কুলিক নদীর পাড়ে রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে বাড়ছে ভিড়, কারণটা জেনে নিন
কুলিক নদীর পাড়ে রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে বাড়ছে ভিড়, কারণটা জেনে নিন
আসমুদ্র হিমাচল ছুটে বেড়ানো বাঙালি পর্যটকদের কাছে সচরাচর পাড়াটা ঘুরে দেখা হয় না। তার সৌন্দর্য্যও যে ভুবন ভোলানো, তা হয়তো চোখেই পড়ে না। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে তেমনই এক স্থান, যার শোভা অভূতপূর্ব। হরেক পাখির বাস এই স্থানের ঐহিত্যও বেশ প্রাচীন। বর্ষা ছাড়া যে কোনও সময় কুলিক পাখিরালয়ে ভিড় জমান পর্যটকরা। অঞ্চলটিকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। করোনার প্রভাব কমলে এ স্থানে পর্যটকদের নিয়মিচত আনাগোনা লেগে থাকবে বলে ধরে নেওয়া যায়।
অবস্থান ও ইতিহাস
কলকাতা থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তপ দিনাজপুরের রায়গঞ্জে পৌঁছতে হবে রেল কিংবা সড়কপথে। শিলিগুড়ি থেকে ১৮১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই স্থান থেকে কিছুটা এগোলেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে রয়েছে কুলিক পাখিরালয়। ১৯৭০ সাল থেকে রাজ্য সরকারের তরফে কুলিক নদীর ধার ঘেঁষা অরন্যের উন্নয়ন ঘটানো শুরু হয়। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অধীনে এখানে ইউক্যালিপটাস, কদম, জারুল, শিশুর মতো পর্ণমোচী গাছ লাগানো হয়। ধীরে ধীরে ওই অরণ্য বিস্তার লাভ করে। সেখানে আনাগোনা বাড়তে থাকে পরিযায়ী পাখিদের। ১৯৮৫ সালে কুলীক পাখিরালয়কে রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য বলে ঘোষণা করে রাজ্য রাজ্য সরকার।
পরিধি
কুলিক পাখিরালয় বা রায়গঞ্জ অভয়ারণ্যের আয়তন ১.৩ বর্গ কিলোমিটার। অরণ্যের মূল এলাকা ০.১৪ বর্গ কিলোমিটার। পাখিরালয়ের দক্ষিণ ও পূর্ব সীমানা তৈরি করেছে কুলিক নদী। বেশ কয়েকটি ছোট-বড় খাল এসে মিশেছে এই স্থানে। বর্ষায় অরণ্যে জল ঢুকলে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাতে শুরু করে।
কী দেখবেন
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে ১৬৪ প্রজাতির পাখির আনাগোনা। প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার পাখি এই স্থানে দেখতে পাওয়া যায়। চিল, পেঁচার পাশাপাশি মাছরাঙা, ফ্লাইক্যাচার, ড্রংগো, এগ্রেট, স্টর্ক, এশিয়ান ওপেনবিল, কাঠঠোকরা, ফিঙে এই অভয়ারণ্যের অন্যতম আকর্ষণ। পক্ষি দর্শনের জন্য ঘন জঙ্গলে পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার। বর্ষার শব্দ এবং পাখির কলতান মিলেমিশে এক অদ্ভুত শোভা তৈরি করে। রায়গঞ্জ অভয়ারণ্যে আশ্রয় পেয়েছে শিয়াল, খরগোশ, বনবিড়ালের মতো প্রাণী। কুলীক নদীতে এশিয় শামুকখোল, বক, পানকৌড়ি এই স্থানের শোভা আরও বাড়িয়ে দেয়।
থাকার জায়গা
কুলিক পাখিরালয়কে ভিত্তি করে এই স্থানে বেশ কয়েকটি হোটেল, কটেজ তৈরি হয়েছে। সেখানে থাকতে পারেন পর্যটকরা। অনেকে রায়গঞ্জ শহরে থেকে সেখান থেকে এক দিনের জন্য এই বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে ঢুঁ মারেন।
ছবি সৌ:ইউটিউব