জানেন কি কলকাতার কাছেই রয়েছে দুর্দান্ত এক ফসিল পার্ক? সপ্তাহান্তের ঝটিকা সফরে বেড়িয়ে আসুন
কলকাতার কাছাকাছি বেড়ানোর অফবিট ডেস্টিনেশন ফসিল পার্ক
একদিনের ছুটিতে বোলপুর-শান্তিনিকেতন প্রায় সকলেই যান। বাঙালির জনপ্রিয়তম পর্যটন কেন্দ্র বলা যায় শান্তিনিকেতনকে। কিন্তু জানেন কি সেখানে রয়েছে একটি ফসিল পার্ক। অনেকেই তার হদিশ জানেন না। সকলেই সোনাঝুড়ির হাট আর বিশ্বভারতী দেখে ফিরে আসেন কেনাকাটা করে। তবে জেনে নিয়ে সরাসরি এবার চলে যান ফসিল পার্কে। একেবারে অন্যরকম অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন নিঃসন্দেহে।
ফসিল পার্ক
বোলপুর শান্তিনিকেতনের অফবিট পর্যটন কেন্দ্র ফসিল পার্ক। প্রায় কেউই জানেন না সেই জায়গার কথা। খুব কম সংখ্যক পর্যটকই আসেন সেখানে। বোলপুর থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বেই তৈরি হয়েছে এই ফসিলপার্ক। ইলেমবাজারের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেখানে। ইলামবাজারের জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে এই ফসিল পার্ক। যাকে বলা হয় উড ফসিল পার্ক। একেবারে অন্যরকম এখানকার পরিবেশ। ১০টাকার টিকিট কেটে ঢুকে পড়ুন এই ফসিল পার্কে।
কী এই ফসিল পার্ক
ইলেমবাজারের এই ফসিল পার্কে রয়েছে ভিভিন্ন রকমের উড ফসিল। জানা গিয়েছে বোলপুরের জলকষ্ট মেটাতে এখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুকুর কাটার কাজ শুরু হয়েছিল। সেই খনন কাজ চালাতে গিয়েই উদ্ধার একাধিক প্রাচীন উদ্ভিদের ফসিল। প্রত্যেকটি ফসিলের বয়স দেড় থেকে ২ কোটি বছর। শেষে বনদফতর উদ্যোগী হয় এই বিরল উদ্ভিদের ফসিল রক্ষায়। তৈরি করা হয় এই ফসিল পার্ক। ১০ হেক্টর জমির উপরে তৈরি হয়েছে এটি। রাজ্যের এটিই প্রথম ফসিল পার্ক।
কী বলেন গবেষকরা
গবেষকরা জানিয়েছে কোটি কোটি বছর আগে এই গাছগুলি বীরভূমের রাজ মহল পাহাড় এবং ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে এই গাছগুলি বন্যার জলে ভাসতে ভাসতে এসেছিল এই এলাকায়। এখানকার মিহি বালি আর মাটিতে আটকে যায় সেগুলি। চারপরে ক্রমশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং ভূমিবিপর্যয়ের পর এগুলি ফসিল হয়ে যায়। সেগুলি প্রস্তের চাপে একেবারে ফসিলে পরিণত হয়। এই পার্কে রয়েছে অসংখ্য ভেষজ উদ্ভিদ।
কীভাবে যাবেন
বোলপুর শান্তিনিকেতন যাওয়ার রাস্তা সকলেরই জানা। ট্রেনে অথবা গাড়িতে পৌঁছে যায়। গাড়িতে যেতে হবে অথবা টোটো বাড়া করে নিতে হবে এই ফসিল পার্কে যেতে হলে। একেবারে ইলামবাজারের জঙ্গলের ভেতরে রয়েছে এই উড ফসিল গাছ। যাতে একটা সময়ে বলা হতো চৌপাহাড়ি জঙ্গল। বুধবার বন্ধ থাকে এই ফসিল পার্ক। বোলপুর শান্তিনিকেতনের সঙ্গে উপরি পাওনা এই ফসিল পার্ক।
সাঁওতালি গ্রামে বেড়ানোর সুযোগ
ফসিল পার্কে বেড়ানোর পাশাপাশি সাঁওতালি গ্রাম দেখার সুযোগও থাকছে। ইলামবাজারের যে জঙ্গলে এই উদ্ভিদ ফসিল পার্কটি তৈরি হয়েছে সেটির নাম আমখই গ্রাম। সেটি একেবারেই আদাবাসী সাঁওতালি গ্রাম। সেখানে একটি সাঁওতালি শিশুদের স্কুলও রয়েছে। যাঁরা আদিবাসীদের জীবনযাত্রা তাঁদের গ্রাম দেখতে চান তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে এই আমখই গ্রাম। একই সঙ্গে ফসিল পার্ক দেখা আর সাঁওতালি গ্রাম দেখার সুযোগ পেয়ে যাবেন পর্যটকরা।
জঙ্গলের গহীনের রোমাঞ্চ
ইলামবাজার জঙ্গল একটা সময়ে এমন ছিল যে সহজে কেউ সেখানে যেতে ভয় পেতেন। এমনকী দিনের আলোতেও ইলামবাজারের জঙ্গল পেরোতেন না সহজে। এমন ডাকাতের দাপট ছিল। সেই সময় এখন পাড় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জঙ্গলের রোমাঞ্চ রয়ে গিয়েছে। বড় শাল , সোনাঝুড়ি গাছের মাঝখান দিয়ে মেঠোপথ দিয়ে ফসিল পার্কের ভেতরে ঢুকেছে রাস্তা। এই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যেতে বেশ জঙ্গলে বেড়ানোর রোমাঞ্চ অনুভূত হবে সকলের।
সপুস্পক উদ্ভিতের ফসিল
এই পার্কে যতগুলো ফসিল রয়েছে সবগুলি সপুস্পক উদ্ভিতের তৈরি। এখনও অনেক উদ্ভিদের ফসিল চাপা পড়ে রয়েছে মাটির নীচে। রাজ্য সরকারের বনদফতর সেগুলি সংরক্ষণ করছে। খুব কম সংখ্যক পর্যটকই জানেন এই ফসিল পার্কের কথা। এখনও সেই ফসিল পার্কটির খনন প্রক্রিয়া চলছে। সেগুলি সংরক্ষণ করে ফসিল গুলি পর্যটকদের জন্য সাজিয়ে রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। অনেক ফসিল আবার চুরিও হয়ে গিয়েছে আগে।
ভেষজ উদ্ভিদের সমাহার
একদিকে যেমন উদ্ভিদ ফসিল যেমন রয়েছে এই পার্কে তেমনই বিরল সব ভেষজ উদ্ভিদও রয়েছে। ওলট কম্বল গাছ, অনন্তমূল গাছ, আমলকি, কালমেঘ এগুলিতো রয়েইছে। সেই সব ভেষজ উদ্ভিদ থেকে কী কী ওষুধ পাওয়া যায় কী কী গুণাগুণ রয়েছে তারও ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে উদ্ভিদ গুলির পাশে। এত বিরল প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদের সমাহার খুব কম জায়গায় রয়েছে।
ছবি সৌ: ভবঘুরে দীপাঞ্জন/ইউটিউব