একুশের নির্বাচনে বড় জয়েও স্বস্তি নেই! দুর্নীতি ও অসন্তোষের জোড়া ফলায় বিদ্ধ তৃণমূল
একুশের নির্বাচনে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বড় জয় তুলে নিয়েছিল বাংলায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার কুর্সিতে বসার হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই নির্বাচনে জিতেই।
একুশের নির্বাচনে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বড় জয় তুলে নিয়েছিল বাংলায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার কুর্সিতে বসার হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই নির্বাচনে জিতেই। বিজেপির সমস্ত পরিকল্পনা রুখে দিয়ে মমতা-ক্যারিশ্মায় বাংলায় জয় করেছিল তৃণমূল। তারপর এক বছর যেতে না যেতেই দুর্নীতির খাঁড়ায় বিদ্ধ বাংলার শাসক দল। তার ফলে আবার নতুন করে তৈরি হয়েছে অসন্তোষের বাতাবরণ।
বিজেপির আশার প্রদীপ নিভিয়ে ক্ষমতায় মমতা
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে একাংশ তৃণমূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তৃণমূল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ বিজেপির দিকে। তখন বাংলায় হাওয়া উঠেছিল, এবার জিতবে বিজেপিই। কিন্তু সেই হাওয়া ম্লান করে তৃণমূল সুপ্রিমোই ফের ক্ষমতায় ফেরেন। বিজেপির আশার প্রদীপ নিভিয়ে দেন শুরুতেই।
দুর্নীতির বাসা তৃণমূলের অন্দরে
কিন্তু তখন কে ভেবেছিল তৃণমূলের তৃতীয় মেয়াদের সরকারেও ফের একবার দুর্নীতির আঁচ লাগবে? প্রথম মেয়াদেই তৃণমূল জড়িয়ে পড়েছিল সারদা থেকে রোজভ্যালি এবং নারদ কেলেঙ্কারিতেও। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি থেকে বেরিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে খানিক স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু যে দুর্নীতির বাসা বেঁধেছিল তৃণমূলের অন্দরে, তা থেকে যে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি সার্বিকভাবে, সেটা বোঝা গেল তৃতীয় মেয়াদে এসে।
দুর্নীতির জ্বালায় হাঁসফাঁস অবস্থা তৃণমূলের
তৃতীয় মেয়াদের সরকার গড়ার এক বছর যেতে না যেতেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে উঠল দুর্নীতির অভিযোগ। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ফাঁসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটের দু-নম্বর মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বেরিয়ে এল শিক্ষা দফতরের কঙ্কালসার অবস্থা। আবার তৃণমূলের আরও এক হেভিওয়েট অনুব্রত মণ্ডল ফাঁসলেন গরুপাচার মামলায়। ফলে দুর্নীতির জ্বালায় হাঁসফাঁস অবস্থা তৃণমূলের।
তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অসন্তোষের বাতাবণ
এই অবস্থায় আবার তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অসন্তোষের বাতাবণ তৈরি হয়েছে। একদিকে দুর্নীতির হানা, অপরদিকে অসন্তোষ- জোড়া ফলায় বিদ্ধ করছে তৃণমূলকে। ফলে তৃণমূল কংগ্রেসেও বেসুরো বাজছেন অনেকে। তেমনই আপাত নিরীহ বিধায়কও গর্জে উঠেছেন ফেসবুকে। তেমনভাবে প্রচারের আলোয় তিনি কোনওদিন আসেননি, আসতে চাননি, কিন্তু বাম আমলে যখন ঘর থেকে বেরোতে পারতেন না কেউ, ভোট হত বোমা আর বারুদের গন্ধে, তখন থেকে তিনি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। অসম সাহসের পরিচয় দিয়ে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে তিনি সিপিএমকে হারিয়েছিলেন। তিনিই এখন বেসুরো।
‘আমরা যাবার সময় হ'ল দাও বিদায়'
হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা হঠাৎ করেই ফেসবুক পোস্টে বিদায় বার্তা দিয়েছেন। নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গানের লাইন তুলে ধরে তিনি লিখেছেন আবেগঘন বার্তা। লিখেছেন- 'আমরা যাবার সময় হ'ল দাও বিদায়'। তারপরই শুরু হয়েছে তাঁর মানভঞ্জনের পালা। তৃণমূল এখন জানতে চাইছে, সমীর পাঁজার মতো লড়াকু নেতা কেন বিদায় নিতে চাইছেন রাজনীতি থেকে। কেন তিনি শুধু শিক্ষকতা করে বাকি জীবনটা কাটাতে চাইছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানার ও বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ রায়রা।