৫০ বছর পর চাঁদে মানুষ পাঠাতে কেন উদ্যোগী নাসা, আর্টেমিস মিশনকে ঘিরে স্বপ্ন একরাশ
৫০ বছর পর চাঁদে মানুষ পাঠাতে কেন উদ্যোগী নাসা, আর্টেমিস মিশনকে ঘিরে স্বপ্ন একরাশ
১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে চাঁদে অবতরণ করেছিল মানুষ। নাসার অ্যাপোলো মিশনে সেই শেষবার মানুষের চন্দ্রাভিযান সম্ভবপর হয়েছিল। সেইথেকে ৫০ বছর অতিক্রান্ত। আর চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারেনি কোনও মহাকাশ সংস্থা। নাসা, এসা, ইসরো- কেউ সফল হয়নি চাঁদের মানুষ পাঠাতে। সম্প্রতি নাসা আর্টেমিস মিশন শুরু করতে চলেছে চন্দ্রাভিযানের লক্ষ্যে, তা বারবার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন।
চাঁদের মাটিতে পা শেষবার ৫০ বছর আগে
মানুষ প্রথম চাঁদে যায় ১৯৬৯ সালে। সেই ঘটনা সারা পৃথিবীতে আলোড়ন তুলে দিয়েছিল। অ্যাপোলো-১১ মিশন থেকে ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই চাঁদের পৃষ্ঠে পা রেখেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং। তারপর ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৬ বার মনুষ্যবাহী মিশন হয়েছে চন্দ্রাভিযানে। চাঁদের পিঠে হেঁটেছেন মোট ১২ জন। তাঁরা ছবি তুলেছেন, পতাকা লাগিয়েছেন, পরীক্ষা চালিয়েছেন। তারপর নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে চাঁদ থেকে। শেষ অভিযান ১৯৭২ সালে। চাঁদে পৃথিবীর শেষ অতিথি ছিলেন নভোচারী ইউজিন সারনান।
৫০ বছর পর নাসা উদ্যোগ আপাতত স্থগিত
তারপর অর্ধশতাব্দী কেটে গিয়েছে আর কোনও মানুষ তাঁদের পা রাখেননি। ৫০ বছর পর নাসা উদ্যোগ নিয়েছে চাঁদে মানুষ পাঠানোর। নাসা আর্টেমিস মিশন শুরু করতে চলেছে চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য। কিন্তু সেই মিশনে প্রথম দুবারের প্রচেষ্টা রীতিমতো বাধাপ্রাপ্ত হল। দুবার চেষ্টা করেও আর্টেমিস মিশনের যাত্রা শুরু করা গেল না। আর্টেমিস-১ উৎক্ষেপণে স্থগিত হয়ে গেল। আবার অপেক্ষা, কবে নাসা তাঁদের চন্দ্রাভিযানের শুরু করে।
টার্গেট ২০২৫ সালের মধ্যে আর্টেমিস মিশনে চাঁদে মানুষ পাঠানো
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এই মিশনটি নিয়েছেন চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল আগেই। ২৯ অগাস্ট আর্টেমিস ১-এর যাত্রা শুরুর কথা ছিল চাঁদে জীববিজ্ঞান পরীক্ষা চালানোর উদ্দেশে। এবার মিশনে কোনও মানুষকে পাঠানো হচ্ছিল না। মানুষকে পাঠানোর জন্য পরীক্ষামূলক মিশন ছিল এটি। তা স্থগিত রাখা হল যান্ত্রিক গোলযোগে। টার্গেট ২০২৫ সালের মধ্যে আর্টেমিস মিশনে চাঁদে মানুষ পাঠানো।
কেন ৫০ বছর পর মানুষ পাঠাতে আগ্রহী হল নাসা
তবে শুধু আমেরিকা নয়, চন্দ্রাভিযানে শামিল হয়েছে রাশিয়া, ভারত, চিন, জাপান, ইজারায়েলও। ভারতের চন্দ্রযান বিক্রমের ভাগ্যে করুণ পরিণতি ঘটেছিল। চাঁদ থেকে পাথর-মাটি তুলে এনেছে চিন। ৯০ দিনের অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন চিনা নভোশ্চররা। কিন্তু চাঁদে নামতে পারেনি তাঁরা। ভারত আর ইজরায়েরের রোভার চাঁদে নামতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এখন প্রশ্ন কেন ৫০ বছর পর মানুষ পাঠাতে আগ্রহী হল নাসা।
চিন ২০৩০ সালে ঘাঁটি গাড়বে চাঁদে, তার আগেই যাবে নাসা
চিন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে ঘাঁটি গাড়তে চাইছে। আমেরিকার সংস্থা নাসাও তাই তার আগে চাঁদে মানুষ পাঠাতে তোড়জোড় শুরু করে দিল। নাসা শুধু চাঁদে নয়, মঙ্গলেও মানুষ পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। মঙ্গল অভিযানে চাঁদের থেকে ২০ গুণ বেশি খরচ হবে। সেটা কতটা বাস্তবসম্মত হয়, তা বিবেচনা করা হচ্ছে। চাঁদে রোভার পাঠানো আর মানুষ পাঠানো এক জিনিস নয়। রোবট পাঠানো অনেক সহজ। মানুষ পাঠানো কঠিন। এ জন্য অনেক শক্তিশালী রকেটের প্রয়োজন হয়। অর্থেরও দরকার হয়। সেই পরিকাঠামো একমাত্র নাসারই রয়েছে। চিন, ভারত বা অন্য কারও নেই।
মানুষ পাঠাতে ২০টি অ্যাপোলো মিশনের পরিকল্পনা হয়
চাঁদে মানুষ অবতরনের এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল ১৯৬২ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন কেনেডি এই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই থেকেই চাঁদে মানুষ পাঠানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। তার আগে চাঁদে প্রথম কোনও বস্ত পাঠিয়েছিল রাশিয়া ১৯৫৩ সালে। মানুষ পাঠাতে ২০টি অ্যাপোলো মিশনের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু চাঁদে অবতরণের পর এই মিশন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে বলে দাবি। চাঁদের পর মঙ্গল বা শুক্র গ্রহ টার্গেট হয় নাসার।
চিনকে মহাকাশ গবেষণায় টেক্কা দিতেই নাসা চাঁদে
এখন আবার চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তখন সোভিয়েত রাশিয়াকে মহাকাশ যুদ্ধেও পরাজিত করা ছিল আমেরিকার উদ্দেশ্য। এবার আর্টেমিস মিশনের প্রেক্ষাপটে রয়েছে চিনের উত্থান। চিনকে মহাকাশ গবেষণায় টেক্কা দিতেই নাসা চাঁদে মানুষ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর তাঁদের লক্ষ্য মঙ্গল গ্রহ। আপাতত আর্টেমিস-১ কী রেজাল্ট দেয় তার উপর নির্ভর করবে পরবর্তী অভিযানগুলি।
২০২৫-এই চাঁদের বুকে প্রথম মহিলা পা রাখতে পারবেন
কারণ আর্টেমিস-১ মহাকাশে জীববিজ্ঞান পরীক্ষা করবে, যাতে পৃথিবীর বস্তু ব্যবহার করে মানুষ দীর্ঘক্ষণ মহাকাশে বিচরণ করতে পারে। চাঁদে নাসার নতুন মিশন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০২৫-এই চাঁদের বুকে প্রথম মহিলা পা রাখতে পারবেন। সেই উদ্দেশে আর্টেমিস-১ ৪২ দিন ধরে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে। নাসার পরবর্তী স্বপ্ন ২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গলের মাটিতে প্রথম পা দেওয়া।
মঙ্গল-শুক্রে ল্যান্ড মিশনে ইসরো! আইএডি প্রযুক্তির পরীক্ষায় মিলল চূড়ান্ত সাফল্য