কুলিক নদীর পাড়ে সবুজ বন যেন রঙিন পাখিদের মুক্তাঙ্গন
'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া' কথাটা যে কতটা খাঁটি, তা বোঝা যায় উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে পৌঁছলে। হরেক পাখির বাস এই স্থানের ঐহিত্যও বেশ প্রাচীন। বর্ষা ছাড়া যে কোনও সময় কুলীক পাখিরালয়ে ভিড় জমান পর্যটকরা। অঞ্চলটিকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।

অবস্থিতি
কলকাতা থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তপ দিনাজপুরের রায়গঞ্জে পৌঁছতে হবে রেল কিংবা সড়কপথে। শিলিগুড়ি থেকে ১৮১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই স্থান থেকে কিছুটা এগোলেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে রয়েছে কুলীক পাখিরালয়।

ইতিহাস
১৯৭০ সাল থেকে রাজ্য সরকারের তরফে কুলীক নদীর ধার ঘেঁষা এলাকাটির উন্নয়ন ঘটানো শুরু হয়। সামাজিক অরণ্যায়ন কর্মসূচির অধীনে এখানে ইউক্যালিপটাস, কদম, জারুল, শিশুর মতো পর্ণমোচী গাছ লাগানো হয়। ধীরে ধীরে ওই অরণ্য বিস্তার লাভ করে। সেখানে আনাগোনা বাড়তে থাকে পরিযায়ী পাখিদের। ১৯৮৫ সালে কুলীক পাখিরালয়কে রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য বলে ঘোষণা করে রাজ্য রাজ্য সরকার।

আয়তন
কুলীক পাখিরালয় বা রায়গঞ্জ অভয়ারণ্যের আয়তন ১.৩ বর্গ কিলোমিটার। অরণ্যের মূল এলাকা ০.১৪ বর্গ কিলোমিটার। পাখিরালয়ের দক্ষিণ ও পূর্ব সীমানা তৈরি করেছে কুলীক নদী। বেশ কয়েকটি ছোট-বড় খাল এসে মিশেছে এই স্থানে। বর্ষায় অরণ্যে জল ঢুকলে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাতে শুরু করে।

কেন যাবেন
১) সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে ১৬৪ প্রজাতির পাখির আনাগোনা ঘটে। প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার পাখি এই স্থানে দেখতে পাওয়া যায়। চিল, পেঁচার পাশাপাশি মাছরাঙা, ফ্লাইক্যাচার, ড্রংগো, এগ্রেট, স্টর্ক, এশিয়ান ওপেনবিল, কাঠঠোকরা, ফিঙে এই অভয়ারণ্যের অন্যতম আকর্ষণ। পক্ষি দর্শনের জন্য ঘন জঙ্গলে পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার। বর্ষার শব্দ এবং পাখির কলতান মিলেমিশে এক অদ্ভুত শোভা তৈরি করে।
২) রায়গঞ্জ অভয়ারণ্যে আশ্রয় পেয়েছে শিয়াল, খরগোশ, বনবিড়ালের মতো প্রাণী। কুলীক নদীতে এশিয় শামুকখোল, বক, পানকৌড়ি এই স্থানের শোভা আরও বাড়িয়ে দেয়।

কোথায় থাকবেন
কুলীক পাখিরালয়কে ভিত্তি করে এই স্থানে বেশ কয়েকটি হোটেল, কটেজ তৈরি হয়েছে। সেখানে থাকতে পারেন পর্যটকরা।
ছবি সৌ:ইউটিউব
পরিযায়ী পাখি ও ইতিহাসের টানে গাজলডোবায় বাড়ছে পর্যটকের ভিড়