দেশের এমন একটি নদী যার জল ভুলেও স্পর্শও করে না মানুষ! অদ্ভুত সেই কারণ
দেশের এমন একটি নদী যার জল ভুলেও স্পর্শও করে না মানুষ! অদ্ভুত সেই কারণ
ভারতে নদীকে মায়ের মর্যাদা দেওয়া হয়। নদীগুলোকে খুবই পবিত্র মনে করা হয় দেশে। নদীকে দেবী গঙ্গা মনে করে পূজা করা হয়, প্রদীপ দান করা হয়, করা হয় আরতি। বিশেষ অনুষ্ঠানে নদীতে স্নানের প্রথাও অনন্তকাল ধরে চলে আসছে ভারতে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন একটি নদী আছে, যার জল মানুষ ভুলে স্পর্শ করে না
কেন এই নদী জল অস্পৃশ্য তা ভাবার বিষয়
ভারতে নদ-নদীর জলকে পবিত্র মনে করে পুজোপার্বনে ব্যবহার করা হয়। কোনও শুভ কাজে বা শুদ্ধিকরণেও নদীর জল বা গঙ্গাজলের দরকার পড়ে। সামগ্রিকভাবে নদীগুলি এখানে শুধুমাত্র জীবনরেখা হিসাবে বিবেচিত হয় না, তবে তাদের মহান ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন এই নদী জল অস্পৃশ্য তা ভাবার বিষয়।
কোন সে নদী, কোথায়ই বা অবস্থিত তা
হিন্দু ধর্মে গঙ্গাকে সবচেয়ে পবিত্র নদী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সরস্বতী, নর্মদা, যমুনা, ক্ষিপ্রা প্রভৃতি নদীরও অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এসব নদীতে স্নানের মহা উৎসব কুম্ভের আয়োজন করা হয়। আবার যে নদীর জল ভুলেও স্পর্শ করে না মানুষ, তার নাম হল কর্মনাশা নদী। উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত এই নদী।
কিন্তু কেন? নামেই লুকিয়ে সেই কারণ
কিন্তু কেন? নদীর নাম কর্মনাশা। দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথম শব্দটি হল কর্ম এবং দ্বিতীয়টি হল নাশা। বিশ্বাস করা হয়, কর্মনাশা নদীর জল স্পর্শ করলে কাজ পণ্ড হয়ে যায়। ভালো কাজও ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সেই বিশ্বাস থেকেই মানুষ এই নদীর জল স্পর্শ করে না। কোনও শুভ কাজে ব্যবহারও করে না।
নদীর গতিপথ, গঙ্গায় মিশেও পবিত্র হয়নি কর্মনাশা
কর্মনাশা নদীটি বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীর বেশিরভাগ অংশই উত্তরপ্রদেশে। উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র, চন্দৌলি, বারাণসী এবং গাজিপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বক্সারের কাছে গঙ্গায় মিলিত হয়েছে এই কর্মনাশা নদী। গঙ্গাকে ছুঁয়েও এই নদী তাঁর পবিত্রতা ফিরে পায়নি। তা অচ্ছ্যুৎ হয়েই রয়ে গিয়েছে
পৌরাণিক কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে এই নদীকে ঘিরে
শোনা যায়, বহুকাল আগে এই নদীর চারপাশে পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তখন মানুষ ফল খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু এই নদীর জল ব্যবহার করত না। এমনই এক পৌরাণিক কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে এই নদীর জলস্পর্শকে কেন্দ্র করে কেউ সাহস করে না নদীর জল পান করতে। এমনকী নদীর জল স্পর্স পর্যন্ত করে না কেউ।
ঋষি বিশ্বামিত্র যখন রাজা সত্যব্রতকে স্বর্গে পাঠিয়েছিলেন
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, রাজা হরিশচন্দ্রের পিতা সত্যব্রত একবার তাঁর গুরু বশিষ্ঠের কাছে শারীরিকভাবে স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু গুরু রাজি হননি। তারপর রাজা সত্যব্রত গুরু বিশ্বামিত্রের কাছে একই অনুরোধ করেন। বশিষ্ঠের সঙ্গে শত্রুতার কারণে বিশ্বামিত্র তাঁর দৃঢ়তার শক্তিতে সত্যব্রতকে স্বর্গে পাঠান। তা দেখে ইন্দ্রদেব ক্রুদ্ধ হয়ে রাজার মস্তক নামিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন।
রাজা সত্যব্রতের লালা পৃথিবীতে নেমে এসেছিল নদী আকারে
তারপরই ঘটে বিস্ময়কর সেই ঘটনা। ঋষি বিশ্বামিত্র তাঁর দৃঢ়তা দিয়ে রাজাকে স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে থামিয়ে দিয়ে দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই সময় রাজা সত্যব্রত আকাশে উল্টোভাবে ঝুলতে থাকেন, যার ফলে তাঁর মুখ থেকে লালা পড়তে শুরু করে। এই লালা নদী আকারে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল বলে বিশ্বাস।
রাজা সত্যব্রতর লালা দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল নদী কর্মনাশা
রাজা সত্যব্রত যখন গুরু বশিষ্ঠের নির্দেশ উপেক্ষা করে স্বর্গে যান, তখন ঋষি রাজা সত্যব্রতকে সাহসিকতার জন্য চন্ডাল হওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলেন। এটা বিশ্বাস করা হয় রাজা সত্যব্রতর লালা দিয়ে যে নদী সৃষ্টি হয়েছিল, তা ওই কর্মনাশা নদী। তারপর রাজাকে দেওয়া অভিশাপের কারণে ওই নদীকে অভিশপ্ত বলে বিবেচিত করা হয়।
কর্মনাশা নদীর জলে সকল কর্ম পণ্ড হবে বিশ্বাস বহমান
পৌরানিক ওই কাহিনি অনুসারে মানুষের বিশ্বাস আজ বহমান। নদীর জলের স্রোত বয়ে চললেও ওই কর্মনাশা নদীর জলে সকল কর্ম পণ্ড হবে বিশ্বাস করা হয় এখনও। তাই কেউ আর ওই নদীর জল পান করে না বা কখনও স্পর্শও করে না। কোনও শুভ কাজে তা ব্যবহারও করা হয় না। সেই ধারা আজও চলে আসছে সমানে।
প্রতীকী ছবি