তুমি রবে নীরবে! এ এক অন্য প্রেমিকের গল্প, সব্যসাচী–ঐন্দ্রিলার প্রেম কেমন ছিল জানুন
ভালোবাসা কি শুধুমাত্র শরীরি আকর্ষণ? কফি ডেট, হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটা, ঠোঁটে ঠোঁট রেখে উষ্ণ চুম্বন, প্রেম কি শুধুমাত্র এগুলিই দাবী করে? অনেকে হয়ত বলতে পারেন ভালোবাসার অঙ্গই তো এগুলি। কিন্তু প্রেম তথা ভালোবাসার এই সংজ্ঞাকে সম্পূর্ণ অন্য রূপে সাজিয়েছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা ও অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরি। যাঁদের ভালোবাসা বর্তমান প্রজন্মের কাছে এক অন্য নজির গড়েছে।
নজির গড়লেন সব্যসাচী
গত ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করা হয় হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে। জীবনযুদ্ধের এই লড়াইয়ে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে ছায়ার মতো হাসপাতালেই ছিলেন সব্যসাতী চৌধুরি। হাসপাতাল থেকে এক পাও নড়েননি তিনি। কোমায় চলে যাওয়া প্রেমিকা ঐন্দ্রিলার হাত ধরে শুধু বসেছিলেন আর প্রার্থনা করে গিয়েছেন কোনও মিরাকেলের। খাওয়া বলতে হাসপাতালের কাছে এক দোকানে ম্যাগি খেয়ে থেকেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা বলছেন সব পুরুষ সব্যসাচী হতে পারেন না। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চলাকালীন ঐন্দ্রিলার হাত শক্ত করে ধরে থাকার সাহস সব্যসাচী দেখিয়েছেন। সব্যসাচী ও ঐন্দ্রিলার প্রেম কালজয়ী লেখকদের প্রেমের গল্পকেও হার মানিয়েছে।
প্রথম দেখা ও প্রেম
২০১৫ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। ক্যানসারকে জয় করে ফিরে নিজের অভিনয় জীবনের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে 'ঝুমুর' ধারাবাহিকে প্রথম সব্যসাচীর সঙ্গে আলাপ হয় অভিনেত্রীর। প্রথম নজরেই প্রেম নয়, শুরু হয় বন্ধুত্ব দিয়ে। ফোনে কথাবার্তা শুরু হয়। সব্যসাচীকে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন তাঁরা জানেন অভিনেতা বাস্তব জীবনে খুবই সাদামাটা থাকতে ভালোবাসেন, কম কথা বলেন। প্রথাগত 'আই লাভ ইউ' অথবা ভালোবাসার প্রকাশ হয়ত সেভাবে হয়নি। তবে কখন যে একে-অপরকে মন দিয়ে ফেলেছেন তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। তবে সব্যসাচী ভালোবাসতে পারেন আর সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।
দ্বিতীয়বার ক্যানসারের সময় পাশে ছিলেন সব্যসাচী
প্রথম ডেট থেকে হাত ধরে চলা সবই চলছিল সুন্দরভাবে। কিন্তু ছন্দপতন ঘটে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দ্বিতীয়বার ক্যানসারে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। শুরু হয় কেমো থেরাপি। ঐন্দ্রিলা এক রিয়্যালিটি শোয়ে এসে জানিয়েছিলেন, কেমো থেরাপির পর দিল্লির হাসপাতালে শুয়ে যখন তিনি চোখ মেলেছিলেন তখন তিনি সামনে তাঁর মনের মানুষ সব্যসাচীকে দেখতে পান। অভিনেত্রী সেই সময় জানিয়েছিলেন যে কেমোতে শারীরিক কষ্ট প্রচণ্ড হলেও মানসিক এক প্রশান্তি ছিল। কেমোর কারণে ঐন্দ্রিলার সুন্দর চুলকেও বিদায় জানাতে হয়, কঠিন ক্যানসার রোগ অভিনেত্রীর যৌবনও প্রায় কেড়ে নিয়েছিল। প্রেমে যে শরীরি আকর্ষণ থাকে তা কিন্তু ছিল না। এতকিছুর পরও সব্যসাচী ঐন্দ্রিলার হাত ছাড়েননি। সব্যসাচী ব্যতিক্রমী। কেমোর পর ভগ্ন শরীর। মাথায় চুল নেই। এমন নায়িকার সঙ্গেও নাচতে পারেন প্রেমিক। এ তো ছবিতে হয়। বাস্তবেও হতে পারে। দেখালেন সব্যসাচী। তাই তো জন্মদিনের দিন সব্যসাচীর জন্য ঐন্দ্রিলা লিখলেন, 'আমার বেঁচে থাকার কারণ'।
সব্যসাচী ও ঐন্দ্রিলার প্রেম ব্যতিক্রম
সল্টলেকে সদ্য খোলা সব্যসাচী ও অভিনেতা সৌরভ দাসের ক্যাফেতে প্রায়ই দেখা যেত ঐন্দ্রিলাকে। সব্যসাচীর নতুন উদ্যোগের পাশে দাঁড়াতে ঐন্দ্রিলাও ছিলেন বদ্ধপরিকর। তাঁরা যেন একে-অপরের জন্যই তৈরি হয়েছিলেন। তাঁদের প্রেম নতুন এক নজির গড়েছিল। তবে সব্যসাচী নিজেকে ব্যতিক্রম প্রমাণিত করলেন যেদিন ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাওড়ার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন অভিনেত্রী। ফেসবুকে ঘোষণা করেছিলেন নিজের হাতে নিয়ে এসেছেন, নিজের হাতে নিয়ে যাবেন। আশায় ছিলেন মিরাকেল হওয়ার। তবে ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না আর। সব্যসাচীর কাছে ফিরে এলেন না তাঁর ঐন্দ্রিলা। শনিবার রাতে দশবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। এরপরই ফেসবুক থেকে যাবতীয় পোস্ট উড়িয়ে দেন অভিনেতা সব্যসাচী। হয়ত তিনি তখনই বুঝেছিলেন বিধাতা কী চায়। রবিবার দুপুরে প্রয়াত হন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। ঐন্দ্রিলার শেষকৃত্য পর্যন্ত তাঁর পাশে ছিলেন তিনি। তবে ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যু হলেও মৃত্যু হয়নি সব্যসাচী ও তাঁর ভালোবাসার। সবাই তো যথার্থ অর্থে প্রেমিক হয়ে উঠতে পারেন না, সব্যসাচী পেরেছিলেন। আর তাঁর মধ্যেই বেঁচে থাকবেন সব্যসাচীর প্রিয়তমা ঐন্দ্রিলা।