মেঘালয়ের মাথায় নতুন পালক, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী তালিকায় স্থান লিভিং রুট ব্রিজ–এর
মেঘালয়ের মাথায় নতুন পালক, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী তালিকায় স্থান লিভিং রুট ব্রিজ–এর
আমাদের দেশের মধ্যেই যে এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য লুকিয়ে রয়েছে যা বাইরের দেশকেও হার মানায়। সেরকমই মেঘালয়ের লিভিং রুট ব্রিজ, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি বিরল আকৃতির অনন্য প্রাকৃতিক ঘটনা। মঙ্গলবার ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় এই ব্রিজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইউনেস্কোতে স্থান জিংকিয়েং জেরি–এর
স্থানীয়ভাবে 'জিংকিয়েং জেরি' নামে পরিচিত এই ১০০টি লিভিং রুট ব্রিজের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে পাহাড়ি রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলা ও পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলার ৭২টি গ্রামে। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং বোটানিক্যাল যোগসূত্র তুলে ধরে, রাষ্ট্রপুঞ্জের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (ইউনেস্কো) বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় এই ব্রিজ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অত্যন্ত খুশি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা টুইটে নিজের খুশি প্রকাশ করে বলেন, 'জিংকিয়েং জেরি: লিভিং রুট ব্রিজ কালচারাল ল্যান্ডস্কেপস অফ মেঘালয়কে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট অস্থায়ী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা জানাতে পেরে আনন্দিত। এই সফরের জন্য আমি সব সম্প্রদায়ের সদস্য ও অংশীদারদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।' মেঘালয়ের বন্য ও পরিবেশ মন্ত্রী জেমস কে সাঙ্গমা একগুচ্ছ টুইটের মাধ্যমে বলেন, 'আমি ঘোষণা করতে পেরে রোমাঞ্চিত যে আমাদের জিংকিয়েং জেরি: লিভিং রুট ব্রিজ কালচারাল ল্যান্ডস্কেপ অফ মেঘালয় রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট অস্থায়ী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।'
আসলে কি এই লিভিং রুট ব্রিজ
এটা এক ধরনের 'সাসপেনশন ব্রিজ' বা ঝুলন্ত সেতুর মতো। যা একটি নদী বা নদীর ওপর দিয়ে রবার-ডুমুর গাছের নরম শিকড় দিয়ে তৈরি করা হয়। যা দিনেদিনে আরও বেড়ে ওঠে ও বড় গাছের শিকড়কে বহু বছর ধরে শক্তিশালী করে তোলে। এই ঝুলন্ত সেতুগুলি বেশিরভাগই স্রোত বা নদীর একপাশে লাগানো একটি একক গাছের শিকড় প্রসারিত করে তৈরি করা হয়। এক-একটি এ ধরনের ব্রিজ তৈরি করতে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগে এবং এই সেতুগুলির কয়েক শতাব্দীর জীবনকাল আছে। এই সেতুগুলির মধ্যে কিছু সেতু ২০০ বছরের বেশি পুরনো, যা আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া ব্রিজগুলির চেয়েও মজবুত।
যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অবিচল এই ব্রিজ
জৈব-ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে তৈরি অদ্ভুত মেঘালয়ের ডাবল-ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো সহ একাধিক সরকারি অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়েছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ইউনেস্কোকে লিভিং রুট ব্রিজগুলি মনোনয়নের জন্য অনুরোধ করার পর ভারতের জুলজিক্যাল সার্ভের বিজ্ঞানীদের দল পূর্ব খাসি পাহাড় এলাকার লিভিং রুট ব্রিজগুলির প্রাণীগত বৈচিত্র্যের মূল্যায়নের জন্য জানুয়ারিতে আসেন। এই লিভিং রুট ব্রিজগুলি ১৫ থেকে ২৫০ ফিট প্রসারিত এবং এগুলি ঝড়-হড়কা বানের আঘাতেও ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে এবং মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে একটি পবিত্র সম্পর্ক প্রদর্শন করে।
দুই গ্রামের সংযোগ স্থাপন করে এই রুট ব্রিজ
এই রুট ব্রিজগুলি নদীর ওপর দিয়ে এক গ্রাম থেকে আর একটি গ্রামের যোগ তৈরি করে। পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন যে লিভিং রুট ব্রিজগুলি সমস্ত জীবনের জন্য সংবেদনশীলতা, সুরক্ষা এবং সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অপরিহার্য মানবিক মূল্য প্রদর্শন করে। দেশের এই আদিবাসীরা কবে এই জীবন্ত স্থাপত্যের সূচনা করেছিল তার কোনও বিশ্বাসযোগ্য নথি নেই।
গত বছর, এখানে রুট ব্রিজের ওপর একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে বিজ্ঞানীরা তাদের অর্কিড, উভচর এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর অনন্য প্রজাতির অনুসন্ধান উপস্থাপন করেছিলেন যা এই রুট ব্রিজে পাওয়া যায়। মেঘালয়কে প্রায়শই স্কটল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয় তার ভূসংস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং গাছপালার ওপর ভিত্তি করে।
তিলাবনি পাহাড়ের কোলে ফুটিয়ারি, দ্বরকেশ্বরের উৎপত্তিস্থল সব ক্লান্তি ঘুচিয়ে দেবে