ভারতের যে পাহাড়ি রেলপথগুলি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা পেয়েছে
বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন স্থানগুলোকে সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা দিয়ে থাকে ইউনেস্কো। ভারতের বেশ কয়েকটি প্রাচীন ইতিহ্যবাহী স্থান যেমন, অজন্তা গুহা, ইলোরা গুহা, আগ্রা ফোর্ট এবং তাজমহল যেগুলির মধ্যে সবকটি স্থান রয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায়। ২০২২ সালে বাংলার মুকুটে এই সোনার পালক যুক্ত হয়েছে। ইউনেস্কোর 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' স্বীকৃতি পেয়েছে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। দেশের সঙ্গে গোটা বিশ্বে পূজিতা হবেন মা শক্তি। এই প্রতিবেদনে ভারতের তিনটি মাউন্টেন রেলওয়ের নাম তুলে ধরা হল, যা বিশ্ব জুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। ভারতের এই পাহাড়ি রেলওয়েগুলি ইউনেস্কো থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা পেয়েছে।
দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ে
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য রেলপথ। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে শৈলশহর দার্জিলিং পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ২ ফুট ন্য়ারো গেজ রেল পরিষেবা। এই রেল পথ ট্রয় ট্রেনের যতায়াত চলে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েটি ১৮৮১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের তত্তাবধানে তৈরি হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দার্জিলিং হিমালয়ান রেলকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। জঙ্গলের মধ্য় দিয়ে সমতল থেকে পাহাড়ের উদ্দেশ্য়ে রওনা দেয় টয় ট্রেন। ভারতের সবথেকে প্রাচীন পাহাড়ি রেলপথ এটি। শিলিগুড়ি জংশন থেকে ক্রমে ক্রমে সুকনা, রংটং, তিনধরিয়া, গয়াবাড়ি, মহানদী, কার্শিয়াং, তুং, সোনাদা, ঘুম হয়ে দার্জিলিং শহরে ঢোকে ট্রেন। যাত্রা পথে মনোরম জলবায়ু এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য যেন যাত্রার ক্লান্তিকে কোন ভাবেই কাছে ঘেষতে দেয় না। পাশাপাশি সবুজ গালিচায় মোড়া পাহাড়ের বুকে নজরে পড়ে চা পাতা তোলার ব্যস্ততা। মেঘে ঢাকা পাহাড় তার মধ্য দিয়ে কু ঝিক ঝিক, ব্যস আর কি চাই? এই সকল কারণে দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ের মাথায় বসান হয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মুকুট।
নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে
দক্ষিণ ভারতের মেট্টুপালাইয়াম থেকে উটি পর্যন্ত নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়েই ভারতে সবথেকে ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করে। পাহাড়ি এই রেলপথে যে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল করে, সেটির স্পিড ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার। নৈসর্গিক এই রেলপথে অনেক জায়গাতেই যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে দিব্যি ছবি তুলে ফের ট্রেনে উঠে যেতে পারেন এই রেলপথটিতে ১৬টি সুড়ঙ্গ এবং ২৫০টি ব্রিজ রয়েছে। ১৯০৮ সালে এই রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু করে। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পায় রেলপথটি। মেট্টুপালাইয়াম থেকে উটি যাওয়ার পথে কেল্লার, কুনুর, ওয়েলিংটনকে যুক্ত করেছে এই রেলপথ। নীলগিরি পর্বতের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ট্রেনের ছোট কামরায় বসে উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া যায়। পাহাড়ের কোলে চা বাগান, নিস্তরঙ্গ জলপ্রপাতের দৃশ্য যেন প্রকৃতির উপর তৈরি হওয়া পোট্রেট। ভারতের সবচেয়ে মনোরম রেলওয়ের ভ্রমণের অংশ। প্রতিটি ঋতুতেই যেন নতুন রূপে ধরা ধেয়, তবে বিশেষ করে বর্ষারানির আগমণে যেন প্রকৃতির নতুন খেলা দেখার সুযোগ মেলে এই পথে।
কালকা সিমলা রেলওয়ে
কলকা-সিমলা রেলওয়ে একটি ন্যারো গেজের ২ ফুট ৬ইঞ্চির রেলওয়ে। এটি উত্তর পশ্চিম ভারতের কলকা থেকে সিমলা ভ্রমণের পর্বতময় একটি রেলওয়ে। পাহাড়ি নৈসর্গিক দৃশ্য এবং ছবির মতন আশেপাশের গ্রামের জন্য এই রেলওয়ে বিখ্যাত। কালকা থেকে সিমলা যাওয়ার পথে ধর্মপুর, কুমারহাট্টি, সোলান, সালোগরা, কান্দাঘাট, শোগি সহ আরও বেশকয়েকটি জায়গাকে যুক্ত করেছে এই রেলপথ। ১৯০৩ সালে কালকা সিমলা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পায় এই রেলপথ। কালকা-সিমলা ভারতের নান্দনিক রেলপথগুলোর মধ্যে একটি। হিমাচল প্রদেশের পাহাড় এবং উপত্যকার বুক চিড়ে চলে যাওয়া এই পথে ভ্রমণ করা মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করার বারতি সুযোগ।
পাহাড়ে রেলপথ তৈরি করার উদ্দেশ্য হল পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে যাত্রা পথে উপভোগ করা। সবুজ বিস্তৃর্ণ গালিচা, পাইনরাশি, দেবদারুর সৌন্দর্য, জলপ্রপাত, পাহাড়ি গ্রাম্য জনজীবনের সঙ্গে পরিচিতি গড়ে তোলা।