তৃণমূল ‘পরিবর্তনে’র খোঁজে আসানসোলে, বাবুল হাত ধরে সামনে এবার বিরাট সুযোগ
তৃণমূল ‘পরিবর্তনে’র খোঁজে আসানসোলে, বাবুল হাত ধরে সামনে এবার বিরাট সুযোগ
তৃণমূল পারেনি পরিবর্তন আনতে। ২০১৪-য় বিজেপির হাত ধরে আসানসোলে এসেছিল পরিবর্তন। টানা আটবার এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিল সিপিএম। ২০১৪-য় ত্রিমুখী লড়াইয়ে মাত দেন বাবুল সুপ্রিয়। তারপর ২০১৯-এ তৃণমূলের মুনমুন সেনকে হারিয়ে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। এবার সেই বাবুলই বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলের সামনে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল পরিবর্তনের ইতিহাস রচনা করার।
২০১৯-এর পর বিজেপিকে হারানোর সুযোগ
২০১৯-এর লোকসভায় বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান হলেও, ২০২১-এর পর থেকে ফের পিছোতে শুরু করেছে গেরুয়া রথ। বিজেপি নেতৃত্বে বদল এনেও এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজে পায়নি। সম্প্রতি ১১৩টি পুরসভার ভোটে কোনও লড়াই দিতে পারেনি বিজেপি। এর প্রধান কারণ বুথস্তরে সংগঠন না থাকা। তার ফলে ২১-এর নির্বাচনের পর শুধু হারার মুখ দেখতে হয়েছে বিজেপিকে।
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের জার্সি গায়ে বাবুল
পুরসভা ভোটে হারের হ্যাং-ওভার কাটতে না কাটতেই আগামী মাসে বাংলায় ফের উপনির্বাচন। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র ও বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট ঘোষমা হয়েছে ১২ এপ্রিল। এই দুই কেন্দ্রের মধ্যে আসানসোলের দিকে বিশেষ নজর রাজনৈতিক মহলের। কারণ আসানসোলের সাংসদ বর্তমানে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের জার্সি গায়ে তুলে নিয়েছেন।
বিজেপির হাত ধরে পরিবর্তন আসে ২০১৪-য়
তাই উপনির্বাচনে বিজেপি সেই ধাক্কা সামলে আসন ধরে রাখতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। ২০২৪-এর নির্বাচনের আগেই লোকসভার অ্যাসিড টেস্ট হয়ে যাবে আসানসোল কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে আজ পর্যন্ত জিততে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। টানা আটটা নির্বাচনে সিপিএম এই কেন্দ্র থেকে জয় পাওয়ার পর বিজেপির হাত ধরে প্রথম পরিবর্তন আসে ২০১৪ সালে।
২০১৪-র আগে কে কতবার জয়ী
তার আগে সিপিএমের বংশগোপাল চৌধুরী ২ বার, বিকাশ চৌধুরী ও হারাধন রায় ৩ বার করে জয়যুক্ত হন আসানসোলে। ৮৯ সাল থেকে ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে টানা জয় পেয়েছে সিপিএম। তার আগে পরপর দুবার কংগ্রেস এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিল ৮০ ও ৮৪ সালে। প্রথম দুই নির্বাচনে অর্থাৎ ৫৭ ও ৬২ সালেও এই কেন্দ্র জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। তারপর ৬৭ সালে সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টি এবং ৭১ ও ৭৭ সালে সিপিএম জয় পায়।
তৃণমূল না বিজেপি- কে শেষ হাসি হাসবে
সবশেষে বাবুল সুপ্রিয় বিজেপির টিকিটে পর পর দুবার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। এবার তিনি বিজেপি ও সাংসদ পদ ছেড়ে দেওয়ায় উপনির্বাচন হচ্ছে। ২০২৪-এ সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে উপনির্বাচনে তাই অ্যাসিড টেস্ট হয়ে যাবে বিজেপি ও তৃণমূলের। এই কেন্দ্রে তৃণমূল না বিজেপি- কে শেষ হাসি হাসে, তা দেখেই বোঝা যাবে, বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণ আদতে কোন পথে এগোচ্ছে।
তৃণমূল ও বিজেপি দুজনের কাছেই জয় গুরুত্বপূর্ণ
২০২৪-এর আগে অ্যাডভান্টেজ পেতে তৃণমূল ও বিজেপি দুজনের কাছেই এই কেন্দ্রে জয় গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূল যেমন চাইবে আসানসোলে জিতে প্রথমবার বিজয়ী হিসেবে নাম খোদাই করে রাখতে, তেমনই বিজেপিও চাইবে এই কেন্দ্রে জয় হাসিল করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ২০২৪-এর লড়াই জিইয়ে রাখতে। সেইসঙ্গে এটাও ঠিক যে, আসানসোল কেন্দ্রটি ধরে রাখতে না পারলে ২০২৪ ভোটের আগে আরও চাপ বাড়বে সুকান্ত মজুমদারদের ওপর। শুধু ভিনরাজ্যে জয়ের পর ২০২৪-এর আগে যে হাওয়া তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, সেই বেলুন চুপসে যাবে আসানসোলে হারলে।
তৃণমূল প্রথমবারের জন্য জয় তুলে নিতে চাইছে
বাবুল সুপ্রিয় এখন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে তিনি আসানসোলে প্রার্থী হননি। তৃণমূল এবার 'বিহারীবাবু' শত্রুঘ্ন সিনহাকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছে আসানসোলে। বাবুলের ছায়া, বিহারীবাবুর ছবি আর সর্বোপরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যারিশ্মায় ভর করে তৃণমূল প্রথমবারের জন্য জয় তুলে নিতে চাইছে এই কেন্দ্র থেকে। ২০১৯-এ মুনমুন সেনকে প্রার্থী করে বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদধে জয় পেতে চেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। মোদী হাওয়ায় ভর করে বিজেপি বিপুল ভোটে জয়ী হয়। এখন দেখার তৃণমূল তাদের পালে হাওয়া টেনে প্রথম জয়ের দেখা পায় কি না।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কতগুলি আসন ধরে রাখতে পারবে বিজেপি, অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট