বিজেপির বিরুদ্ধে কী অবস্থান কংগ্রেস ও তৃণমূলের, জানতে চাইলেন সীতারাম ইয়েচুরি
বিজেপির বিরুদ্ধে কী অবস্থান কংগ্রেস ও তৃণমূলের, তা জানাতে বার্তা পাঠালেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে সব দলকেই নিজেদের ধ্যান-ধারণার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিজেপির বিরুদ্ধে কী অবস্থান কংগ্রেস ও তৃণমূলের, তা জানাতে বার্তা পাঠালেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে সব দলকেই নিজেদের ধ্যান-ধারণার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাই কংগ্রেস ও তৃণমূল কী ভাবছে, তা স্পষ্ট করার সময় এসেছে। ২০২৪-এর আগে ইয়েচুরির এই বার্তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণও বটে।
বুধবার থেকে কেরলের কান্নুরে শুরু হয়েছে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। সেই পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন সীতারাম ইয়েচুরি। সেখানেই উদ্বোধনী ভাষণে ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে। সেজন্যই তিনি কংগ্রেস ও তৃণমূলকে তাদের অবস্থান জানানোর কথা বলেন।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এদিন অবশ্য কংগ্রেসের নাম করলেও আঞ্চলিক দলগুলির নাম না করেই বিজেপিকে নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, দেশের স্বার্থের কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলির উচিত নিজেদের মধ্যেকার ইস্যুগুলি মিটিয়ে নেওয়া। বৃহত্তর স্বার্থেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক এসেছে, তাই আর কালবিলম্ব করা যাবে না।
ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে গেলে এবার জোটবদ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর এই জোটের নেতৃত্বে কংগ্রেসকে এগিয়ে আসতে হবে। ঘরের ঝগড়া মিটিয়ে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তপোক্ত অবস্থান না নিলে দেশের বিপদ বাড়বে। পাঁচ রাজ্যের বিপর্যয়ের পর কংগ্রেসের অন্দরে বিক্ষুব্ধ রাজনীতি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের কথা ভেবে কংগ্রেস নেতাদের উচিত নিজেদের ঝগড়া মিটিয়ে নেওয়া।
সীতারাম ইয়েচুরি কিছু আঞ্চলিক দল বলতে মূলত তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি ও তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির কথা বলতে চেয়েছেন তিনি। কেননা এই তিন দলই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে নানা বক্রোক্তি করে চলেছে। এর মধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের বিবাদ সবথেকে বেশি আলোচিত। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বলেছেন বিজেপি বিরোধী জোটেকর নেতৃত্বে তাঁরা কংগ্রেসকে চান না। কারণ কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। আবার কংগ্রেস উল্টে অভিযোগ করেছে, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের বোঝাপড়া রয়েছে। তাই তারা বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কংগ্রেসকে ভেঙে বিজেপির সুবিধা কররে দিচ্ছে। ত্রিপুরায় তৃণমূল যে অবস্থান নিয়েছে গোয়াতেও একই অবস্থান নিয়ে বিধানসভ নির্বাচনে বিজেপির জয়ের কড়ি জোগাড় করে দিয়েছে।
আর কংগ্রেসকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে আম আদমি পার্টি ও তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির। তাই তাদের অবস্থানও স্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এছাড়া বিজেডি (বিজু জনতা দল) ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসও রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক এরকম আদায়-কাঁচকলায় নয়। ডিএমকে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, আরজেডি, এনসিপি, শিবসেনা, জেডিএস-সহ ইউপিএ-র দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক মধুরই। কংগ্রেসের নেতৃত্ব মেনে নিতে তাদের কোনও সমস্যা নেই। তবে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির সঙ্গে আবার কংগ্রেসের সম্পর্কের এখন অবনতি হয়েছে।
কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলির ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়ার বার্তা যেমন সীতারাম ইয়েচুরি দিয়েছেন, একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, শুধু ভোটের বাক্সে, সামাজিক স্তরেও গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই তীব্রতর করতে হবে। জোটের প্রশ্ন তিনি বলেন, অতীতের কোনও নির্বাচনে ভোটের আগে জোটের কোনও নজির নেই। যতবার অ-কংগ্রেসি বা অ-বিজেপি সরকার গঠন হয়েছে, জোট হয়েছে ভোটের পরে। কিন্তু বিরোধী দলগুলির বোঝাপড়া গড়ে তোলা আশু কর্তব্য বলে তিনি মনে করেন। এজন্যই তিনি বার্তা দিয়েছেন, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির অবস্থান স্পষ্ট করার।