এমন এক গ্রাম, যেখানে নাম নয় একে অপরকে ডাকে বিশেষ এক সুর ব্যবহারে
এমন এক গ্রাম, যেখানে নাম নয় একে অপরকে ডাকে বিশেষ এক সুর ব্যবহারে
ছোট্ট এক গ্রাম। পাহাড় ঘেরা। যেখানে কথা হয় সুরে সুরে। নাম নয়, কাউকে ডাকার জন্য হয় সুরের ব্যবহার। একেবারে পাখিদের মতোই কাকলির তানে একজন অপর জনকে ডাকে। কেউ পৃথিবীর আলো দেখার পর প্রথমেই হয় তাঁর নামকরণ হয়। এ গ্রামেও হয়, তবে নামকরণ নয়, নতুন অতিথির জন্য সৃষ্টি হয় বিশেষ সুর। এই প্রথা চলে আসছে বছরের পর বছর।
নাম ধরে ডাক নয়, সুরের ডাকে সাড়া
গ্রামের নামটি কংথং। মেঘালয়ের হুইসলিং গ্রাম বলেই তা বেশি পরিচিত। যেখানে লোকেরা সুর ব্যবহার করে একে অপরকে ডাকে। মেঘালয়ের এই ছোট্ট গ্রাম কংথং-এর মানুষেরা একে অপরের ডাকার জন্য একটি অনন্য উপায় অবলম্বন করেন। তাঁরা নাম ধরে ডাকার পরিবর্তে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য তৈরি একটি সুর গায়।
শিশুর জন্য স্থায়ী পরিচয় হয় সুর
পাখিদের মতোই প্রতিটি মা যেমন তাঁর সন্তানের জন্য একটি নতুন সুর তৈরি করেন, তেমনি গ্রামবাসীদের একে অপরকে সুর দিয়ে ডাকার রীতি রয়েছে এখানে। কংথং-এর মায়েরা তাঁদের শিশুদের ডাকতে বিশেষ সুর ব্যবহার করেন। এবং শিশুরাও দ্রুত তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে শেখে ওই সুরের প্রেক্ষিতে। এই শিসযুক্ত সুরটি আত্মস্থ করে শিশুরা। তা সকলের থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে এবং শিশুর জন্য স্থায়ী পরিচয়ে পরিণত হয়।
একটি প্রাচীন ঐতিহ্যের অঙ্গ সুরের ডাক
মেঘালয়ের এই গ্রামের প্রতিটি ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একটি সুর ব্যবহার করা হয়। 'জিংরওয়াই লবেই' নামে একটি প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ এটি। এখানে বসবাসকারী উপজাতির প্রথম মহিলার গানের প্রতীক 'জিংরওয়াই লবেই'। কংথং এর লোকেরা দিনের বেশিরভাগ অংশে একে অপরকে সম্বোধন করার জন্য সুর ব্যবহার করেন। আশেপাশের কিছু গ্রামও সুর ব্যবহার করে একে অপরকে ডাকার রীতি অনুসরণ করেন।
কংথংকে হুইসলিং গ্রামও বলা হয়
কংথং-এর বেশিরভাগ গ্রামবাসী বলিউডের গানের সুর দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং তাদের থেকে তারা তাদের প্রিয়জনের জন্য সুর তৈরি করেন। তিন সন্তানের মা পিন্ডাপ্লিন শাবোং প্রতিটি মায়ের হৃদয়ের মূল থেকে নির্দিষ্ট সুর বের হয়। একজন মায়ের দ্বারা সংকলিত সুরটি অন্যদের কাছে অদ্ভুত শোনাতে পারে। তবে এটি আসলে সন্তানের জন্য আনন্দ এবং ভালবাসা প্রকাশের একটা অঙ্গ। এই কারণেই কংথংকে হুইসলিং গ্রামও বলা হয়।
পাখির ডাক অনুযায়ী নবজাতকের নামকরণ
সুপারি গাছের ছায়ায় ছোট ছোট কুঁড়েঘর এবং খামার দিয়ে ঘেরা এই গ্রাম। এখানে প্রায় ৭০০ মানুষের বাস। এ গ্রামের মানুষ চাষ করে, বনে শিকার করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে গ্রামাঞ্চলে জীবনযাপন করে। বংশ পরম্পরায় কংথং-এর গ্রামবাসীরা এই শিস দেওয়ার ঐতিহ্য পালন করে আসছে। যখন একজন মহিলা গর্ভবতী হন, তখন তিনি একটি নির্দিষ্ট সুরের কথা ভাবেন। কখনও কখনও একটি পাখির ডাক অনুযায়ী নবজাতকের নামকরণ হয়। এটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্য।
স্বর্গীয় গ্রামে পর্যটকদের আকর্ষণ এই সুর
কংথং গ্রামবাসীরা মূলত মধু উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। এ গ্রামের মানুষেরা মধু সংগ্রহ করে তা জৈব মধু রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় পারদর্শী। মধুই হয়ে ওঠে এই গ্রামের অত্যন্ত বিক্রয়যোগ্য পণ্য এবং রাজ্যের নিজস্ব পণ্যগুলির মধ্যে একটি, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে এই গ্রামকে। পাহাড়ের মধ্যে প্রতিধ্বনিত সুর এক অনন্য সংস্কৃতির পরিচায়ক হয়ে উঠেছে। এবং এই স্বর্গীয় গ্রামে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে সেই সুরের লহরী।
মহিলাদের এই ৫ টি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ নয়