কেন আমাদের সূর্য এত বিস্ফোরক? ৬০ বছরের পুরনো রহস্য উন্মোচন করলেন বিজ্ঞানীরা
সূর্য হল শক্তির চূড়ান্ত উৎস। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। কারণ তারা ফিউশন রিঅ্যাক্টর তৈরি করতে চান। যা একই স্তরের উৎপাদন করতে সক্ষম।
সূর্য হল শক্তির চূড়ান্ত উৎস। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। কারণ তারা ফিউশন রিঅ্যাক্টর তৈরি করতে চান। যা একই স্তরের উৎপাদন করতে সক্ষম। সূর্যের একটি গোপন পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে এর ফ্লেয়ার বিস্ফোরণ মিনিটে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারে এবং ২০ হাজার বছর ধরে বিশ্বকে শক্তি দিতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এখন সেই সৌর রহস্য ভেদে প্রায় ছয় দশক ধরে কাজ করছেন। এই বিস্ফোরক প্রক্রিয়াটিকে চৌম্বকীয় পুনঃসংযোগ বলা হয়, যা সৌর শিখাকে ট্রিগার করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই প্রক্রিয়াটি পারমাণবিক সংমিশ্রণে আরও হিংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে সৌর-ঝড় সাংঘাতিক রূপ নিতে পারে। এবং তা পৃথিবী-প্রদক্ষিণ প্রযুক্তিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ারিক মাল্টিস্কেল মিশন বা এমএমএম-এর সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীরা একটি তত্ত্ব তৈরি করেছেন। তা ব্যাখ্যা করে কীভাবে সবথেকে বিস্ফোরক ধরনের চৌম্বক দ্রুত পুনঃসংযোগ করতে পারে। এবং কেন এটি একটি ধারাবাহিক গতিতে ঘটে। এই ব্যাখ্যাতেই স্পষ্ট হয়েছে সূর্যের বারবার বিস্ফোরিত হওয়ার কারণ।
নাসা জানিয়েছে, চৌম্বকীয় পুনঃসংযোগ একটি প্রক্রিয়া, যাকে কখনও কখনও পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বলা হয়। গ্যাস তার পরমাণুগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে শক্তিপ্রাপ্ত হয়ে প্লাজমা গঠন করে। এর ফলে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেক্ট্রন এবং ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়নগুলির বিভক্ত হয়ে যায়। এই উপাদানটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল।
বিজ্ঞানীরা এর ফলে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এই ধরনের চৌম্বকীয় পুনঃসংযোগ দ্রুততার সঙ্গে হয়। ডার্টমাউথ কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়ি-সিন লিউ বলেছেন, এটিকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করার জন্য আমাদের কাছে এখন একটি তত্ত্ব রয়েছে। সেই তত্ত্ব নিয়েই আলোচনা করেন তিনি।
সূর্য কেন এত বিস্ফোরক? নেচার্স কমিউনিকেশন ফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি দেখায় যে, কত দ্রুত পুনঃসংযোগ ঘটে বিশেষভাবে সংঘর্ষবিহীন প্লাজমাতে এক ধরনের প্লাজমা যার কণাগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ছড়িয়ে থাকে, যে পৃথক কণা একে অপরের সঙ্গে কখনও সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না। নতুন তত্ত্বটি বলে, প্রক্রিয়াটিতে চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বৈদ্যুতিক স্রোতের মধ্যে একটি মিথস্ক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
দ্রুত চৌম্বকীয় পুনঃসংযোগের সময় প্লাজমাতে চার্জযুক্ত কণা আয়ন এবং ইলেকট্রন একটি দল হিসাবে চলা বন্ধ করে দেয়। আয়ন এবং ইলেকট্রন আলাদাভাবে চলতে শুরু করলে তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। একটি অস্থির শক্তি ভ্যাকুয়াম তৈরি করে এবং পুনঃসংযোগ ঘটে। ওই অস্তির শক্তির ভ্যাকুয়ামের চারপাশে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলির চাপের কারণে ভ্যাকুয়াম বিস্ফোরিত হয়, যা দ্রুত প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রকাশ করে।
কীভাবে চৌম্বকীয় পুনঃসংযোগ কাজ করে? তা সম্বন্ধেও ব্যাখ্যা দিয়েছে এই গবেষণা। গবেষণার বলা হয়েছে, আমাদের পৃথিবীতে প্রভাব ফেলতে পারে ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় এবং সৌর শিখা। যদি আমরা বুঝতে পারি কীভাবে পুনঃসংযোগ শুরু হয়, এটি শক্তি গবেষণাতেও সাহায্য করবে কারণ গবেষকরা ফিউশন ডিভাইসে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলিকে আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।"