বৃহস্পতির আরও ১২টি উপগ্রহ আবিষ্কার, সংসার বেড়েই চলেছে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহটির
২০১৯-এ শনির ২০টি চাঁদ আবিষ্কার হয়। তখনই বৃহস্পতিকে টপকে যায় শনির সংসার। বৃহস্পতি ফের টেক্কা দিল এবার ১২টি চাঁদ পেয়ে।
বৃহস্পতির সংসার ক্রমে বেড়েই চলেছে মহাকাশে। বৃহস্পতির সংসারে সম্প্রতি এসে হাজির হয়েছে ১২ জন নতুন অতিথি। ফলে গ্রহরাজ বৃহস্পতির এখন ভরা সংসার। একের পর এক উপগ্রহের আবিষ্কারে সংসার বাড়ছে বৃহস্পতির। ক্রমেই বহু চন্দ্রের অধিপতি হয়ে উঠছে সৌরমণ্ডলের এই বৃহত্তম গ্রহটি।
১২টি উপগ্রহের হদিশ বৃহস্পতির আকাশে
সম্প্রতি নতুন ১২টি উপগ্রহের সন্ধান মিলেছে। যা বৃহস্পতির উপগ্রহ। ফলে উপগ্রহের সংখ্যা বৃহস্পিত টেক্কা দিয়েছে অন্যদের সবাইকে। হয়ে উঠেছে উপগ্রহের রাজা। সম্প্রতি মার্কিন বিজ্ঞানীরা এই ১২টি উপগ্রহের হদিশ পান বৃহস্পতির আকাশে। ফলে বৃহস্পতি উপগ্রহের সংখ্যায় শনিকে ছাপিয়ে গেল বলে।
বৃহস্পতির উপগ্রহ সংখ্যা বেড়ে কত হল
এতদিন উপগ্রহের সংখ্যায় শনিই ছিল সবার উপরে। এবার শনির সেই তকমা ছিনিয়ে নিল বৃহস্পতি। এখন বৃহস্পতির উপগ্রহ সংখ্যা সবার উপরে। এতদিন বৃহস্পতির উপগ্রহ সংখ্যা ছিল ৮০টি। আর শনির উপগ্রহ সংখ্যা ৮৩টি। ১২টি উপগ্রহ আবিষ্কার হওয়ায় বৃহস্পতির উপগ্রহ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯২টি। অর্থাৎ শনির থেকে ৯টি বেশি উপগ্রহ হয়ে গেল বৃহস্পতির।
আমেরিকার মাইনর প্ল্যানেট সেন্টার রিপোর্ট
ওয়াশিংটনের কার্নেগি ইনস্টিটিউশন ফর সায়েন্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা স্কট শেপার্ডের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গবেষণা চালিয়ে ১২টি উপগ্রহের সন্ধান পান। আমেরিকার মাইনর প্ল্যানেট সেন্টার এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। একেবারে তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট পেশ করে জানালেন এই সংস্থার বিজ্ঞানীরা।
১২টি উপগ্রহই বৃহস্পতির চারপাশে ঘুরছে নির্দিষ্ট কক্ষপথে
আমেরিকান মাইনর প্ল্যানেট সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃহস্পতির ওই উপগ্রহগুলি আকারে ক্ষুদ্র। আমেরিকান মাসিক পত্রিকাতে এই রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। আমেরিকার মাসিক পত্রিকা স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ জানায়, ১২টি উপগ্রহই কক্ষপথের দিকে মুখ করে বৃহস্পতির চার পাশে ঘুরছে।
নাসাকে টেক্কা দিয়ে উপগ্রহ আবিষ্কার আমেরিকান বিজ্ঞানীদের
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বৃহস্পতি গ্রহের অনুসন্ধানে জুনো মিশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এই ১২টি উপগ্রহের সন্ধান পায়নি। কিন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের কার্নেগি ইনস্টিটিউশন ফর সায়েন্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ১২টি উপগ্রহ আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে বৃহস্পতি উপগ্রহের সন্ধান
মার্কিন যুক্তরাষ্রে২ র বিজ্ঞানীরা ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করে নতুন ১২টি চাঁদের সন্ধান পেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা জানিয়েছে বৃহস্পতির চারপাশে অনেক আকর্ষণীয় চাঁদ রয়েছে। তবে পৃথিবীর বাইরে আবিষ্কৃত চারটি চাঁদকে ঘিরে সবথেকে বেশি আগ্রহ বিজ্ঞানীদের।
সৌরজগতের যে চার উপগ্রহে বিশেষ নজর নাসার
নাসা জানিয়েছে, সেই চাঁদগুলি হল- লো, ইউরোপা, ক্যালিস্টো ও গ্যানিমিড। নতুন যে ১২টি চাঁদ আবিষ্কৃত হয়েছে, তা বৃহস্পতির অন্য চাঁদগুলির থেকে অনেক ছোটো। বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করতে ৩৪০ দিনের থেকে বেশি সময় নেয় তিনটি উপগ্রহ। বাকি ৯টি সময় নেয় ৫৫০ দিন। উল্লেখ্য, ২০১৯-এ শনির ২০টি চাঁদ আবিষ্কার হয়। তখনই তা বৃহস্পতিকে টপকে যায়। বৃহস্পতি ফের টেক্কা দিল এবার ১২টি চাঁদ পেয়ে।
বৃহস্পতির চাঁদের সন্ধানে নাসাও
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে নাসার প্রকৌশলীরা বৃহস্পতির কক্ষপথে ঘোরার সময় বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার অন্বেষণ শুরু করে। ওই ইউরোপার ভূত্বকের নীচে লবণাক্ত মহাসাগর রয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার উপরে গিয়ে বৃহস্পতির চাঁদের সন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরতে সমর্থ হয়।
বৃহস্পতির উপগ্রহের রংবেরংয়ের ছবি
২৯ সেপ্টেম্বরের পরে নাসার জুনো ক্যাম থেকে বেশ কিছু ডাটা আসে। রংবেরংয়ের ছবি পায় নাসা। নাসা এরপর বরফের বিশ্বের নানা রং প্রকাশ করে। তার মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জীবনের লক্ষণগুলি খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। চিত্রগুলি ভূপৃষ্ঠের অনন্য শৈলশিরার মতো ভূখণ্ড প্রকাশ করে বলে নাসা জানিয়েছে।
ইউরোপার ভূখণ্ডটি এবড়োখেবড়ো
ওই ছবিতে ভূখণ্ডটি এবড়োখেবড়ো বলে মনে হয়। সেখানে গর্ত ও খাদ রয়েছে। এবং অসংখ্য উজ্জ্বল এবং অন্ধকার পর্বতমালা রয়েছে। ছবিতে স্পষ্ট হয়েছে বৃহস্পতির চাঁদ হাজার হাজার বছর ধরে সহ্য করে যাচ্ছে টাইটোনিক চাপ। জুনো ক্যালানিশ ক্রেটারও তুলেছিল, যা নীচের ডানদিকে একটি বৃত্তাকার বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রদর্শিত হয়।
বৃহস্পতির চাঁদ বরফে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে
সম্প্রতি নাসা বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপার যে ছবি শেয়ার করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ওই চাঁদ বরফে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে। ২২ বছরের বেশি সময় ধরে নাসার জুনো ক্যাম ইউরোপার সবথেকে কাছে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এর আগে নাসার গ্যালিলিও ভূপৃষ্ঠের ২১৮ মাইল বা ৩৫১ কিলোমিটারের মধ্যে এসেছিল।
লবণাক্ত মহাসাগর রয়েছে এই উপগ্রহে
নাসা জানিয়েছে, ইউরোপা সৌর জগতের ষষ্ঠ বৃহত্তম চাঁদ। আমাদের চাঁদের থেকে ছোটো। বিজ্ঞানীরা মনে করেন লবণাক্ত মহাসাগর রয়েছে এই উপগ্রহের খোলের নীচে। ইউরোপার ওই বরফের নীচে কোনও জীবন রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা চালানো হচ্ছে জ্যোতিবিজ্ঞানীদের দ্বারা।