রামেশ্বরমে ঈশ্বরিক রামসেতুর ইতিবৃত্তের পরতে পরতে জড়িয়ে নানা কাহিনি
মাতা সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিলেন রাবণ। সমুদ্র পেরিয়ে লঙ্কায় পৌঁছে যুদ্ধ করে রাবণকে হারিয়ে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করে আবার অযোধ্যায় ফিরেছিলেন রাজা রাম।
মাতা সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিলেন রাবণ। সমুদ্র পেরিয়ে লঙ্কায় পৌঁছে যুদ্ধ করে রাবণকে হারিয়ে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করে আবার অযোধ্যায় ফিরেছিলেন রাজা রামচন্দ্র। বাল্মীকি রচিত রামায়ণের প্রতি ছত্রে রয়েছে টানটান উত্তেজনা পূর্ণ কাহিনি। তারই এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, সাগরের বুকে রাম সেতু নির্মাণ। তার বিস্তৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
রাম সেতুর অবস্থান
কালের বিবর্তনে সমুদ্রের অতলে নিচে চলে যাওয়া পাথরে নির্মত সেতু সদৃশ পথের উৎপত্তিস্থল তামিলনাড়ুর পাম্বান আইল্যান্ডের দক্ষিণভাগে অবস্থিত ধনুশকোড়ি। সে পথের শেষ শ্রীলঙ্কার মান্নার আইল্যান্ডের তালাইমান্নার।
ইতিহাসের প্রথম ধাপ
বাল্মীকির রামায়ণে বর্ণিত, বনবাসে থাকাকালীন শ্রী রামচন্দ্রের স্ত্রী, মাতা সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কায় (শ্রীলঙ্কা) নিয়ে যান সেখানকার রাজা রাবণ। কথিত আছে, খুঁজতে খুঁজতে তামিলনাড়ু পৌঁছে শ্রী রাম জানতে পারেন যে তাঁর স্ত্রী লঙ্কার অধিপতির হাতে তাঁরই সাম্রাজ্যে বন্দি।
ইতিহাসের দ্বিতীয় ধাপ
পুরান মতে, মাতা সীতাকে উদ্ধার করতে আকুল হয়ে ওঠেন শ্রী রাম। তবে লঙ্কায় (শ্রীলঙ্কা) পৌঁছনোর জন্য সমুদ্র পেরোনো আবশ্যক। কিন্তু তা কী করে সম্ভব, চিন্তায় পড়ে যান শ্রী রাম। উপায় না দেখে জলের দেবতা বরুণের উপাসনা শুরু করেন রামচন্দ্র। তিন দিন ও তিন রাত্রি ধরে চলে উপাসনা। তাতেও জলদেবের উত্তর না পেয়ে, সমুদ্রে ব্রহ্মাস্ত্র মেরে লঙ্কা পৌঁছনোর পথ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন শ্রী রাম।
ইতিহাসের তৃতীয় ধাপ
পুরান মতে, সমুদ্রে ব্রহ্মাস্ত্র ছোঁড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে ভগবান রামচন্দ্রের সামনে হাজির হন দেবতা বরুণ। আশ্বাস দেন, সমুদ্রে সেতু তৈরিতে তিনি রামচন্দ্র ও তাঁর বানর সেনাকে সাহায্য করবেন। ওই বানর সেনারই অন্তর্গত দেবতা বিশ্বকর্মার সন্তান নালা ও সেনাপতি নীলাকে দিয়ে সেতু তৈরির পরামর্শও নাকি দেন দেবতা বরুণ। কারণ, ইশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য ওই দুই বানর জলে পাথর ফেললে নাকি তা ঢোবে না। সেই মতো সমুদ্রে পরপর পাথর ফেলে লঙ্কার দিকে এগোতো থাকেন শ্রী রাম। কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন নিলা। নালা গোটা ব্যাপারটা তদারক করেছিলেন বলে পুরানে বর্ণিত।
ইতিহাসের চতুর্থ ধাপ
পুরান মতে, সমুদ্রের বুকে ওই সেতু তৈরি করতে বানর সেনার পাঁচ দিন সময় লেগেছিল। এরপর লঙ্কায় পৌঁছে রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ করে শ্রী রাম, মাতা সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন বলে বাল্মীকির রামায়ণে বর্ণিত।
বর্তমান কাল
ঐতিহাসিক এই পাথরের সেতু আদৌ শ্রী রাম তৈরি করেছিলেন কিনা, তা নিয়ে তর্ক অব্যাহত। কালের বিবর্তনে সেই পাথরের পথ নাকি সমুদ্রের নিচে চলে গিয়েছে। পরে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে নাসা সহ বিভিন্ন সংস্থা। প্রত্যেক গবেষণা পত্রে যে সময়ের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তা রামায়ণ রচনার আশাপাশেই বলে ধরা হয়ে থাকে।
শ্রী রামচন্দ্রের সঙ্গে জুড়ে থাকা ভারতের ঐতিহাসিক স্থানগুলি কী কী, এক নজরে দেখে নিন