
রাজীবের ঘরে ফেরা কি বুমেরাং হবে তৃণমূলের! জেলায় অসন্তোষে পুরভোটের আগে প্রশ্ন
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপিতে মোহভঙ্গ হয়েছে ৯ মাসেই। ঘরে ফিরেছেন সেই মোহ কাটিয়ে। কিন্তু তাঁর ঘরে ফেরা তৃণমূলে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। একের পর এক নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরওয়াপসিকে কেন্দ্র করে বেসুরো হচ্ছেন। এমনকী তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ছেড়ে কথা বলছেন না। তাহলে কি পুরভোটের আগে বুমেরাং হবে তৃণমূলে!

রাজীবের তৃণমূলে ঘরওয়াপসির দিন থেকেই অসন্তোষ
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় গিয়ে ফের তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে। তারপর তিনি ত্রিপুরায় সংগঠন বাড়ানোর কাজ করছেন তৃণমূলের হয়ে। রাজীবের তৃণমূলে ঘরওয়াপসির দিনেই তাঁর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার রাজীবের বিরুদ্ধে সরব হলেন সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূলে ফেরার তোড়জোড় শুরুর পর থেকেই বিস্ফোরক
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল ও দলের কর্মীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলে গিয়েছিলেন বিজেপিতে। চাটার্ড ফ্লাইটে করে দিল্লি উড়ে গিয়ে অমিত শাহের হাত থেকে পতাকা নিয়েছিলেন তিনি। শুরু হয়েছিল তাঁর গেরুয়া জার্সিতে রাজনৈতিক সফর। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ডোমজুড়ে হারের পরই তাঁর চোখ খুলে যায়। তিনি ফের তৃণমূলে ফেরার তোড়জোড় শুরু করে দেন।

তৃণমূলে প্রবল অসন্তোষের মুখে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রায় ৬ মাসের চেষ্টায় তিনি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মন গলাতে সমর্থ হন। শেষমেশ রাজ্যে তাঁর ঘরে ফেরায় বাধার প্রাচীর দেখে তাঁকে ত্রিপুরায় নিয়ে গিয়ে তৃণমূলে যোগদান করানো হয়। এবং ত্রিপুরায় বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে কাজে লাগানো হচ্ছে দলের বিস্তারে। কিন্তু বাংলায় তাঁকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা জটাজাল। তৃণমূলে প্রবল অসন্তোষের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে।

শুভেন্দু ভাই রাগ করিস না, রাজীবকে কটাক্ষ
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে ফেরার দিনই গর্জে উঠেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীবকে টপ টু বটম করাপ্টেড বলে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। তাঁর মতো দুর্নীতিপরায়ণ নেতাকে কেন মমতাদি দলে ফেরালেন তা নিয়েও তুলে দিয়েছিলেন প্রশ্ন। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ানে তিনি বলেছিলেন রাজীবের টাকা খাটে দুবাইয়ে। তারপর রাজীবকে কটাক্ষে তিনি বলেছিলেন, শুভেন্দু ভাই রাগ করিস না, তুইও কবে তৃণমূলে ফিরে আসবি, আমরা থেকেও কাছের নেতা হয়ে যাবি।

দলের সংকট তীব্রতর হচ্ছে হাওড়া জেলায়
এরপর সৌগত রায় থেকে শুরু করে অনেক নেতাই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছিলেন। এমনকী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ান তুলে ধরে বলেছিলেন, অভিষেকও বলেন রাজীবদের মতো কোনও নেতাকে ফেরানো হবে না। কিন্তু সেই তো ফেরানো হচ্ছে রাজীবদের। এর ফলে দলের সংকট তীব্রতর হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক নেতা।

রাজীব দলে ফেরায় সরব কল্যাণের পর প্রসূন
হাওড়ায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অরূপ রায়ের অহি-নকুল সম্পর্ক সবাই জানেন। কিন্তু রাজীবের বিজেপি-গমনের পর তাঁর বিরুদ্ধে যে চলে গিয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরও অনেকে তা বুঝতে পারেনি রাজনৈতিক মহল। যদিও কল্যাণ আগেও সরব হয়েছিলে, যখন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলে ফেরার পথ তৈরি করতে গিয়েছিলেন কুণাল ঘোষের বাড়িতে।

গদ্দারদের ঢুকতে দেব না হাওড়ায়, চ্যালেঞ্জ প্রসূনের
কল্যাণের পর প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সরব হয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তিনি বলেনস ভোটের আগে পার্টি ছেড়ে অনেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। দুদিন আগে তারাও গালমন্দ দেন দিদিকে। তারাই এখন দিদির ছবি পকেটে নিয়ে ঘুরছে। তাদের অন্তত হাওড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমি থাকতে তাঁদের কাউকে হাওড়ায় ঢুকতে গেব না। প্রয়োজন হলে আমি পদত্যাগ করব। প্রয়োজনে দল ছেড়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের কাছে পড়ে থাকব। কিন্তু গদ্দারদের ঢুকতে দেব না।

দেবাংশুর করা পণের কথা মনে করালেন প্রসূন
ভোটের আগে যাঁরা দল ছেড়ে তৃণমূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তাঁদের নিয়ে তরুণ-তুর্কি নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যও বলেছিলেন, প্রয়োজনে তিনি গেটে পাহারা দেবেন, গেটের সামনে শুয়ে থাকবেন, কিন্তু গদ্দার নেতাদের তিনি দলে ঢুকতে দেবেন না। তা নিয়ে কম খিল্লি হয়নি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরওয়াপসির দিন। তারপর প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় আবার সেই একইরকম প্রতিজ্ঞা করে দেবাংশুর করা পণের কথা মনে করিয়ে দিলেন।

রাজীবকে নিয়ে টগবগ করে ফুটছে জেলার রাজনীতি
হাওড়া তৃণমূলে কোন্দল শুরু হয়ে গিয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। এখনও অরূপ রায় মুখ খোলেননি। তার আগে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বোমা ফাটিয়ে দিয়েছেন। পুরভোটের আগে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে টগবগ করে ফুটছে জেলার রাজনীতি। ১৯ ডিসেম্বর হাওড়া পুরসভায় ভোট, তার আগে রাজীব-উত্তাপ কীভাবে সামাল দেয় তৃণমূল, সেটাই দেখার।