সুন্দরী মূর্তি-ঝালংয়ে ঘেরা শান্ত চালসায় কেন ভিড় ঘন হয় পর্যটকদের
সুন্দরী মূর্তি-ঝালংয়ে বেষ্টিত চালসায় কেন ভিড় করেন পর্যটকরা
পাহাড় এবং জঙ্গল যে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিদের বরাবারের আকর্ষণের স্থল, তা বলার প্রয়োজন পড়ে না। সুযোগ পেলেই শহুরে কর্মব্যস্ততা ফেলে সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে কার মন চায় না বলুন তো। সে স্থান যদি হয় গহীন রাতের মতো আদি, অকৃত্রিম ও সুন্দর, সেখানে পর্যটকদের ভিড় বাড়াটা স্বাভাবিক। তেমনই এক নগরের নাম চালসা মহাবাড়ি। যাকে ডুয়ার্সের প্রবেশদ্বার বললে ভুল হবে না। সেই স্থানই কেন করোনা পরবর্তী পুজোর ফিল গুড ডেস্টিনেশন হতে পারে, তা জেনে নেওয়া যাক।
অবস্থিতি
চালসা মহাবাড়ি এলাকাটি জলপাইগুড়ি জেলার মেটেলি ব্লকের অন্যতম আকর্ষণ। মেটেলি থানার অন্তর্গত ব্লক সদরটি মূর্তি এবং ঝালং নদী দিয়ে বেষ্টিত। ২.৯৮ বর্গ কিলোমিটার পরিধির এলাকায় ৮৯৭৩ জন (২০১১ সালের সুমারি) মানুষের বাস। তাঁদের মধ্যে ২৪৬১ জন পুরুষ ও ২৫১২ জন মহিলা। হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্সের অন্তগত এই নাতিদীর্ঘ নগরের একদিকে রয়েছে গরুমারা জাতীয় উদ্যান, অন্যদিকে চাপড়ামারি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। চা বাগান, নদী, জলাশয় ও সুবিশাল বনানী দিয়ে ঘেরা এই অঞ্চল এক অপার সৌন্দর্য্যের মূর্ত প্রতীক।
কীভাবে পৌঁছবেন
জলপাইগুড়ি জেলা চালসা মহাবাড়ি নগরটি ১৭, ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ও ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে। তাই অনেকে কলকাতা থেকে সড়ক পথে এক গাড়িতে পৌঁছে যান চালসা। অনেকে আবার মহানগর থেকে বাসেও পৌঁছে যান সেখানে। যাঁরা ট্রেনে করে পাড়ি দেবেন, তাঁদের নামতে হবে চালসা স্টেশনে। সেখান থেকে টোটো কিংবা গাড়িতে কেউ পৌঁছে যান মূর্তি কিংবা ঝালং। কেউ চালসা থেকে ডুয়ার্স পরিক্রমার প্রস্তুতি নেন। কারণ কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে ঘুরতে যাওয়ার বেস ক্যাম্প কিন্তু চালসাই। অনেকে আবার শিলিগুড়ি, গুয়াহাটি থেক এই স্থানে পৌঁছনোর গাড়ি ধরেন। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকেও চালসা পৌঁছনোর গাড়ি মেলে আকচার।
কী দেখবেন
চালসার মূল আকর্ষণ নিহিত মূর্তি ও ঝালং নদীর সৌন্দর্য্যে। স্বচ্ছ জলে নুড়ি, পাথরের চলন দেখার মজাই অন্যরকম। পিছনেই দাঁড়িয়ে থাকা চা বাগান এবং ঘন অরণ্যের মাঝে নগরের শোভা অকৃত্রিম আকার ধারণ করেছে। এ নদীতেই মাঝে সাঝে জল খেতে আসে হাতির পাল। কখনও সখনও দেখা মেলে চিতাবাঘ, হরিণেরও। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে তাদের দেখা পেতে পারেন আপনিও। গভীর রাতে শুনতে পারেন গর্জন। আচমকাই রাস্তার মাঝে চলে আসা কালো বাইসন মনকে শঙ্কিত করতে পারে। জ্যোৎস্না রাতে মূর্তির বুকে চাঁদের খেলা পর্যটকদের এক অন্য ভাবনার দেশে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। চাইলে মূর্তির শীতল জলে পা ডুবিয়ে ছবি তুলতে পারেন আপনিও। তবে ঘন অরণ্য ও বন্য জন্তুদের দূরত্ব রজায় রাখাই শ্রেয়। কোনও কিছু না দেখে কেবল এখানেই এক রাত কাটিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে।
কোথায় থাকবেন
সম্প্রতি ডুয়ার্স কেন্দ্রিক পর্যটনের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠা চালসায় রয়েছে পর্যটকদের থাকবার নানা ব্যবস্থা। হোটেলের পাশাপাশি রয়েছে একাধিক হোম স্টে। অন্যদিকে চালসা সংযুক্ত চাপরামারি, গরুমারায় রয়েছে বন দফতরের বাংলো। তবে ভিড়ের মরসুমে আগে থেকে ঘর বুক করে নেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।