মমতা চাইছেন কংগ্রেস ছাড়া পথ চলতে! অভিষন্ধি ফাঁস করে ভবিষ্যৎ বাতলে দিল শিবসেনা
মমতা চাইছেন কংগ্রেস ছাড়া পথ চলতে! অভিষন্ধি ফাঁস করে ভবিষ্যৎ বাতলে দিল শিবসেনা
জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন তাঁর নেতৃত্বে জোট গড়ে তুলতে। সেই জোটে কংগ্রেসের কোনও স্থান নেই। কারণ কংগ্রেসকে এন্ট্রি দিলেই তাঁকে নেতৃত্ব খোয়াতে হবে। তাই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তিনি জাতীয় ক্ষেত্রে শক্তিশালী বিকল্প গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু সেই কাজে প্রথমেই হোঁচট খেলেন মমতা।
কংগ্রেস ভেঙে সংগঠন, বন্ধু খুঁজতেও দরবার
দিল্লিতে দরবার করে তিনি কংগ্রেসকে ভেঙেছেন। অন্য দল থেকেও প্রাক্তন সাংসদদের তিনি দলে নিয়েছেন। তার আগে গোয়া বা ত্রিপুরায় তিনি কংগ্রেসকে ভেঙেছেন। মেঘালয়ে এক লাফে প্রধান বিরোধী দলের তকমাও আদায় করে নিয়েছেন। কংগ্রেসকে ভেঙে জাতীয় রাজনীতিতে পায়ের তলায় জমি খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বন্ধু খুঁজতেও তৎপর হয়েছেন।
জাতীয় রাজনীতিতে মজবুত অবস্থান তৈরি করতে
জাতীয় রাজনীতিতে তিনি বন্ধু খুঁজতে প্রথমেই পাড়ি দিয়েছিলেন বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ে। সেখানে এক ঢিলে তিনি দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন। আবার রথ দেখা কলা বেচতেও তাঁর মুম্বই পাড়ি। নতুন বছরেই তিন বঙ্গে শিল্প সম্মেলন করতে চলেছেন। সেই সন্মেলনে মুম্বইয়ের শিল্পপতিদের তিন আহ্বান করে এলেন। আর একইসঙ্গে তিনি দলকে জাতীয় রাজনীতিতে মজবুত অবস্থান দিতে চাইলেন।
বন্ধু খুঁজতে গিয়ে হোঁচটও খেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূল সুপ্রিমো দলকে জাতীয় ক্ষেত্রে মজবুত ররা আর বন্ধু খোঁজার জন্য প্রথমেই শরণাপন্ন হয়েছিলেন প্রবীণ এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারের। বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে তাঁর সখ্যতা রয়েছে। তাঁকে সঙ্গে নিতে পারলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ অনেক হালকা হয়ে যেত। সেই কাজ করতে গিয়ে তিনি হোঁচটও খেলেন।
কার্যত কংগ্রেসকে ছাড়াই জোট গড়ার বার্তা মমতার!
শারদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে তিনি প্রবীণ নেতাকে পাশে নিয়ে অস্বীকার করেন ইউপিএকে। মমতার কথায় ইউপিএ-র কোনও অস্তিত্বই নেই। আর কংগ্রেস নেতৃত্বের দুর্বলতাই যে বিজেপির উত্থানের জন্য দায়ী তা জানিয়ে দেন মমতা। এরপরই তিনি শক্তিশালী বিরোধী ঐক্যের কথা বলে কার্যত কংগ্রেসকে ছাড়াই জোট গড়ার বার্তা দেন।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাবে না
আর এরপরই শিবসেনার মুখপত্র 'সামনা'তে লেখা হয়- কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধী জোট সম্ভব নয়। কারণ, তাতে ফ্যাসিস্ট শক্তির পালেই হাওয়া লাগবে। তৃণমূলের উদ্দেশ্য করেই সেই আর্টিকেলে শিবসেনা তার অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। শিবসেনা জানিয়ে দেন, ফ্যাসিস্ট বিজেপির পালে হাওয়া লাগুক এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না তারা। অর্থাৎ কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে তারা হাত মেলাবে না।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জোট গড়ার পরিকল্পনা মমতার!
শিবসেনা এই বার্তা দেওয়ার পর ফের মুখপত্র 'সামনা'তে দলের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় রাউত তাঁর কলামে লিখলেন- তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জোট গড়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি সম্প্রতি মহারষ্ট্রে এসে বলেছেন তিনি এ রাজ্যে রাজনৈতিক জল মাপতে যাবেন না। কারণ এখানে শিবসেনা ও এনসিপি যথেষ্টই শক্তিশালী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার বাইরে গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয় ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যে সংগঠন বাড়াচ্ছে। কিন্তু সেই তালিকায় তিনি মহারাষ্ট্রকে রাখেননি।
নতুন জোট তৈরি করতে চাইছেন মমতা : শিবসেনা
তিনি যেভাবে ইউপিএ এবং কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন, তাতে স্পষ্ট তিনি নতুন জোট তৈরি করতে চাইছেন। সেই জোটে কংগ্রেস বান্ধব দলগুলিকে রাখলেও তিনি কংগ্রেসকে ভাবছেন না। কিন্তু কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি বিরোধী জোটের কোনও মূল্য নেই, তা আগেই জানিয়েছিলেন শিবসেনা সাসংদ সঞ্জয় রাউত। এখন শিবসেনা তা নিজেদের মুখপত্রে লিখে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিয়ে দ্বিচারী নয় শিবসেনা
সম্প্রতি তৃণমূলের মুথপত্র 'জাগো বাংলা'য় এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে আসন্ন ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী নন। এবার তা নিয়েই শিবসেনাত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল। শিবসেনা যে বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিয়ে কোনও দ্বিচারিত করতে চায় না তা স্পষ্ট করে দেওয়া হল মুখপত্র 'সামনা'য়।
কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি জোট সম্ভব নয়, সাফ বার্তা
শিবসেনার তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হল- কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি জোট সম্ভব নয়। কিন্তু কংগ্রেস ছাড়াই নতুন কিছু করার কথা ভাবছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা যে সম্ভব নয়, পরোক্ষভাবে তা জানিয়ে দিলেন শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। শারদ পাওয়ারও একথা আগে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আগে এ কথা জানিয়েছিলেন তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরও।
কংগ্রেস ছাড়া বিরোধী ঐক্যের কথা বলেননি মমতা
সম্প্রতি প্রশান্ত কিশোর আবারও বলেন, কংগ্রেসকে বিরোধী জোটে দরকার। কিন্তু কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন। নাম না করে রাহুল-প্রিয়াঙ্কাকে এক হাত নেন। কংগ্রেস এরপর পাল্টা দেয় প্রশান্ত কিশোরকে। তাঁকে আদর্শহীন সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ব্যবসায়ী বলেও কটাক্ষ করা হয় কংগ্রেসের তরফে। তৃণমূলও হোঁচট খেয়ে বলতে শুরু করেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কংগ্রেস ছাড়া বিরোধী ঐক্যের কথা বলেননি। মোট কথা, ২০২৪-এর আগে বিজেপি বিরোধী রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয় তা-ই দেখার।