সমুদ্র-ম্যানগ্রোভের শোভায় বিকশিত হেনরি আইল্যান্ডে পর্যটকদের নিত্য আনাগোনা
সমুদ্র-ম্যানগ্রোভ বেষ্টিত সৌন্দর্য্যে বিকশিত হেনরি আইল্যান্ডে পর্যটকদের নিত্য আনাগোনা
শহুরে যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে ওঠা মানব-মন যখন চোখের আরাম ও হৃদয়ের আনন্দ খুঁজে বেড়ায়, তখন বেশি দূরে নয়, বাড়ির কাছ থেকেই ঘুরে আসা যায় নিরিবিলি হেনরি আইল্যান্ড। সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এই দ্বীপে পাবেন আদিগন্ত সমুদ্র, মৎস্য প্রকল্পের কানঘেঁষা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অপার নীরবতা। করোনা ভাইরাসের প্রভাব কমলে এক-দুই দিনের জন্য থেকে আসাই যায় এই সবুজ দ্বীপে। যার সঙ্গী বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জ।
অবস্থান
সুন্দরবনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত হেনরি আইল্যান্ড দক্ষিণ ২৪ পরগনার আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। জমজমাট বকখালি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলের শোভা বর্ধনকারী স্থানে পাওয়া যায় নিরিবিলি পরিবেশ ও অপার শান্তি। অতিমারীর আবহে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিদের জন্য এই স্থান আদর্শ বলা যেতে পারে। করোনা বিধি মেনে প্রতিবেশী ফ্রেজার গঞ্জ থেকেও ঘুরে আসতে বেশি সময় লাগে না।
কীভাবে পৌঁছবেন
কলকাতা থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হেনরি আইল্যান্ড। ধর্মতলা থেকে বাসে কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে ডায়মন্ডহারবার রোড ধরে আগুয়ান হয়ে জে়টিঘাট স্টপে পৌঁছে গেলেই কেল্লাফতে। সেখান থেকে ইঁটের রাস্তা কিছুটা এগিয়ে যেখানে গিয়ে নজর থামে, সেটাই হেনরি আইল্যান্ড। পথিমধ্যে হাতানিয়া-দোহানিয়া নদী পেরোনোর অভিজ্ঞতাও অসাধারণ। অনেকে শিলায়দা থেকে ট্রেনে নামেন নামখানা। এরপর নদী পেরিয়ে ভ্যান ধরে গন্তব্যে পৌঁছনো কেবল সময়ের অপেক্ষা।
কেন যাবেন
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় যে ব্রিটিশ আমলে একাই এই দ্বীপে পৌঁছে গিয়েছিলেন এক সাহেব। ম্যানগ্রোভের বনে তৈরি করেছিলেন সভ্যতা। তাঁরই নামানুসারে এই স্থানের নামকরণ। বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সেই হেনরি আইল্যান্ডে নিরিবিলি, শান্ত এবং একাকী সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের টানে। ভোরে সেখান থেকে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতাও মনোরম। সঙ্গী হয় লাল কাঁকড়ার পাল, শামুক, ঝিনুক। রিসর্ট থেকে ইঁটের রাস্তা কিছুটা এগিয়ে অস্থায়ী, ভঙ্গুর বাঁশের সেতুতে গিয়ে মেশে। ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয় ম্যানগ্রোভের বন। কাদায় মাখামাখি শ্বাসমূল, সুন্দরী, গেঁও, গরানের গন্ধ ও শীতল হাওয়ায় রোমাঞ্চিত হয় মন। ম্যানগ্রোভের বন ছাড়াও হেনরি আইল্যান্ড জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাছ চাষের ভেড়ি স্বতন্ত্র শোভা বর্ধন করে। হেনরি আইল্যান্ডের ম্যানগ্রোভ বনে শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা গিয়ে ভিড় করে। তাদের কলরবে মুখরিত হয় আশপাশ। ওয়াচ টাওয়ার থেকে নানা রঙের পাখি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার মজা অন্যরকম।
থাকার জায়গা
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে হেনরি আইল্যান্ডে বেশ কয়েকটি সুন্দর রিসর্ট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। দ্বীপে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেলও। অনেকে আবার বকখালিকে বেস পয়েন্ট বানিয়ে একদিনের জন্য ঘুরে আসেন সুন্দর ম্যানগ্রোভের দ্বীপ।
ছবি সৌ:ইউটিউব