নদীর ১৩ হাজার ফুট ভিতরে আরও একটি নদী প্রবহমান! কোথায় রয়েছে এমন বিস্ময়
নদীর ১৩ হাজার ফুট ভিতরে আরও একটি নদী প্রবহমান! কোথায় রয়েছে এমন বিস্ময়
এ এক অদ্ভুত বিস্ময়! নদীর ভিতরে বয়ে চলেছে আরও একটা নদী। প্রকৃতির হাজারো বিস্ময়ের মধ্যেই একইসঙ্গে দুটি নদী বয়ে চলেছে আমাজন অববাহিকায়। আমাজন নদীর প্রায় ১৩ হাজার ফুট গভীরে বয়ে চলেছে হামজা নদী। তা আকার প্রায় আমাজন নদীর মতোই। কিন্তু প্রস্থে এই নদী আমাজনের থেকেও বড়।
নদীর দৈর্ঘ্য
আমাজনের দৈর্ঘ্য ৬৭০০ কিলোমিটার। আর তাঁর ভিতরে যে নদী বহমান সেই রিও হামজা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ মাত্র ২০০ কিলোমিটার কম। তবে সবচেয়ে আশ্চর্য হল এটি চওড়ায় ২০০ থেকে ৪০০ কিমি। আমাজনের থেকে চওড়ায় বহুগুণ বেশি। এই বিস্ময় লুকিয়ে রয়েছে পৃথিবীর বুকেই।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য
আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে অবাক করার মতো। এই হামজা নদীর জল লবণাক্ত এবং সমুদ্রের মতো। আর জলের স্রোত সেকেন্ডে মাত্র ১ মিলিমিটার। সেখানে অ্যামাজনের সেকেন্ডে ১৬ ফুট। আমাজন ও হামজা নদী পশ্চিম থেকে পূবে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত।
নদীর প্রস্থ
আমাজন নদী প্রস্থে ১ কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। আর হামজা নদী ২০০ কিমি থেকে ৪০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এটাই বিস্ময়কর। আমাজনের ভিতরে যে নদী বহমান সেই হামজা নদী প্রস্থে কম করে ২ থেকে চারগুণ। উপরের নদীটির প্রস্থ কম। নীতের নদীর প্রস্থ অনেক বেশি।
নদীর অবস্থান
পর্তুগিজ নাম রিও হামজা। হামজা নদী নামেই তা পরিচিত। ব্রাজিল এবং পেরুর মধ্যে এটি ধীরগতিতে প্রবাহিত। হামজা নদী এবং আমাজন নদী পৃথিবীর ভূত্বকের বিভিন্ন স্তরে প্রবাহিত যমজ-নদী। এবং বিশ্বের নদী ব্যবস্থায় ভূতাত্ত্বিকভাবে অস্বাভাবিক এবং বিস্ময়কর উদাহরণ তৈরি করেছে।
নদীর আবিষ্কার
২০১১ সালে রিও ডি জেনেইরোতে জিওফিজিক্যাল সোসাইটির একটি সভায় এই নদীর আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। ব্রাজিলের ন্যাশনাল অবজারভেটরির ভারতীয় বিজ্ঞানী ভ্যালিয়া মান্নাথাল হামজার সম্মানে রাখা হয়েছে এই নদীর নাম। তিনি চার দশক ধরে এই অঞ্চলের উপর গবেষণা করেছেন।
নদীর বর্ণনা
হামজা এবং আমাজন হল দুটি প্রধান নিষ্কাশন ব্যবস্থা। হামজার উল্লিখিত প্রবাহের হার প্রতি সেকেন্ডে আনুমানিক তিন হাজার কিউবিক মিটার বা ১১০ হাজার ঘনফুট। আমাজনের মাত্র তিন শতাংশ। এটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে চলে গেছে, পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার হাজার মিটার বা চার কিলোমিটার বা ১৩ হাজার ফুট নীচে এর অবস্থান। আমাজন নদীর পথ অনুসরণ করে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
হামজার শুরু ও শেষ
আমাজন নদীর ১৩ হাজার ফুট গভীরে অবস্থিত হামজা নদীটি আন্দিজে সৃষ্টি হয়েছে। এবং তা আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রবাহের পুরো পথটাই হামজা গিয়েছে আমাজন নদীর ভিতর দিয়ে। উল্লেখ্য, আমাজন নদী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আন্দিয়ান পাদদেশ থেকে আটলান্টিক উপকূলে মিশেছে।
নদীর ভূগর্ভস্থ গতিপথ
এই ভূগর্ভস্থ জলাশয়গুলির গঠন ও অস্তিত্ব নিয়ে ভূতাত্ত্বিক কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ছিদ্রযুক্ত এবং ভেদযোগ্য পাললিক শিলাগুলি জলকে আরও গভীরে নিয়ে যায়। পূর্ব-পশ্চিম প্রবাহের প্রবণতা এবং আমাজন অববাহিকার উত্তর সীমান্তে উপস্থিত কার্স্ট টপোগ্রাফি নদীতে জল সরবরাহে বিশেষ ভূমিকা নেয়। যদি দুর্ভেদ্য শিলাগুলি উল্লম্ব প্রবাহকে থামিয়ে দেয়, তবে টপোগ্রাফি পশ্চিম থেকে পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত করে জলধারাকে।
আরও ভূগর্ভস্থ নদী
হামজার বিপরীতে মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপের ১৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ নদী এবং ফিলিপাইনের পুয়ের্তো প্রিন্সেসা সাবটেরানিয়ান রিভার ন্যাশনাল পার্কের ৮.২ কিলোমিটার দীর্ঘ কাবায়ুগান নদী কার্স্ট টপোগ্রাফির জন্য তৈরি হয়েছে। এই জায়গাগুলির জল কার্বনেট শিলাকে দ্রবীভূত করে ভূগর্ভস্থ নদী হিসেবে গতিপথ তৈরি করেছে।
গবেষণা এবং বিতর্ক
১৯৭০ এবং ১৯৮০-র দশকে পেট্রোব্রাস তেল খনির ২৪১টি নিষ্ক্রিয় তেল কূপ থেকে সংগৃহীত তাপীয় তথ্য ব্যবহার করে ভ্যালিয়া হামজা-র নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল হামজা নদী আবিষ্কার করেছিল। নদীর ভিতরে একটি প্রবাহ বিদ্যমান বলে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। প্রবাহের গতি হিমবাহের তুলনায় ধীর।
বৈজ্ঞানিক বৈধতা প্রদানে
নদী আবিষ্কারের প্রমাণটি রিও ডি জেনেরিওতে ব্রাজিলিয়ান জিওফিজিক্যাল সোসাইটির ১২তম আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে উপস্থাপিত হয়েছিল এবং গবেষণা দল উল্লেখ করে গবেষণায় ব্যবহৃত কৌশলগুলি ভূ-বিজ্ঞানের জন্য অস্বাভাবিক নয়। বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন, গবেষণার ফলাফল প্রবহমান জলাধারের অস্তিত্বের নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক বৈধতা কয়েক বছরের মধ্যে প্রকাশিত হবে।