবে।
বিশেষ প্রজাতির গাছের জন্য বিখ্যাত
চিলাপাতা জঙ্গলের আরেকটি বৈশিট্য হল বিখ্যাত রামগুয়া গাছ। এই গাছে আঘাত করলেই রক্তের ধারা বেয়ে আসে। সেই গাছ এখন বিপন্ন প্রায়। চোরাচালানের জেরে সেই গাছের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। চিলাপাতা জঙ্গের আরেকটি বৈশিষ্ট হল এটি কিং কোবরা সাপেদের আঁতুঘর। গাইডরাই বলে দেবেন সেকথা। কাজেই পর্যটকদের সবসময় সন্তর্পণে পা ফেলতে বলেন তাঁরা। ডুয়ার্সের যেকোনও জঙ্গলের তুলনায় অনেক বেশি আদিম চিলাপাতার জঙ্গল।