তৃণমূলকে মাশুল গুণতে হবে আদিবাসী মহল্লায়, অখিল-মন্তব্যে বুমেরাংয়ের আশঙ্কা পঞ্চায়েত ভোটে
রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি রাষ্ট্রপতির রূপ নিয়ে এমনই বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন, যার জন্য পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভুগতে হবে তৃণমূলকে। তৃণমূল আদিবাসী ভোট ফেরানোর জন্য নানা রকম চেষ্টা করছে।
রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি রাষ্ট্রপতির রূপ নিয়ে এমনই বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন, যার জন্য পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভুগতে হবে তৃণমূলকে। তৃণমূল আদিবাসী ভোট ফেরানোর জন্য নানা রকম চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরসা মুন্ডার জন্মদিনে আদিবাসী ভোটের লক্ষ্যে জঙ্গলমহলে ছুটছেন। তখন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রীর মন্তব্য বুমেরাং হতে পারে তৃণমূলের পক্ষে।
অখিল গিরির রাষ্ট্রপতি-মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিজেপি এবার আসরে নামবে। তৃণমূল যে আদিবাসী বিরোধী এমনকী বর্ণবিদ্বেষীও সেই প্রচারে আসন্ন পঞ্চায়েতে কুপোকাত করার চেষ্টা করবে। ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় এমনকী কলকাতাতেও বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমে পড়েছে। তাদের আদিবাসী-বিরোধী বলে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
অখিল গিরির মন্তব্যকে আদিবাসী বিরোধী বলে প্রমাণ করে বিজেপি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফায়দা তুলতে চাইছে। এমনিতেই নিয়োগ-বিতর্কে ব্যাকফুটে তৃণমূল ফের দুর্নীতির ইস্যু রাজ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আগে ছিল সারদা-সহ চিটফান্ড দুর্নীতি ও নারদ-কাণ্ড। এবার সেখানে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে গরু ও কয়লা পাচার-কাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল। এরই মধ্যে অখিল গিরির বিতর্কিত মন্তব্য তৃণমূলকে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূল এই ইস্যুতে অখিল গিরির পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে সঙ্গে সঙ্গে অখিল গিরি সাফাই দেন। তিনি যে মুখ ফসকে রাষ্ট্রপতির নাম নিয়েছেন তা ব্যাখ্যা করেন। এবং তির ছোড়েন শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। শুভেন্দু অধিকারীকে তাঁকে দেখতে কেমন বলে নানা কটাক্ষ করেছেন, তারা পাল্টা দিতে গিয়েই তিনি রাষ্ট্রপতির নাম নিয়েছেন, তিনি তাই ক্ষমাপ্রার্থী।
কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস অখিল গিরির এই ধরনের মন্তব্যকে সমর্থন করেনি। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, বর্ষীয়ান নেতা অখিল গিরিকে উসকানি দেওয়া হয়েছে। তিনি শুভেন্দু অধিকারীর সেই উসকানির ফাঁদে পা দিয়ে ওই মন্তব্য করে ফেলেছেন বলে জানালেও, দল যে এই ইস্যকে সমর্থন করবে না বা দায় নেবে না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
অখিল গিরির ওই মন্তব্যে আদিবাসী ভোটে প্রভাব পড়তে পারে, তা বুঝেই তৃণমূল সঙ্গে সঙ্গে সরে গিয়েছে মন্ত্রীর পাশ থেকে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলকে মাশুন গুণতে হতে পারে। শুভেন্দু অধিকারী উসকানি দিয়ে দিয়ে অখিল গিরিকে ফাঁদে ফেলে এমনই এক 'ভুল' করালেন, যা আদিবাসী ভোটে আঘাত হানতে পারে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী সপ্তাহে জঙ্গলমহলে যাচ্ছেন। বীরসা মুন্ডার জন্মদিনে চিনি অংশ নেবেন। শিলদাতে যোগ দেবেন একটি কর্মসূচিতে। যে এলাকায় আদিবাসী মানুষের বাস বেশি সেই গ্রামে ও পাড়ায় গিয়ে ব্লক নেতারা জনসংযোগ করছেন। কার কী সমস্যা, তার সমাধান করছেন। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মানুষের কৌতুহলের জবাব দিচ্ছেন। এইভাবে আদিবাসী ভোট ফেরানোর প্রক্রিয়ার মাঝে একটি মন্তব্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূলের বিশ্লেষণেই উঠে এসেছে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আদিবাসীদের একটা বড় অংশ। ২০১৯ সালে তৃণমূলের আদিবাসী ভোটেব্যাঙ্কে ধস নামিয়েই বাংলায় ১৮টি আসন দখল করে নিয়েছিল বিজেপি। যদিও ২০২১-এ আবার সেই ভোট অনেকটাই তৃণমূল ফেরাতে সমর্থ হয়েছিল। তবে ঝাড়গ্রামে ভালো ফল করলেও বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার ভালো ফল করতে পারেনি তৃণমূল, এমনকী উত্তরের জেলা গুলিতেও তৃণমূল আদিবাসী ভোট ফেরাতে ব্যর্থ হয়।
এবা পঞ্চায়েত ভোটের আগে আদিবাসী ভোট ফেরাতে পরিকল্পনা করে এগোচ্ছিল তৃণমূল। বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা আদিবাসী মহল্লায় সঠিকভাবে রূপায়িত হয়েছে কি না, বাংলার সরকার তাদের কী কী সুবিধা দিচ্ছে, তা নিয়ে জনসংযোগ করে ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সলতে পাকানোর কাজ করছিল তৃণমূল। এখন অখিল গিরির মন্তব্যের পর আবার নতুন করে ভাবতে হবে।
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বহু সংখ্যক আদিবসীর বাস। লোকসভা ভোটের বিধানসভাওয়াড়ি ফল অনুযায়ী ১৬টি বিধানসভার মধ্যে বিজেপির দখলে ছিল ১৩টি আর তৃণমূলের দখলে ছিল তিনটি আসন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ১৬টির মধ্যে তৃণমূলের দখলে যায় ৯টি আসন, বিজেপি পায় সাতটি। তৃণমূলের পক্ষে ৪৫ শতাংশ ভোট যায়, ৪৪ শতাংশের বেশি ভোট পায় বিজেপি।