বিলুপ্তপ্রায় স্যালামান্ডারের গড় এই অভয়ারণ্যে ঘুমিয়ে মেঘমাখা সৌন্দর্য্য
বিলুপ্তপ্রায় স্যালামান্ডারের গড় এই অভয়ারণ্যে ঘুমিয়ে মেঘমাখা সৌন্দর্য্য
পশ্চিমবঙ্গের গর্বের দার্জিলিংয়ের নাতিদূরে জোড়পোখরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নিয়ে একটা সময় পর্যটকদের মনে আগ্রহের শেষ ছিল না। পার্বত্য জন্তুতে পরিপূর্ণ এই অরণ্যের পুরনো জৌলুস কিছুটা কমলেও মানুষের আনাগোনায় কমতি নেই। শীতের চাদর ও পাহাড়ি গা ছমছমে পরিবেশকে সঙ্গে নিয়ে সবুজ অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া মন আর ব্যস্ত শহুরে জীবনে ফিরে আসতে চাইবে না। এক বেলার এই অভয়ারণ্য দর্শনে পাওয়া যায় পরম তৃপ্তি। করোনা পরবর্তী সময়ের নিরিবিলি, নির্ঝঞ্ঝাট ডেস্টিনেশন এর থেকে ভালো আর কী-ই বা হতে পারে। তাই দেরি না করে চটপট ভ্রমণ পরিকল্পনা বানিয়ে ফেলুন।
নামের বুৎপত্তি ও ইতিহাস
নেপালি ভাষার 'জোড়' শব্দের অর্থ জোড়া বা দুই। তাঁরা লেক বা জলাশয়কে 'পোখরি' বলে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। দুই মিলে এই অভয়ারণ্যের নাম রাখা হয়েছিল জোড়পোখরি। দুটি লেকের সংযোগস্থলে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছিল এই বনভূমি। যেখানে ১৯৬৪ সালে প্রথম বিলুপ্তপ্রায় সালামান্ডার্সের দর্শন মিলেছিল। ১৯৮৫ সালের মার্চে জোড়পোখরিকে অভয়ারণ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।
অবস্থিতি
দার্জিলিং থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত জোড়পোখরি অভয়ারণ্য। ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে এই স্থানের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যে বিলুপ্তপ্রায় জন্তুদের দর্শন মেলে। দেখা যায় নানা ধরনের বন্য উদ্ভিদও।
যাত্রাপথ
কলকাতা থেকে ট্রেনে বা বাসে পৌঁছতে হবে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে জোড়পোখরি যাওয়ার সরাসরি গাড়ি পাওয়া যায়। অনেকে আবার দার্জিলিং থেকে এক বেলার জন্য পাহাড়ি অভয়ারণ্য থেকে ঘুরে আসেন। আঁকাবাঁকা, দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা ধরে এক ঘণ্টা এগোলেই মেলে গহীন অরণ্যের দর্শন।
দেখার কী আছে
জোড়পোখরি অভয়ারণ্যের অন্যতম আকর্ষণ বিলুপ্তপ্রায় টিকটিকি প্রজাতির স্যালামান্ডারের। পূর্ব হিমালয়ের চার হাজার থেকে আট হাজার ফুট উচ্চতায় যাদের মূল বসতি। ডায়নোসর যুগের আগে থেকে যে সব প্রাণীর রাজত্ব ছিল পৃথিবীর বুকে, তাদের মধ্যে অন্যতম এবং প্রাচীন এই স্যালামান্ডার। নানা রঙের এই প্রাণীকে দূর থেকেই দেখা শ্রেয়। স্থানীয়দের মতে গোরো (স্যালামান্ডার) ছাড়াও পাহাড়ের ঢালে বন্য পরিবেশে অন্য জীবজন্তু দেখতে পাওয়া যায়। মেঘের আরাম গায়ে মেখে পাইন, ফারের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। একই সঙ্গে পার্বত্য সৌন্দর্য্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
থাকার জায়গা
জোড়পোখরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আশেপাশে থাকার সেরকম ব্যবস্থা না থাকলেও দার্জিলিংকে বেস পয়েন্ট করে এক বেলা অরণ্যে ঘুরে আসা যায়। তবে বনাঞ্চলকে ঘিরে ফের বাড়তে থাকা মানুষের আগ্রহ দেখে এই স্থানকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিতে চলেছে সরকার।